প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ফ্রান্সের সংসদ নির্বাচনের প্রথম পর্বেও বিপুল সাফল্য দেখালেন এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তবে নিজের সমর্থকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ জাগাতে পারলেও বিরোধীরা ভোটদানে বিরত ছিল৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সেরভোটাররা এখনো মাক্রোঁ ম্যাজিকে মন্ত্রমুগ্ধ – এই বাস্তবতা রবিবার সংসদ নির্বাচনের প্রথম পর্বে আবার স্পষ্ট হয়ে গেল৷ আগামী রবিবার দ্বিতীয় পর্বেও এই সমর্থনের জোয়ার অটুট থাকলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করতে এমানুয়েল মাক্রোঁর পথে কোনো রাজনৈতিক বাধাই থাকবে না৷ সদ্য আবির্ভূত এক রাজনৈতিক আন্দোলন যে দল হিসেবে এমন সাফল্য পেতে পারে, অনেক পর্যবেক্ষক তা কল্পনাই করতে পারেননি৷
ফ্রান্সের মূল স্রোতের রাজনৈতিক শিবিরগুলি সংসদ নির্বাচনেও জোরালো ধাক্কা খেয়েছে৷ বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক দল সংসদে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে৷ রক্ষণশীল দল আপাতত কোনোমতে দ্বিতীয় স্থান আঁকড়ে ধরতে পেরেছে৷ সংসদে মোট ৫৭৭টি আসনের মধ্যে মাক্রোঁর আরইএম বা ‘প্রজাতন্ত্র এগিয়ে চলো' দল ও তার জোটসঙ্গী মো-ডেম সম্ভবত ৪০০ থেকে ৪৪৫টি আসন দখল করতে চলেছে বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে প্রায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷ গত ৬০ বছরে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট এমন বিপুল সমর্থন নিয়ে দেশ শাসন করতে পারেননি৷
তবে রবিবার মাত্র ৪৯ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় কিছু প্রশ্ন উঠছে৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর মাক্রোঁ তাঁর সমর্থকদের মধ্যে একদিকে প্রবল উৎসাহ জাগাতে পেরেছেন৷ অন্যদিকে তাঁর বিরোধীরা নিরাশ অবস্থায় হাল ছেড়ে দিয়ে ভোট দিতেই যাননি বলে মনে করা হচ্ছে৷ মাক্রোঁপন্থি ও মাক্রোঁ-বিরোধীদের মধ্যে এমন বিভাজন দেশের জন্য কতটা মঙ্গলজনক হবে, তা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলছেন৷
আগামী রবিবার চূড়ান্ত সাফল্য পেলে মাক্রোঁ ফ্রান্সের রাজনীতিতে বেশ কিছু আমূল পরিবর্তন আনার অঙ্গীকার করেছেন৷ রাজনৈতিক আঙিনায় দূর্নীতি ও স্বজনপোষণ বন্ধ করতে তিনি এক প্রস্তাব আনতে চলেছেন, যার ফলে সংসদ সদস্যরা আত্মীয়স্বজনদের চাকরি দিতে পারবেন না এবং নিজেরা কনসালটেন্সির কাজ করতে পারবেন না৷ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে ফ্রান্সে এমন অনেক কেলেঙ্কারি ঘটেছে৷ এছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাহসি সংস্কারের কাজেও হাত দিতে চান প্রেসিডেন্ট৷
রবিবার সংসদ নির্বাচনের প্রথম পর্বে বিপুল সাফল্যের পর প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে শুধু দুই প্রার্থীর মোকাবিলা হচ্ছে না, দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন ভবিষ্যতের স্বপ্নের মধ্যে সংঘাত ঘটছে৷ ফলাফলের প্রভাব ফ্রান্সের সীমা ছাড়িয়ে ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের উপর পড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/R. Pratta
মুক্ত, উদার, ইউরোপপন্থি
মধ্যপন্থি প্রার্থী এমানুয়েল মাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেই ফ্রান্সের অবস্থান আরও মজবুত করতে চান৷ দেশের জর্জরিত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তিনি কোম্পানিগুলির উপর করের হার কমানো এবং বিপুল রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
ইউরোপের সামনে চ্যালেঞ্জ
মারিন ল্য পেন যেভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা গোটা ইউরোপে স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি৷ চূড়ান্ত নির্বাচনের আগে তিনি এ বিষয়ে কিছুটা সুর নরম করলেও এমন ইউরোপ-বিদ্বেষ নিয়ে দুশ্চিন্তার বড় কারণ থেকে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Zihnioglu
অভিন্ন মুদ্রার সংকটের আশঙ্কা
ইউরোপের দক্ষিণের কয়েকটি দেশে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পর ইউরো এলাকায় স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে জার্মানি ও ফ্রান্স এই কাঠামোর মূল ভিত্তি৷ ল্য পেন ক্ষমতায় এলে ইউরো এলাকায় চরম অরাজকতার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/Schönberger
রাশিয়ার ‘কালো ছায়া’
গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের জোরালো অভিযোগ নিয়ে যখন তদন্ত চলছে, তখন ইউরোপেও রাশিয়ার ‘কালো ছায়া’র বিষয়টি বারবার উঠে আসছে৷ মারিন ল্য পেন মস্কোর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি গোপন করেন না৷ এমনকি রাশিয়া থেকে আর্থিক সাহায্যও পেয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Klimentyev
অভিবাসন নিয়ে মতপার্থক্য
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের পর শরণার্থীদের ঢল নিয়ে ইউরোপের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ তার সুযোগ নিয়ে মারিন ল্য পেন বিদেশি, শরণার্থী ও অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কঠোর নীতির অঙ্গীকার করেছেন৷ ফ্রান্সের সীমা আর উন্মুক্ত রাখতে চান না তিনি৷ অন্যদিকে মাক্রোঁ শরণার্থীদের প্রতি উদার নীতিতে বিশ্বাসী৷
ছবি: picture-alliance/AA/NnoMan Cadoret
জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের কাঠামো ঢেলে সাজাতে চান মারিন ল্য পেন৷ সামরিক জোট ন্যাটোয় ফ্রান্সের ভূমিকা থেকে শুরু করে আরও পুলিশ নিয়োগ করতে চান তিনি৷ বিদেশি বংশোদ্ভূত অপরাধীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনাও আছে তাঁর৷ মাক্রোঁ নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইলেও নাগরিক অধিকার খর্ব করার বিরোধী৷