এজিয়ান সাগরে পুশব্যাক: ফ্রন্টেক্স প্রধানের পদত্যাগ
২৯ এপ্রিল ২০২২এর আগে গ্রিসের এজিয়ান সাগরে প্রায় এক হাজার অভিবাসীকে অবৈধভাবে ফেরত পাঠানোর সঙ্গে সংস্থাটি জড়িত বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউরোপের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম৷
গণমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন লাজেরি৷
জার্মানির স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাক্সিমিলিয়ান কাল বলেন, সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷ তিনি আরো জানান, পদত্যাগের প্রস্তাব গৃহীত হবে কি না তা বিবেচনা করছে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রবেশে বাধা দেয়া বা আশ্রয় চাওয়ার আগে সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক রিফুউজি প্রোটেকশন এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী অবৈধ৷ এই চুক্তি অনুযায়ী, কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে এমন কোনো দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না যেখানে তার নিরাপত্তা রাজনীতি, বর্ণ, ধর্ম বা জাতীয়তার কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷
গত কয়েক মাস ধরেই পুশব্যাকের ঘটনার অভিযোগের কারণে পদত্যাগের জন্য চাপের মুখে ছিলেন লাজেরি৷ গত বছর ফ্রন্টেক্সের বিরুদ্ধে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের হয়রানি, অসদাচরণ এবং পুশব্যাকের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে ইউরোপীয়ান অ্যান্টি ফ্রড বা জালিয়াতি দমন কার্যালয়৷
এদিকে গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ফ্রন্টেক্স ৯৫৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আজিয়ান সাগরে থেকে ফেরত পাঠিয়েছে৷
ইউরোপে ২০১৫ সালে শরণার্থী সংকটের পর থেকেই গ্রিক কৃর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিবাসীদের পুশব্যাকের অভিযোগ রয়েছে৷ পুশব্যাকের এমন ঘটনায় ইউরোপিয়ান সংন্থা ফ্রন্টেক্স জড়িত বা তারা এসকল ঘটনা জানত কিংবা তাদের অনুমতি আছে এমন অভিযোগও ছিল৷
আর এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্লাটফর্ম লাইটহাউস রিপোর্টস, জার্মানির বিখ্যাত ম্যাগাজিন ডের স্পিগ্যাল, এসআরএফ, রিপাবলিক ও ল্য মোন্দ একযোগে অনুসন্ধান চালায়৷ ২২টি ঘটনায় শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীকে পুশব্যাক করার তথ্য প্রমাণ পেয়েছে তারা৷
প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, ফ্রন্টেক্স এসব ঘটনাকে ‘প্রিভেনশন অব ডিপার্চার' বলে লিপিবদ্ধ করেছঅভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপের বাইরের কোনো দেশ তাদের সমুদ্র সীমায় থামিয়েছে এবং যেই দেশ থেকে যাত্রা করেছিল সেখানে ফেরত পাঠিয়েছে, এমন ঘটনাগুলোকে ‘প্রিভেনশন অব ডিপার্চার' হিসেবে দেখায় সংস্থাটি৷ লাইটহাউস রিপোর্টসের সাংবাদিক টোমাস স্ট্যাটিস বলেন, ‘‘আমরা ফ্রন্টেক্সের জয়েন্ট অপারেশন রিপোর্টিং অ্যাপ্লিকেশন নামে কিছু তথ্য অনুসন্ধান করে জানতে পারি, সংস্থাটি এসকল ঘটনাকে ‘প্রিভেনশন অব ডিপার্চার' নামে লিপিবদ্ধ করে রেখেছে৷''
এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘পুশব্যাকের সময় গ্রিক সীমান্ত পুলিশ অভিবাসীদেরকে সমুদ্রে ফেরত পাঠিয়ে দেয়৷ সমুদ্র থেকে তারা গ্রিসে নামার পর তাদের আবার সমুদ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ একজন অভিবাসীর সাক্ষাৎকার উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘গ্রিসে আসার পরও দেশটির পুলিশ এসকল অভিবাসীকে ছোট নৌকায় করে আবার সমুদ্রে ফেরত পাঠায়৷’’
তার দাবি, ফ্রন্টেক্স এই ঘটনাগুলো জানত৷ কেননা সেসময় ফ্রন্টেক্সের বিমান, ড্রোন বা হেলিকপ্টার আকাশ থেকে ঘটনাটি দেখছিল৷
এদিকে ফ্রন্টেক্স বলছে, ইউরোপের সীমানায় ঘটা কোনো ঘটনায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই৷
আর তদন্তের ফলাফলকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করছে গ্রিক সরকার৷ যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা৷
আরআর/এফএস (রয়টার্স)