করোনা-আতঙ্কের সময়ে একদিকে যেমন কিছু দায়িত্বপূর্ণ আচরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, তেমনই আবার দেখা যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
বিজ্ঞাপন
দিন তিনেক আগে পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে এক দুধ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরাধ, তিনি 'গোমূত্র খাও, করোনা ভাইরাস তাড়াও' পোস্টার লাগিয়ে গোমূত্র বোতলে ভরে বিক্রি করছিলেন। এক শিসি পাঁচশ টাকা। ভারতে অবশ্য গোমূত্র বিক্রি করাটা অপরাধ নয়। চাইলেই অনলাইনে তা কেনা যায়। অনেক দোকানে তা বোতলে ভরে বিক্রি হয়। কিন্তু দুধ বিক্রেতা মাবুদ আলি শাস্তি পেয়েছেন তাঁর ওই বিতর্কিত দাবির জন্য, গোমূত্র খেলে করোনা হবে না। লোক ঠকানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নিঃসন্দেহে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য। করোনার আতঙ্ক যখন ছড়াচ্ছে, তখন এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কোনওভাবেই কাম্য নয়। বরং পুলিশ প্রথমেই ব্যবস্থা নিয়ে নেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে অন্ততপক্ষে করোনা-রোধের দাবি নিয়ে প্রকাশ্যে গোমূত্র বিক্রি বন্ধ হবে। সাধ করে জেলে যেতে অন্তত কেউ চাইবেন বলে মনে হয় না।
করোনা রুখতে দিল্লিতে গোমূত্রের আজব পার্টি
একুশ শতকে এসেও প্রচার করা হচ্ছে, গোমূত্র খেলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যাবে, হবে না করোনা। এমনই দাবি নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত হল 'গোমূত্র পার্টি'। আয়োজনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
9 ছবি1 | 9
এরকমই দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মুরলীধরন। তিনি কেরলে একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু সেখানে একজন চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ে। মুরলীধরন কোনও ঝুঁকি না নিয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁর সংক্রমণ হয়নি। তারপরেও তিনি নিজেকে কোয়ারান্টিন করে রেখেছিলেন।
কিন্তু মুশকিল হল , করোনার বাজারে এই ধরনের দায়িত্বশীল কাজের পাশাপাশি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজেরও বন্যা বইছে। এ এমন এক সময়, যখন সকলের সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করার কথা। করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য সচেষ্ট থাকার কথা। কিন্তু অনেকেই তাঁদের এই প্রাথমিক কর্তব্যে অবহেলা করছেন। গোমূত্রের কথাই ধরা যাক। মাবুদ আলির গোমূত্র-কাহিনি নিয়ে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, গোমূত্র খুব উপকারী, তিনি আগে খেয়েছেন, পরেও খাবেন। তিনি চাইলে খেতেই পারেন। গোমূত্র তো কোনও নিষিদ্ধ জিনিস নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই তো নিজ মূত্র পান করতেন। কিন্তু কোনওরকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই গোমূত্র পান করলে করোনা হয় না, এই দাবি ভয়ঙ্কর। প্রত্যাশিত ছিল, তিনি গোমূত্রের জয়গান না করে মাবুদকে ভর্ৎসনা করবেন।
হোম কোয়ারান্টিনের খুঁটিনাটি
সব দেশেই হাসপাতালে কোয়ারান্টিনের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাসায়ও কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে৷ কিভাবে থাকতে হয় হোম কোয়ারান্টিনে? চলুন জেনে নেই এর খুঁটিনাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
কোয়ারান্টিন কী?
১৪শ শতকে ইউরোপে মহামারি আকার নিয়েছিল প্লেগ, যা ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে পরিচিত৷ প্রায় ২০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল মহামারিতে৷ ভেনিস কর্তৃপক্ষ নিয়ম জারি করে, বন্দরে কোনো জাহাজ ভিড়লে যাত্রীদের নামানোর আগে সমুদ্রে ৪০ দিন নোঙর করে রাখতে হবে। ৪০ সংখ্যাকে ইটালিয়ান ভাষায় বলা হয় কোয়ারানতা, আর অপেক্ষার সময়টিকে কোয়ারানতিনো৷ তখন থেকে সংক্রামক রোগের আশঙ্কায় কাউকে আলাদা করে রাখাকে কোয়ারান্টিন বলা হয়৷
ছবি: London Museum of Archeology
আইসোলেশন কী?
কোয়ারান্টিন আর আইসোলেশনের তফাত কী? কোয়ারান্টিন সাধারণত হাসপাতালের বাইরে নির্দিষ্ট স্থানে অথবা নিজ বাসাতেও হতে পারে৷ তবে আইসোলেশন সাধারণত সরাসরি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালেই করা হয়, যাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাদের রাখা হয় কোয়ারান্টিনে, উপসর্গ৷ তেমন প্রকট না হলে তাকেও কোয়ারান্টিনে রাখা হয়৷ কিন্তু কারো মধ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে, তখন তাকে রাখা হয় আইসোলেশনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Photoshot
হোম কোয়ারান্টিন কেন?
সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত বা শরীরে ভাইরাস থাকতে পারে এমন সন্দেহ হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন৷ যাদের মধ্যে অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের হাসপাতালে বিশেষ কোয়ারান্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে৷ সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত এত বেশি মানুষকে একসঙ্গে হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়৷ এ কারণে অনেককে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিনে থাকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
হোম কোয়ারান্টিন কী?
‘হোম’ মানে বাসা, কোয়ারান্টিন মানে পৃথক করা৷ সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসায় রোগীকে সবার আগে আলাদা করে ফেলা হয়, যাতে রোগ অন্যদের শরীরে না ছড়ায়৷ রোগীকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে নেয়া হয় বিশেষ ব্য়বস্থা৷ এই ব্যবস্থাকেই বলে কোয়ারান্টিন৷ করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মাত্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজের বাসায় নিজের তত্ত্বাবধানেই কোয়ারান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷ এটিকেই বলা হচ্ছে হোম কোয়ারান্টিন৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
কী করতে হবে?
হোম কোয়ারেন্টাইনে আপনাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে আলাদা থাকতে হবে৷ সবচেয়ে ভালো হয় আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখতে পারলে৷ সে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷ আলাদা ঘর সম্ভব না হলে রাখতে হবে আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা৷ আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত এক মিটারের মধ্যে অন্য কারো শোয়ার ব্যবস্থা রাখা যাবে না৷ রোগীকে নিয়মিত মেডিক্যাল মাস্ক পরতে হবে এবং সে মাস্ক নিয়মিত পালটাতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/R. Fouladi
যা যা করবেন না
কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা৷ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, কারো সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না৷ নিজের ব্যবহার্য দ্রব্য ছাড়া অন্য জিনিসপত্র ব্যবহার না করাই ভালো৷ নিজের জন্য নির্ধারিত স্থান ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যবহার করা স্থান, যেমন রান্নাঘর এমনকি বৈঠকখানাতেও যাওয়া উচিত হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Duff
যা যা আলাদা করবেন
রোগীর ঘর বা বিছানা তো আলাদা থাকবেই, পাশাপাশি রোগীর ব্যবহার করা টুথব্রাশ, থালা-বাসন, তোয়ালে, গামছা, কাপড়চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, সবই রাখতে হবে অন্যদের থেকে দূরে৷ বাড়িতে কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তাকেও আক্রান্তের সঙ্গে মিশতে দেয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Baba Ahmed
নবজাতকের মা কী করবেন?
মা আক্রান্ত হলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে কোনো বাধা নেই৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুকের দুধ থেকে শিশু আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ তারা এখনও পাননি৷ তবে শিশুকে স্পর্শ করার আগে মাকে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ মুখে মেডিক্যাল মাস্ক পরে নিতে হবে৷ অন্য সময় শিশু থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
বাড়ির অন্য সদস্যরা?
সেবার জন্য নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি থাকলে ভালো হয়৷ একেক দিন একেক জন রোগীর সেবা করলে বাড়ির সবাই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যত দূরে রাখা সম্ভব ভালো৷ সেবাদানকারী সেবা দেয়ার সময় মেডিক্যাল মাস্ক ভালো করে পরে নেবেন৷ ব্যবহার করার সময় মাস্কে আর হাত দেয়া যাবে না৷ রোগীর ঘর থেকে বের হয়েই সে মাস্ক ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/G. Markowicz
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
ঘর নিয়মিত ব্লিচিং সলিউশন দিয়ে মুছতে হবে৷ তার ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগী যে টয়লেট ব্যবহার করবেন, সেটি যদি অন্য কেউ ব্যবহার করেন তাহলে সাবধানে থাকতে হবে৷ রোগী টয়লেট ব্যবহার করার পর প্রতিবার ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে৷ রোগীর কাপড় ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
দর্শণার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
কেউ অসুস্থ হলে তার খোঁজ নিতে বা সুস্বাস্থ্য কামনা করতে ফলমূল-উপহার নিয়ে আমরা হাজির হই রোগীর বাড়িতে৷ কিন্তু করোনা ভাইরাসের মতো মারাত্মক সংক্রমণে কারো সঙ্গে দেখা করতে না যাওয়াই ভালো৷ এতে করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস নিয়ে আপনি নিজেই তা ছড়িয়ে দিতে পারেন আপনার অন্য প্রিয়জনের শরীরে৷ বরং আক্রান্তের সঙ্গে দেখা না করলেই তাকে সবচেয়ে নিরাপদে রাখতে পারেন আপনি৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
ডাক্তারের কাছে যাবেন না
অনেকেই আতঙ্কে বা না জেনে নিজেই চলে যাচ্ছেন চিকিৎসকের কাছে৷ কিন্তু এর ফলে আপনার শরীর থেকে যেমন ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে, আপনি সুস্থ থাকলে অন্যের শরীর থেকে আপনার শরীরেও ভাইরাস চলে আসার ঝুঁকি থাকে৷ আগে স্থানীয় চিকিৎসক বা চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে ফোনে যোগাযোগ করুন৷ কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় জ্বর, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ বেশি মাত্রায় অনুভব করলে রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের হটলাইনে যোগাযোগ করুন৷
ছবি: Imago Images/A. Hettrich
কতদিন কোয়ারান্টিন?
সাধারণত চিকিৎসকেরা ১৪ দিন পর্যন্ত বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলবেন৷ এর মধ্যে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা৷ তবে ব্যক্তিবিশেষে এই কোয়ারেন্টাইন কম-বেশিও হতে পারে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে৷ ফলে কেউ ৩-৪ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আবার কারো ১৪ দিনের বেশি সময় লাগলেও শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
করোনায় করণীয়
আমরা সবাই সচেতন থাকলে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেই ঠেকানো যাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব৷ তাই গুজবে বিশ্বাস না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন৷ ভাইরাসের লক্ষণ শরীরে দেখা দিয়েছে মনে করলে আগেই সরাসরি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হটলাইনে কল করুন৷ রোগতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷
আর এই দাবি নিয়ে দিল্লির বুকে রীতিমতো গোমূত্র পার্টি করলেন চক্রাপানি মহারাজ এবং তাঁর সংগঠন অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভা। শ'দুয়েক লোক মাটির ভাড়ে দিব্যি গোমূত্র পান করলেন এবং দাবি করলেন, করোনা তাঁদের ছুঁতে পারবে না। অসমের বিজেপি বিধায়ক সুমন হরিপ্রিয়া তো আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে জানালেন, করোনা তো বটেই, গোমূত্র ও গোবরে ক্যান্সারও সেরে যায়। এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন উক্তি ও কাজের পরেও তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডঃ পার্থ প্রতিম বোস জানিয়েছেন, গোমূত্রে করোনা সারে এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং তাঁর কাছে উত্তরাখ থেকে রোগী এসেছেন, যিনি গোমূত্র পান করে গুরুতর রোগ বাঁধিয়েছেন।
করোনার বাজারে প্রত্যেকের সতর্ক ও সজাগ থেকে এবং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি পালন করাটা খুবই জরুরি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার সংযমের ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর দলের বিধায়ক, নেতারা সংযম পালন করছেন না। সংযম পালন করেননি পশ্চিমবঙ্গের সেই যুগ্ম সচিব, যাঁর ছেলে লন্ডন থেকে ফিরেছিল। তাকে হাসপাতাল বলেছিল, বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে যেতে, যেখানে সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসা হয়। সেই হাসপাতালে যাওয়া দূরস্থান, উল্টে শপিং মল, বাজারে ঘুরে বেড়িয়েছে ছেলে। পরের দিন মা তাকে নিয়ে আইডি হাসপাতালে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন নবান্নের সচিবালয়ে। মিটিং করলেন, কাজ করলেন, লোকের সংস্পর্শে এলেন। দেখা গেল, ছেলেটি করোনায় আক্রান্ত। আর যাঁদের সঙ্গে সেই যুগ্ম সচিবের দেখা হয়েছিল, তাঁরা সকলে গেলেন কোয়ারান্টিনে। তার মধ্যে রাজ্যের স্বারাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও আছেন।
একইরকম ভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেছেন গায়িকা কণিকা কাপুর। তিনি লন্ডন থেকে ফিরেছেন। বিমানবন্দরে পরীক্ষা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর তিনটি পার্টি করেন। সেখানে অনেকের সঙ্গে মিশেছেন। তার মধ্যে একজন সাংসদও আছেন। সেই সাংসদ আবার নিয়মিত সংসদে উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি কণিকার শরীর খারাপ হয়। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত। ফলে তাঁর কাছ থেকে কতজন করোনায় আক্রান্ত হবেন কে জানে। একজনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ভুগবেন অনেকে।
দিল্লির শাহিনবাগে এখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। শুধু বাচ্চা ও বয়ষ্কদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু দলে দলে মহিলারা এখনও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। মক্কা বন্ধ, মুম্বইয়ে সিদ্ধি বিণায়ক মন্দির, শিরডির সাই বাবা মন্দির বন্ধ, দিল্লিতে স্কুল, কলেজ, স্পা, জিম, নাইটক্লাব বন্ধ। ২০ জনের বেশি লোকের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আছে। অনেক রাজ্যে বড় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অথচ শাহিনবাগের আন্দোলনকারীরা সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অন্তত এই কঠিন সময়ে শাহিনবাগের উচিত ছিল, হয় কয়েকজন মিলে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখানো অথবা আপাতত প্রতিবাদ স্থগিত রেখে পরে অবস্থা স্বাভাবিক হলে, তখন আবার পথে নামা।
করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য এই সংযমটুকু দরকার, একেবারে প্রাথমিক দায়িত্ববোধের পরিচয়টা খুবই জরুরি। কারণ, একজনের থেকেই করোনা হাজার জনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যাঁরা বিদেশ থেকে আসছেন, তাঁরা মুলরীধরনকে অনুসরণ করুন। এটা বেপরোয়া হওয়ার সময় নয়। বরং নিজেকে বাঁচিয়ে অন্যদের বাঁচানোর সময়। এই সচেতনতাটুকু বজায় রেখে সঠিক আচরণ করার সময়।