গোটা আফগানিস্তানেই অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। মানুষের হাতে টাকা নেই।
বিজ্ঞাপন
তালেবান ক্ষমতায় এসে সেন্ট্রাল ব্যাংকের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির হাল ধরা যায়নি। বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। কার্যত সমস্ত এটিএম অর্থশূন্য। বন্ধ ব্যাংক। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।
কাবুলের বাসিন্দা ইমাম ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''বন্ধ ব্যাংকের বাইরেও মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। বৃহস্পতিবার দুই-একটি ব্যাঙ্ক খুলেছে। তার বাইরে ভয়াবহ ভিড়।'' ইমামের বক্তব্য, গত এক সপ্তাহে জিনিসপত্রের দাম ভয়ংকরভাবে বাড়তে শুরু করেছে। এতদিন যে আটা এক হাজার ৮০০ আফগান অর্থে পাওয়া যাচ্ছিল, এখন তার দাম হয়েছে প্রায় দুই হাজার দুইশ আফগানি। ১৬ লিটারের খাওয়ার তেলের জ্যারিকেনের দাম ছিল এক হাজার ৭০০ আফগানি, এখন তা দুই হাজার ১৫০ আফগানিতে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিদিন জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু মানুষের হাতে অর্থ নেই। জিনিস কেনার ক্ষমতা নেই। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আরো ভয়ংকর দুর্ভোগ আছে বলে জানিয়েছেন ইমাম।
আফগান নারীদের কণ্ঠস্বর যখন দেয়াল ফুটে ওঠে
শামসিয়া হাসানি আফগানিস্তানের প্রথম গ্রাফিতি ও স্ট্রিট আর্ট শিল্পী হিসাবে তুলে ধরছেন আফগান নারীদের কথা৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Shamsia Hassani
কে এই শিল্পী?
২০১৪ সালে ফরেন পলিসি পত্রিকার বিশ্বের ১০০ শীর্ষ চিন্তাবিদদের তালিকায় উঠে আসে আফগান এই খ্যাতনামা শিল্পীর নাম৷ শামসিয়া হাসানি উত্তর অ্যামেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বহু দেশে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে প্রশংসা কুড়োন তার আগেই৷ ১৯৮৮ সালে ইরানে আফগান শরণার্থীদের পরিবারে জন্মানো হাসানি ২০০৫ সালে দেশে ফিরে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন৷
ছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images
নতুন করে আলোচনায় হাসানি
আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা তালেবান গোষ্ঠীর হাতে উঠে আসার পর নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হন শামসিয়া হাসানি৷ অল্প সময়েই ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে শামসিয়ার দুটি দেওয়াল চিত্রের ছবি৷ সাথে, কাবুলের বাসিন্দা হাসানির নিরাপত্তার প্রার্থনা উঠে আসে ফেসবুক, টুইটারের মন্তব্যে৷
ছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images
‘দুঃস্বপ্ন’
ছবিতে দেখা যাচ্ছে হাসানির ’নাইটমেয়ার’ বা দুঃস্বপ্ন শীর্ষক চিত্রটি৷ ৯ আগস্ট যখন আফগানিস্তান আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে তালেবানের হাতে, হাসানি সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন এক নারীর ছবি৷ ছবির নারীকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে কয়েকজন পুরুষ৷ তার হাতে ধরা বাদ্যযন্ত্র, গায়ে বোরকা৷
ছবি: Shamsia Hassani
আফগান নারীদের অবস্থা
তালেবান সমর্থকদের বিধিনিষেধ বা আক্রমণের শঙ্কায় রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে না নারীদের৷ বহু শিল্পীও একই ভয়ে মুছে ফেলছেন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপস্থিতি৷ হাসানি কিছু দিন নীরব থাকায় তার ভক্তদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে তার নিরাপত্তা নিয়ে৷ তবে ডয়চে ভেলেকে তার ম্যানেজার জানিয়েছেন যে তিনি নিরাপদে আছেন৷
ছবি: Shamsia Hassani
দ্বিগুণ ঝুঁকিতে নারী শিল্পীরা
নব্বইয়ের দশকের মতো আবার বাড়তি ঝুঁকিতে থাকবেন আফগান নারী শিল্পীরা, এমনই মত বহু বিশেষজ্ঞের৷ শরিয়া আইনের সাথে সাংঘর্ষিক শিল্পচর্চায় রত নারীদের জন্য রয়েছে ঝুঁকি৷ হাসানির শিল্পে বারবার উঠে এসেছে আফগান নারীদের সমাজের সাথে লড়াইয়ের আখ্যান৷
ছবি: Shamsia Hassani
কেন গ্রাফিতি
২০১০ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর থেকেই গ্রাফিতিকে নিজের পছন্দের মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন হাসানি৷ গণপরিসরে নারীদের লড়াই ও তাদের হার না মানা স্বভাবের কথা তুলে ধরতে চান তিনি৷ ফলে, তার পছন্দের ক্যানভাস রাস্তার বা যে কোনো গণপরিসরের দেওয়াল৷
ছবি: Shamsia Hassani
তালেবানের বিরুদ্ধে
২০২০ সালের নভেম্বেরের একটি চিত্রে হাসানি বলেন বিধ্বংসী হামলার পরের দৃশ্যের গল্প৷ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবান হামলার ফলে যে হাহাকার সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে, তা ফুটে উঠেছে হাসানির সাম্প্রতিক কাজে৷ ধারাবাহিক সিরিজের ছবিতে ছিল হামলায় মৃত এক সন্তানসম্ভবা মায়ের মৃত্যুর ছবি৷
ছবি: Shamsia Hassani
হাসানির নারীরা যেমন
শিল্পী জানান যে, তার ছবিতে নারী চরিত্রের মুখে সব সময় ফুটে ওঠে আশা, স্বাধীনতা, ভয়, প্রতিবাদ ও বিরহ৷ সব ছবিতেই মুখহীন থাকে এই নারী চরিত্ররা, যা আফগান সমাজে নারীদের মত প্রকাশের অভাব বা সিদ্ধান্তহীনতার প্রতীক৷ ‘‘আমার নারীদের চোখ বন্ধ থাকে, কারণ, সে ভবিষ্যৎ দেখতে অপারগ, কিন্তু সে অন্তর থেকে অন্ধ নয়’’, বলেন হাসানি৷
ছবি: Shamsia Hassani
হাসানির ভবিষ্যৎ
২০১৮ সালে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামসিয়া বলেন, ‘‘আমি গণপরিসরকে ভয় পাই, কারণ, যে কোনো সময় হামলা হতে পারে৷ আমি সব সময় সতর্ক থাকি৷ আমার কাজের মাধ্যমে মানুষের কাছে ভাবনা পৌঁছাতে পারবো, তাদের চিন্তাধারা বদলাতে পারবো হয়তো৷’’ সোশাল মিডিয়ায় এখনো সোচ্চার হাসানি, সরে আসেননি ভার্চুয়াল দেয়াল থেকে৷
ছবি: Shah Marai/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বস্তুত, তালেবানক্ষমতা দখলের পর আফগান ব্যাংকের সমস্ত মার্কিন ডলার আটকে দিয়েছে। অর্থাৎ, আফগান সরকার এখন আর সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে রাখা ডলার ব্যবহার করতে পারবে না। সব মিলিয়ে সেই অর্থাঙ্ক প্রায় নয় বিলিয়ন ডলার। ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডও আফগানিস্তানের সমস্ত অর্থ আটকে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সেন্ট্রাল ব্যাংকের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা করেও তালেবান অর্থনীতিকে সামলে উঠতে পারছে না।
এ দিকে আফগানিস্তানের অধিকাংশ সরকারি কর্মচারীর বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। কবে তারা বেতন পাবেন, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে আফগানিস্তান।