এডিএইচডি রোগের কথা কি কখনও শুনেছেন? শিশুদের এই রোগ হয়ে থাকে৷ এর ফলে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না৷ সবসময় তাদের মনে হয়, তারা যেন স্বপ্নের কোনো জগতে আছে৷ বড়রাও এতে আক্রান্ত হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বছরখানেক আগের কথা৷ স্কুলে বারবার সমস্যায় পড়ছিল নিকলাস৷ ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিল না, মন সবসময় অন্য জায়গায় পড়ে থাকতো৷ সে এত অস্থির অবস্থায় থাকতো যে মাঝেমধ্যে চেয়ার থেকে পড়ে যেত৷ ঐ সময় সম্পর্কে এখন আর ভাবতে চায় না নিকলাস৷ শিক্ষকদের কাছে সে ছিল সমস্যা সৃষ্টিকারী একজন এবং সেজন্য তাকে শাস্তিও দেয়া হতো৷ শেষে একদিন নিকলাস অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক ডাকতে হয়েছিল৷
সমস্যার কারণ এডিএইচডি (অ্যাটেনসন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসওর্ডার)৷ এটি মস্তিষ্কের মনোযোগ সংক্রান্ত এক অসুস্থতা৷ এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের তাদের মন সামলাতে বেগ পেতে হয়৷ নিকলাসও সবসময় তার স্বপ্নের জগতে চলে যায়৷ শিক্ষকদের কথা শোনার চেয়ে সে উত্তেজনাপূর্ণ কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে কিংবা রহস্য গল্পে ডুবে যেতে পছন্দ করে৷ এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের কাছে বাস্তবতার চেয়ে কল্পনার জগতটা বেশি আনন্দদায়ক৷
শিশুরোগের লক্ষণ চিনুন, মারাত্মক ক্ষতি থেকে দূরে থাকুন
প্রতিটি মা-বাবার কাছে সন্তানের সুস্থতার চেয়ে মূল্যবান বোধহয় আর কিছু নেই৷ তাই শিশুরোগের লক্ষণগুলো জানা থাকলে সন্তানের জীবন সহজ ও সুন্দর হতে পারে৷ ছবিঘরে থাকছে এ বিষয়েই বিশেষজ্ঞের দেওয়া কিছু পরামর্শ৷
ছবি: Fotolia
শিশুর টিকা
শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে হুপিং কাশি, দিপথেরিয়া, টিটেনাস, পোলিও, হাম, মাম্স এবং জলবসন্তের টিকা ইত্যাদি অবশ্যই দিতে হবে৷ তাছাড়া আরো কিছু টিকা রয়েছে যেগুলো পরে কিশোর বয়সে আবারও নতুন করে দিতে হয়৷ শিশুর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি টিকাই নির্দিষ্ট সময়ে দেয়া প্রয়োজন৷ তবে এ বিষয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.J. Hildenbrand
রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু শিশুরোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে মারাত্মক৷ যেমন হাম৷ জার্মানির শিশু-কিশোর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ডা. এসারের ভাষায়, ‘‘অনেকের ধারণা হাম ক্ষতি করে না৷ অথচ এটি একটি সংক্রমণ রোগ, যা নার্ভ বা স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রমণ করতে পারে৷ হামের পর শতকরা ১০ জন শিশুর মস্তিষ্কের তরঙ্গে পরিবর্তন হয় আর অন্তত একজনের মাথায় থেকে যায় মানসিক ব্যাধির লক্ষণ৷
ছবি: imago stock&people
শিশুর জ্বর
প্রায়ই দেখা যায় কোনো অসুখ হওয়ার আগে শিশুদের জ্বর হয়৷ তাই জ্বরকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া বা নিজে থেকে জ্বরের ওষুধ দেয়া কখনোই উচিত নয়৷ তবে এক শিশুর জ্বর হওয়ার আগে যদি তার বড় বা ছোট ভাই-বোনের ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে দু-একদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Agencia Estado
পান করতে না চাইলে
শিশুদের শরীরে তরল মজুদ রাখার সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তাই শিশু জল বা অন্য কোনো পানীয় পান করতে না চাইলে, খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের শরীরের ভেতরটা শুকিয়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ তাই শিশু পান করতে না চাইলে বা অনেকটা সময় কোনো তরল পদার্থ পান না করে থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Zsolt Bota Finna
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
কথা না বলা, না হাঁটা, খেলা না করা বা কানে কম শুনছে মনে হলে খুব বেশি চিন্তা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই স্রেয়৷ কারণ সব শিশু একই বয়সে একই কাজ করে না৷ কেউ হয়ত ১০ মাস বয়সেই হাঁটতে শুরু করে আবার কেউ ১৪ মাসেও হাঁটে না৷ তাছাড়া অনেক শিশু হামগুড়ি না দিয়েই হাঁটতে শুরু করে৷ এ বিষয়গুলো অনেক সময় বংশগত কারণেও হয়ে থাকে৷
ছবি: Fotolia/deber73
অযথা অসুখ খুঁজবেন না!
‘‘অকারণে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন না৷ তবে কোনো কিছু অন্যরকম মনে হলে বা কোনো দ্বিধা থাকলে প্রয়োজনে নিজের মা বা মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন৷ সারাক্ষণ শিশুকে অসুস্থ মনে করলে বা সে কথা তাকে বললে, তা শিশুমনে প্রভাব ফেলে৷ এবং পরবর্তীতে শিশুকে তা সত্যিই মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে৷’’ বলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
নিজের মতো চলতে দিন
নিজের ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ডা. এসার বলেন, ‘‘ছোটখাটো ব্যাপারে শিশুকে বিরক্ত না করে, তাকে তার মতো চলতে এবং অন্য শিশুদের সাথে খেলতে দিন৷ খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, ওরা হয় ওঠে আত্মবিশ্বাসী৷ লক্ষ্য রাখুন শিশুর আগ্রহ কোন দিকে৷ কারণ বেশি জোড় করলে শিশু মনে তার প্রভাব পড়ে এবং মনোজগতে ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়৷’’
ছবি: Fotolia/Fotofreundin
মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে দূরে রাখুন
একটা শিশু কিন্তু বুঝতে পারে না, কী কারণে তার মা অন্যের সাথে টেলিফোনে বা সরাসরি বাবার বদনাম বা সমালোচনা করছেন৷ শিশুরা এ সব নিয়ে কোনো প্রতিবাদ বা আলোচনা করতে পারে না ঠিকই, তবে শিশুমনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং এর ফলে সৃষ্টি হয় মানসিক দ্বন্দ্ব৷ তাই দাম্পত্য কলহ কখনই শিশুদের সামনে নয়! মা-বাবার ঝগড়া সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে৷
ছবি: Fotolia
8 ছবি1 | 8
অধ্যাপক মিশায়েল শুলটে-মার্কভোর্ট নিকলাসের চিকিৎসা করেন৷ তিনি তাঁর রোগীর মাথার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এডিএইচডি রোগীদের মনের ভেতরটা উত্তেজনায় ভরা৷ তারা বেশ মনোযোগী হয়৷ তবে একটা কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারে না৷ কারণ হঠাৎ করে নতুন কিছুর আবির্ভাব হলে তারা আবার সেই কাজটায় লেগে যায়৷''
এডিএইচডি যে শুধু আক্রান্ত শিশুদের জন্য সমস্যা তা নয়৷ বাবা-মা ও শিক্ষকরাও শিশুদের অদ্ভুত আচরণের কারণে সমস্যায় পড়েন৷ তবে এই অসুস্থতাকে বাগে আনার উপায় আছে৷
অধ্যাপক শুলটে-মার্কভোর্ট বলেন, ‘‘এডিএইচডি চিকিৎসার শুরুতে রোগী সম্পর্কে তথ্য জানতে হবে৷ বাবা-মা আর শিক্ষকদের বুঝতে হবে যে, শিশুরা যে মনোযোগী হচ্ছে না, তার জন্য তাঁরা দায়ী নয়৷ একেকটা দিন শিশুরা কীভাবে কাটাবে, সেই পথ তাদের দেখিয়ে দিতে হবে৷''
অবসর সময়ে সে তাঁর অতিরিক্ত শক্তি নিঃশেষ করতে পারে৷ চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর কারণে স্কুলে সে স্থির হয়ে বসতে পারে৷ চিকিৎসার ফলে নিকলাস তার মাথায় আসা চিন্তাগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি বাছাই করে শুধু সেগুলোতে মনোযোগ দিতে পারে৷ চিকিৎসা ও স্কুল পরিবর্তনের কারণে সে এখন কার্যকরভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন করতে পারছে৷
জেডএইচ/ডিজি
শিশুদের বিষণ্ণতার ৬টি কারণ
বিষণ্ণতা কিশোর-কিশোরীদের আত্মহননের পথেও ঠেলে দেয়৷ তাই সন্তানকে শুধু ভালোবাসলেই চলবে না, খেয়াল রাখতে হবে বিষণ্ণতায় ডুবে যাওয়ার মতো কারণ থেকেও তাদের যাতে দূরে রাখা যায়৷ ছবিঘরে থাকছে শিশুদের বিষণ্ণতার কিছু কারণ৷
ছবি: Fotolia/Nicole Effinger
অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ
বাংলাদেশে পরীক্ষায় ভালো না করায় কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে৷ বাবা-মা, পরিবার, সমাজ অনেকক্ষেত্রেই বোঝে যে ছোটদের খুব চাপে ফেলা মানে বিপদ বাড়ানো৷ লেখাপড়া, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড – সব জায়গাতেই তীব্র প্রতিযোগিতা৷ অনেক সময় প্রত্যাশার চাপে শিশুরা দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ বিষণ্ণতা গ্রাস করে তাদের৷ বয়ঃসন্ধিকালে এ অবস্থায় অনেকে এমন চাপ থেকে মুক্তির পথ খোঁজে আত্মহত্যায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ভাঙা পরিবার
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ সন্তানের জন্য খুব বড় আঘাত৷ এই আঘাত তাদের জীবনযাপন, আচার-আচরণ সবকিছুতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে৷ ‘ম্যারিজ অ্যান্ড ফ্যামিলি’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধ বলছে, ডিভোর্সি বাবা-মায়ের সন্তানদের অবসাদগ্রস্থ হওয়া এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি৷
ছবি: goodluz - Fotolia
কম খেলাধুলা
শিশুদের সুস্থ জীবনের জন্য খেলাধুলা খুবই দরকার৷ খেলাধুলা বেড়ে ওঠা, মেধার বিকাশ, শেখার আগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ানো – বলতে গেলে স্বাভাবিক জীবনের জন্য অপরিহার্য অনেক গুণ তৈরিতেই বড় ভূমিকা রাখে৷ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পেটার গ্রে জানিয়েছেন, যেসব শিশু খেলাধুলা কম করে তারা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানেও বহুক্ষেত্রে কম দক্ষ হয়৷ বিষয়টি তাদের একসময় হতাশাগ্রস্ত করে আর হতাশা ডেকে আনে বিষাদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
ইলেক্ট্রনিক গেমের নেশা
আপনার সন্তান খুব বেশি কম্পিউটার গেম খেলে? কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট হাতে পেলেই গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে? তাহলে সন্তানকে একটু সময় দিন৷ অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব শিশু দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি গেম খেলে, তারা অবসাদগ্রস্তও হয় বেশি৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি গেম খেললে শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ সংকুচিত হতে শুরু করে৷
ছবি: dpa
বেশি চিনি খাওয়া
ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ ম্যালকম পিট গবেষণা করে দেখেছেন, বেশি চিনি, কেক, মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এবং কার্বোনেটেড পানীয় বেশি পান করার অভ্যাসও অনেক সময় শিশুদের অবসাদগ্রস্ত করে৷ চিনি বেশি খেলে মস্তিষ্কে বৃ্দ্ধি হরমোনের কার্যক্রমেও সমস্যা তৈরি করে৷
ছবি: Colourbox
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক
বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো অনেক কারণেই খারাপ৷ বেশি অ্যান্টিবায়োটিকও শিশুদের মনস্তত্ত্বে কুপ্রভাব ফেলে৷ ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কিছু ইঁদুরের দেহে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷