1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিক্রিয়া

সমীর কুমার দে, ঢাকা৬ নভেম্বর ২০১৩

‘‘...আমি এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷ এখন রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই৷’’ টেলিফোনে ডিডাব্লিউ-কে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বললেন বিডিআর-এর তত্‍কালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের মা সৈয়দা মনিকা খাতুন৷

ছবি: DW

২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় জওয়ানদের এক বিদ্রোহে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে খুন করা হয় শাকিল আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী নাজনীন শাকিল শিপুকে৷ বিডিআর জওয়ানদের এই বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন৷ মঙ্গলবার এক রায়ে আদালত এই হত্যাযজ্ঞের অপরাধে ১৫২ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে৷

মঙ্গলবারের ঐ রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে আলিয়া মাদ্রাসা ও নবকুমার ইনস্টিটিউট মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজির হয়েছিলেন হত্যাকাণ্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও স্বজনরা৷ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা সকলেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ সবার একই দাবি, ‘রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই'৷ সাংবাদিকদের কাছেও তাঁরা এভাবেই তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ তাঁদেরই একজন বিডিআর-এর তত্‍কালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের মা সৈয়দা মনিকা খাতুন৷ ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় নিজের বাড়িতেই থাকেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘এতদিন পর হলেও ছেলে হত্যার বিচার পেয়েছি৷ এখন রায়ের বাস্তবায়ন দেখতে চাই৷''

কারো কারো কণ্ঠে অবশ্য ছিল আরো ব্যাপক ক্ষোভ৷ নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনশাদ ইবনে আমিনের স্ত্রী রাজিনা মতিন বলেন, ‘‘আমরা এতদিন এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছি৷ দরকার হলে আরও অপেক্ষা করবো৷ তারপরও এর কার্যকারিতা দেখে যেতে চাই৷'' মেজর মোহাম্মদ সালেহ-র স্ত্রী নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা পেছনের ঘটনাটি জানতে চাই৷ কারা, কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, আমরা সে বিষয়ে এখনও কিছুই জানি না৷ আমাদের পেছনের কারণ জানাতে হবে৷ বিশেষ করে, আমার স্বামীকে কে কে খুন করেছে আমি তাদের নাম জানতে চাই৷'' লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুছা মো.আইয়ুব কায়সারের স্ত্রী মুশরাত জাহান জানান, ‘‘অতি দ্রুত ভালো একটা সমাধান চাই৷ এই রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, সেজন্য আমরা অপেক্ষা করবো৷''

রায়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযুক্তদেরছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার কর্নেল সামসুল আরেফিনের স্ত্রী হাসিনা মমতাজ বলেন, ‘‘রায় যদি কার্যকর না হয়, তাই রায় নিয়ে আগাম কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না৷ কেননা রায় যদি কার্যকর না হয়, তাহলে আমাদের আক্ষেপের আর শেষ থাকবে না৷ তাই রায় যথাসময়ে কার্যকর করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি৷'' কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসি বলেন, ‘‘আমরা এ রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই৷ রাষ্ট্রের কাজ রাষ্ট্র করেছে৷ আমরা আজ সেই বিচারের রায় দেখতে এসেছি৷ প্রতিক্রিয়া এমন কিছু নেই৷ আমাদের সবার চাওয়া, যেন দ্রুত এ রায় কার্যকর হয় এবং দোষীরা শাস্তি পায়৷''

তবে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহী জওয়ানদের গুলিতে প্রাণ হারানো শিশু হৃদয় হোসেনের বাবা রাজা মিয়া বেপারী৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি এই রায়ে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই৷ আমি সব অভিযুক্তের ফাঁসি চাই৷''

বিশেষ আদালত কক্ষছবি: Harun Ur Rashid

ঐ বিদ্রোহে জওয়ানদের গুলিতে তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন হৃদয় হোসেন (১২)৷ রাজা মিয়ার চার সন্তানের মধ্যে হৃদয় একজন হলেও তাঁকে নিয়েই স্বপ্ন ছিল পরিবারের৷ রাজা মিয়া বলেন, ‘‘বড় ছেলেটি ছেলে প্রতিবন্ধী৷ হৃদয়ই ছিল আমাদের প্রধান অবলম্বন৷ পড়াশোনার পাশাপাশি সে আমার কাঁচামালের ব্যবসাতেও সহযোগিতা করত৷'' সেদিন বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানো তিনজনের মধ্যে অন্য দুই বেসামরিক ব্যক্তি হলেন – বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পড়ুয়া তারেক আজিজ সজীব (২০) ও রাজমিস্ত্রি আমজাদ আলী (৪৮)৷

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে৷ পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্যায় ও বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে সাড়ে চার বছর ধরে কারাগারে আটক করে রেখেছে৷ বিডিআর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরকারি ব্যর্থতার দায় অন্যের ওপর চাপানোর জন্যই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলকভাবে পিন্টুকে শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই প্রহসনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি৷'' মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন৷

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘এই ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারা জড়িত ছিল এমন সংবাদ পরিবেশন করেছে দেশি-বিদেশি অনেক গণমাধ্যম৷ কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ আমলে না নিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে রাজনৈতিক কারণে সাজা দেয়া হয়েছে৷''

নিহতদের আত্মীয় স্বজনছবি: DW

অপরদিকে রায়ের পর নিজ দপ্তরে এক প্রতিক্রিয়ায় আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘২০০৯ সালের ঐ ঘটনার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইন্ধন জুগিয়েছে৷ এ ঘটনা ঘটানোর জন্য ৪০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে৷''

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বিডিআর-এর সাবেক মহাপরিচালক ফজুলুর রহমান ও অন্যান্য সহযোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে ৪০ কোটি টাকা ‘বণ্টন' করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ কামরুলের ভাষায়, ৫ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ‘বিভিন্ন পর্যায়ে' দেয়া হয়েছে সেসময়৷ তাঁর কথায়, ‘‘২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল৷ তবে সেদিন সফল না হওয়ায় পরের দিন ঐ ঘটনা ঘটানো হয়৷''

এসব তথ্যের উত্‍স সম্পর্কে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিএনএন টেলিভিশন তাদের ওয়েবসাইটে এই সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকাতেও তা প্রকাশ করা হয়েছে৷ এ সংবাদের সূত্র ধরে তদন্ত করেই ঘটনার মূল হোতাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ