গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কোণায় কোণায় কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের ছাপ রয়েছে৷ একজন ঐতিহাসিক পর্যটকদের গাইড হিসেবে সেই সব আকর্ষণ ঘুরিয়ে দেখান৷ পুরাতন ও নতুনের সমন্বয়ে তিনি এক সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন৷
বিজ্ঞাপন
এথেন্স শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান অ্যাক্রোপোলিস৷ গ্রিসের রাজধানীতে প্রাচীন যুগের আরও অনেক চিহ্ন রয়েছে৷ যেমন ‘স্টোয়া অফ আটালোস'৷ প্রাচীন যুগে শহরের ময়দানের অংশ ছিল এটি৷
পর্যটকদের গাইড জর্জ ককস শহরের সেরা জায়গাগুলি চেনেন৷ যেমন শোকোলা রয়াল রেস্তোরাঁর বারান্দায় বসে প্রাতরাশের মজা৷ জর্জ বলেন, ‘‘এই দৃশ্য কখনো একঘেয়ে হতে পারে না৷ পছন্দের জায়গাগুলি পর্যটকদের দেখিয়ে খুব আনন্দ পাই, যাতে অ্যাক্রোপোলিস সম্পর্কে আমার অনুভূতি তাদের কাছে পৌঁছতে পারি৷''
প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে বড় সমাধির সন্ধান লাভ
গ্রিসের উত্তরাঞ্চলের অ্যাম্ফিপোলিস শহরে সম্প্রতি একটি সমাধির সন্ধান পাওয়া গেছে৷ মহাবীর হিসেবে পরিচিত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর সময়কার এই সমাধিটি যে কার, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নারীমূর্তি
খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ থেকে ৩২৫ সময়কালের এই সমাধির দ্বিতীয় প্রবেশপথে দুটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে৷ লম্বা ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত কোঁকড়ানো চুলের এই মূর্তি দুটি যেন সমাধির পাহারাদার হিসেবে স্থাপন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
প্রায় অক্ষত
দুটি মূর্তির মধ্যে একটির মুখ পাওয়া যায়নি৷ তবে বাকি সব অক্ষত রয়েছে বলে জানা গেছে৷ গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘একটি মূর্তির বাম হাত আর অন্যটির উত্তোলন করা ডান হাত যেন বলে দিচ্ছে যে, সমাধিতে প্রবেশ করা যাবে না৷’’
ছবি: picture alliance/AP Photo
ডানা ও মুন্ডুহীন স্ফিংক্স
খননকাজের সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা সমাধির মূল প্রবেশপথে ডানা ও মুন্ডুহীন এই ‘স্ফিংক্স’ জোড়ার সন্ধান পান৷ তবে তাদের ডানা ও মাথার কিছু ভাঙা অংশ অন্য জায়গায় পাওয়া গেছে৷ মূল সমাধিতে ঢোকার আগে ১৩টি সিঁড়ি আছে৷ সব মিলিয়ে সমাধির উচ্চতা প্রায় ৪৫৭ মিটার৷ ‘স্ফিংক্স’ হলো পাথরের বিশালাকার মূর্তি, যার দেহটি সিংহের এবং মাথা মানুষের মতো৷ মিশরে এমন বহু মূর্তি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্বেল পাথরের সিংহ মূর্তি
প্রায় পাঁচ মিটার উঁচু মার্বেল বা মর্মর পাথর দিয়ে তৈরি সিংহের এই মূর্তিটি আবিষ্কৃত সমাধির একেবারে উপরে ছিল বলে ধারণা করা হয়৷ তবে প্রায় একশত বছর আগে, ১৯১২ সালে, স্থানীয় এক নদী থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূর্তিটি উদ্ধার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জটিল প্রক্রিয়া
সমাধির খননকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে৷ এখনও চলছে৷ প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ জানিয়েছেন, তাঁরা যেন একেকজন সার্জনের মতো কাজ করছেন৷ অর্থাৎ খুব সতর্কতার সঙ্গে খননকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
সুন্দর কারুকাজ
সমাধির প্রধান কক্ষের পাশের ছোট্ট একটি কক্ষের অংশ এটি৷ কারুকাজগুলো যেন যাঁর সমাধি তাঁর সম্পত্তি ও বিশাল ক্ষমতার চিহ্ন বহন করছে৷ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর স্ত্রী ও সন্তানকে অ্যাম্ফিপোলিসে হত্যা করা হয়৷ তাই এই সমাধিটি তাঁদের হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
অনেক আশা
এটি অ্যাম্ফিপোলিস শহরের যেখানে খননকাজ চলছে, সেখানকার ছবি৷ সমাধিটি ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’-এর পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর শাসনামলের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তারও হতে পারে৷ অবশ্য খননকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার পরই সব জানা যাবে৷ তবে সমাধিটি যারই হোক না কেন, গ্রিস সরকার ইতিমধ্যে একে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এথেন্স শহর ঘুরিয়ে দেখানোর সময় ঐতিহাসিক হিসেবে তিনি প্রাচীন ও নবীনের সমন্বয়ে শহরের এক সার্বিক রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷
এথেন্স শহরের অন্যতম প্রাচীন অংশের নাম প্লাকা৷ সেখানকার আঁকাবাঁকা সরু গলির মধ্যে আবিষ্কারের মজাই আলাদা৷ সেখানে শিল্পকলার উদার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত লিসিক্রেটিসের সৌধও রয়েছে৷ জর্জ বলেন, ‘‘এই সৌধ এথেন্স শহরের এক বিশাল ধনী ব্যক্তিকে উৎসর্গ করে তৈরি হয়েছিল৷ ২,০০০ বছর আগে এথেন্সে এমন এক কর ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যার আওতায় তাঁর মতো ধনীদের কর দিতে হতো৷ মধ্য ও নিম্নবিত্তদের করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল৷''
ট্যুরে পরবর্তী গন্তব্য প্রাচীন আড্রিয়ান তোরণ৷ রোমান ও গ্রিক স্থাপত্যশৈলির সংমিশ্রণের অপূর্ব নিদর্শন৷ জর্জ ককস বলেন, ‘‘এখানে আমরা অপূর্ব সুন্দর বিজয় তোরণ দেখতে পাচ্ছি৷ পুরোটাই মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি৷ রাজা শহরটিকে এত ভালবাসতেন বলে এই তোরণ তাঁকে উৎসর্গ করা হয়েছে৷''
ছোট একটি টুরিস্ট ট্রেনে করেও শহরের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থানে পৌঁছানো যায়৷ বৈচিত্রে ভরপুর গ্রিসের রাজধানী শহরের মধ্যে যেন জাদুর ছোঁয়া রয়েছে৷
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের নতুন তালিকা
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের নতুন তালিকায় যেসব স্থান জায়গা পেয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে৷ ভারত, জার্মানি, ইরান, মেক্সিকোসহ কয়েকটি দেশের সেই স্থানগুলোর কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Nicola & Reg Murphy
দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপে নৃতাত্ত্বিক স্থান
তুরস্কের অনি শহরের মধ্যযুগীয় এই এলাকা বিশ্ব ঐতিহ্যের নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ৯৬১ থেকে ১০৪৫ সালের মধ্যে বাগরাতিদ আর্মেনীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল অনি৷ এছাড়া প্রাচীন গ্রিসের ফিলিপ্পি এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার স্টেসির মধ্যযুগীয় স্মৃতিস্তম্ভও রয়েছে এই তালিকায়৷
ছবি: Fahriye Bayram
ইরানের মরুভূমি
পারস্যের কানাত ভূগর্ভস্থ পানি পরিবহনের স্থান এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে৷ প্রথমবারের মতো এমন একটি প্রযুক্তিগত স্মৃতিস্তম্ভ এই তালিকায় স্থান পেল৷ এছাড়া ইরানের লুত মরুভূমি আছে এই তালিকায়৷ বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা এটি এবং ইরানের প্রথম প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া স্থান৷
ছবি: S.H. Rashedi
জিব্রালটারের নিয়ানডার্থাল গোরহাম গুহা
জিব্রালটার বোরের পূর্বাঞ্চলের চারটি গুহা মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাক্ষী৷ এর বাইরের অন্য নিদর্শনগুলো হলো, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন অ্যান্টিকোয়েরার পাথরের টেবিল৷
ছবি: Clive Finlayson, Gibraltar Museum
ভারতের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়
নতুন তালিকার মধ্যে রয়েছে ভারতের বিহারে অবস্থিত নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ এখানে গৌতম বুদ্ধের একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে৷ তৃতীয় শতাব্দী থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এখানে প্রার্থনা ও জ্ঞানদান করতেন৷ এছাড়া হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্কও আছে এই তালিকায়৷
ছবি: Rajneesh Raj
চীনের প্রস্তরচিত্র এবং বনানী
চীনেও আছে দুটি নির্দশন৷ একটি মাউন্ট হুয়া সান এ খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আদিম মানুষদের পাথরে আঁকা জীবন ও আচার-আচরণের ছবি৷ অন্যটি সেনংসিয়ার বনাঞ্চল৷ সেখানে বিল প্রজাতির অনেক প্রাণী রয়েছে, যেমন স্বর্ণ বানর৷
ছবি: Zhu Qiuping
মাইক্রোনেশিয়ার প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্র
মাইক্রোনেশিয়ার প্রথম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান৷ এখানে প্রাসাদ, মন্দির, কবরস্থানের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে৷ পনপেইয়ের উপকূলে ৯৯ টি কৃত্রিম দ্বীপে এসব ধ্বংসাবশেষ রয়েছে৷ ৫০০ বছর আগেই সেখান থেকে বসতি উঠে গেছে৷
ছবি: Takuya Nagaoka
আধুনিক ব্রাজিলের স্থাপত্য
পাপুলহায় ক্যাসিনো, বলরুম, গল্ফ ও ইয়াট ক্লাব রয়েছে৷ আর আছে একটি গীর্জা৷ এই অবকাশযাপন কেন্দ্রটি কৃত্রিম লেকের নকশায় তৈরি৷ ১৯৪০ সালে এটি নির্মিত হয়৷
ছবি: Marcilio Gazzinelli
ক্যারিবীয় স্থাপত্য
অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডার কোনো স্থান এই প্রথম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা পেলো৷ দুটি দ্বীপ ১৮ শতকের ঔপোনিবেশিক স্থাপত্যে সমৃদ্ধ৷
ছবি: Nicola & Reg Murphy
মেক্সিকোর সমুদ্রসম্পদ
রেভিলাগিগেডো আর্কিপেলাগো মেক্সিকোর ৬ষ্ঠ স্থান যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেলো৷ এখানকার দ্বীপগুলো বিরল প্রজাতির হাঙ্গর, তিমি, ডলফিন ও কচ্ছপের বিচরণক্ষেত্র৷
ছবি: Erick Higuera
কানাডার প্রবাল উপকূল
এই উপকূলে এতই প্রবাল যে দিক ভুল হলে জাহাজ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে৷ নিউফাউন্ডল্যান্ডের অ্যাভালন উপত্যকার এই স্থানটিকে এখন জীবাশ্ম স্থান বলা হয়৷ এখানকার জীবাশ্মগুলো ৫০ লাখ বছরের পুরোনো এবং বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন৷