এনএসএ কেলেঙ্কারি
৮ আগস্ট ২০১৩জার্মান মিডিয়ায় বলা হচ্ছে যে, মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি জার্মান নাগরিকদের উপর আড়ি পাতছে এবং তাও নিয়মমাফিক৷ এই গুপ্তচরবৃত্তি নাকি বেশ কিছুদিন ধরে চলেছে৷ সবই নিরাপত্তার কল্যাণে – মিত্রদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে শোনা যাচ্ছে এ কথা৷
এমনিতে জার্মানরা ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা সম্পর্কে অতিমাত্রায় সচেতন: আদমসুমারির সময় বাড়িতে পোষ্য জীবজন্তুর সংখ্যা জিগ্যেস করলেই তারা বেঁকে বসেন৷ কিন্তু এনএসএ কেলেঙ্কারির ব্যাপারে তারা যেন নির্লিপ্ত, প্রায় উদাসীন! কেলেঙ্কারির খবর যা বেরচ্ছে, তা-তে একবার কাঁধ নাচিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন জার্মানরা৷ যেটুকু ঝড় উঠেছে তা ইন্টারনেটে, সেটাও চায়ের পেয়ালায় ঝড় ওঠার মতো৷ অথচ স্নোডেন এবং এনএসএ সংক্রান্ত খবরাখবরে জার্মানদের যে আগ্রহ নেই, এমন নয়৷ সেক্ষেত্রে প্রতিটি নতুন ঘটনা সম্পর্কে তারা পুরোমাত্রায় ওয়াকিবহাল৷
রাজনীতির খেলা
সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আস্তে-আস্তে ধীরেসুস্থে সব খুঁটিনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর – জার্মানদের সম্পর্কে কি ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে ও তা-তে জার্মান গুপ্তচর বিভাগগুলির কি ধরনের ভূমিকা আছে – এ সব কিছুই এখন রাজনীতির খেলার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জার্মান সরকার প্রতিপদে যতোটুকু স্বীকার করার কিংবা স্বীকার করার নয়, ততটুকুই স্বীকার করে চলেছেন৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই এনএসএ কেলেঙ্কারির মোকাবিলায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি বলেই ভোটারদের ধারণা, কিন্তু আগামী সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলের উপর তার প্রভাব পড়বে না বলেই জরিপে দেখা যাচ্ছে৷ বিরোধীরা তাদের চিরন্তন দাবিতে সোচ্চার: কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত সব তথ্য খুলে পেশ করতে হবে৷
কিন্তু সর্বাধুনিক দাবিটা উঠেছে সরকারি তরফ থেকেই: গুপ্তচর বিভাগগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য সংসদের এক নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি উঠেছে৷ সেই প্রতিনিধির গুপ্তচর বিভাগের নথিপত্র দেখার অধিকার থাকবে৷ এ দাবি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সংক্রান্ত সংসদীয় পরিষদের প্রধান, ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের রাজনীতিক ভোল্ফগাং বসবাখ স্বয়ং৷ এ দাবিও কতটা লোক-দেখানো, তা বলা শক্ত, কেননা গুপ্তচর বিভাগগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সংসদীয় প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই আছে এবং সে প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র দেখার অধিকারও আছে৷
আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা চুক্তি?
ইন্টারনেটের যুগে রাষ্ট্র ও সরকারের আড়ি পাতার ক্ষমতা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তা-তে একটি বিশ্বব্যাপী তথ্য সুরক্ষা চুক্তির দাবি উঠেছে বিশেষত আইনজ্ঞদের তরফ থেকে৷ কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন সীমিত করা সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া করতেই যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে একটি তথ্য সুরক্ষা চুক্তি – তাও আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সহ – স্বাক্ষরিত হতে কতদিন সময় লাগবে, তা কল্পনা করা যেতে পারে৷
জার্মানরা বাস্তববাদী, কাজেই তারা স্নোডেন কেলেঙ্ককারি নিয়ে অযথা মাথা ঘামাতে রাজি নন৷ অপরদিকে পরম শক্তিশালী বন্ধু তথা মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেঁকে বসলে যে জার্মানির কিছুই করার নেই, এই অনুভূতিটাও জার্মানদের পক্ষে খুব সুখকর নয়৷