বিতর্কিত পরিস্থিতিতে হায়দরাবাদের চার অভিযুক্ত ধর্ষককে গুলি করে মারল তেলেঙ্গানা পুলিশ। ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় অভিযুক্তরা পালানোর চেষ্টা করে বলে পুলিশের দাবি।তখনই গুলি চালানো হয়।
বিজ্ঞাপন
পুলিশের গুলিতে মারা গেল হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত চার ধর্ষক। এই চার অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ(২৬), জল্লু শিবা(২০), জল্লু নবীন (২০), চিন্তাকুন্টা চেন্নাকেশাভালু (২০) গত দুদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে ছিল। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাত তিনটে নাগাদ তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তের কাজ চলছিল, তখন এক অভিযুক্ত বাকি তিনজনকে ইশারা করে। দুজন পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যরা পালাতে থাকে। তখনই পুলিশ গুলি চালায়। চারজনই সেই গুলিতে মারা গিয়েছে। সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার বলেছেন, ''রাত তিনটে থেকে ভোর ছ-টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বাকি তথ্য পরে জানানো হবে।''
ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশ
বিশ্বের ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন৷ এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হলেও চুপ থাকেন, ১০ শতাংশ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেন৷ এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে কোন দেশে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
সাউথ আফ্রিকা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ১৩২ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের জরিপ অনুসারে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন ধর্ষণ করে সেই কথা স্বীকারও করেন৷
ছবি: Reuters
বোতসোয়ানা
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷ দেশটির প্রতি এক লাখ নারীরর মধ্যে ৯৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture alliance/AA/K. Mathe
লেসোথো
দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক দেশ লেসোথোয় ২০১৯ সালে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানকার এক লাখ নারীর মধ্যে ৮৩ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ২১ লাখ ২৫ হাজার ২৬৮ জন৷
ছবি: Imago/F. Stark
সোয়াজিল্যান্ড
সোয়াজিল্যান্ডে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩০ জন৷ সেই হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে ৮৯৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
বারমুডা
দেশটির প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৭ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন৷ অনেক দেশেই যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতারিবোধী আইন থাকলেও নানান অসঙ্গতিতে তা ঠিকমতো প্রয়োগ হয় না৷
ছবি: pictureäalliance/dpa/A. Simmons
সুইডেন
ইউরোপের এই দেশটিতে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬৩ জনেরও বেশি নারী ধর্ষিত হন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হলেও বিশ্বজুড়ে পুরুষরাও প্রতিদিন যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Tamboly
সুরিনাম
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ সরিনামের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৪৫ জন ধর্ষণের শিকার হয়৷ দেশটিতে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ২৭২ জন মানুষ বসবাস করে৷ গত বছর দেশটিতে ২৬২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/E.Troon
কোস্টা রিকা
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টা রিকার প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ গবেষণা বলছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সের নারীদের ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Reuters/J.C. Ulate
নিকারাগুয়া
মধ্য অ্যামেরিকার এই দেশটির প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ন৩২ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫০২ জন৷ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ডটকম বলছে, অনেক নারী যৌন সহিংসতার ঘটনা নিয়ে অভিযোগই করেন না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Ocon
গ্রেনাডা
ক্যারিবীয় এই দেশটির প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৩১ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা এক লাখ ১২ হাজার তিনজন৷ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি কলেজ ছাত্রীরাও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Camara
অন্যান্য
১১৮টি দেশের মধ্যে চালানো এই জরিপে ১৪তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৪০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন৷ ৪২তম অবস্থানে থাকা জার্মানিতে প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে ৯ জনেরও বেশি ধর্ষিত হন৷ আর ভারতের প্রতি লাখ নারীর মধ্যে এক দশমিক ৮ জন ধর্ষণের শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor
11 ছবি1 | 11
কিন্তু পুলিশের এই তত্ত্ব মানবাধিকারকর্মীরা মানতে চাইছেন না। তাঁরা এই সংঘর্ষের কাহিনিকে বানানো বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। চার অভিযুক্ত ধর্ষককে এভাবে গুলি করে মারার পর প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যার ঘটনা? পুলিশ কি সংঘর্ষের ছলে ধর্ষকদের গুলি করে হত্যা করল? মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে? আগে পায়ে কেন গুলি চালানো হল না? এরকম একটি স্পর্শকাতর মামলার অভিযুক্তদের হাতে কেন হাতকড়া পরানো হয়নি? কোনও অপরাধ হলে পুলিশ অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে তদন্ত করে, ঘটনার পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করে, কিন্তু তখন সঙ্গে নিরপেক্ষ লোকেদের নিয়ে যাওয়া হয়। ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। এখানে কি তা করা হয়েছিল? মানবাধিকার কর্মী বৃন্দা গ্রোভার বলেছেন, এভাবে অভিযুক্তদের হত্যা করে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। কতজন পুলিশ ছিল, অভিযুক্তদের পায়ে কেন গুলি করা হল না?
প্রাক্তন পুলিশ কর্তারা অবশ্য এই ঘটনার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন। অন্ধ্র প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি এন স্বর্ণজিৎ সেনের যুক্তি, এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশের যা করা উচিত তাই করেছে। ওই সময় তাঁরা পা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে পারে না। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা বিক্রম সিং এর যুক্তিও তাই।
টুইটার, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ধর্ষকরা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এমনকী, বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌর টুইট করে বলেছেন, ''আমি হায়দরাবাদ পুলিশকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে নেতৃত্বকেও অভিনন্দন জানাই, তাঁরা পুলিশকে পুলিশের মতে কাজ করতে দিয়েছেন।''
আবার ঘটনার বিরোধিতা করেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সরব হয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ধর্ষক বলা যায় না। তারা অভিযুক্ত মাত্র। দ্বিতীয়ত, পুলিশ কখনওই বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। তার জন্য আদালত আছে। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সকলকে যেতে হয়।
এই ঘটনা ঘটল সেই সময়ে যখন উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে একদিন আগে। ধর্ষিতা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। পাঁচ অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জয়পুর, রাঁচি, দিল্লিতে ধর্ষণ ও হত্যা হয়েছে। সেখানেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হায়দরাবাদের অভিযুক্তদের হত্যা নিয়ে চিন্তা ও আশঙ্কা বেড়েছে মানবতাবাদীদের।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি)
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
নারী বিষয়ক অধিকার নিয়ে কাজ করা ৫৫০ বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রেক্ষিতে পরিচালিত এক জরিপের ফলে ‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক’ দেশের তালিকার শীর্ষে এসেছে ভারত৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের জরিপটি ছবিঘরে দেখে আসি জরিপের খুঁটিনাটি৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
ছবি: Reuters/P. Ravikumar
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
ছবি: AP
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/Anadolu Agency/M. Abdullah
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷