এপির উপর হোয়াইট হাউসকে নিষেধাজ্ঞা তোলার নির্দেশ আদালতের
১০ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদসংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসে অন্য সাংবাদিকদের মতোই ঢুকতে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক।
এপি-র সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: AP/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার জেলা বিচারক ট্রেভর এন ম্যাকফাডেন তার রায়ে জানিয়েছেন, "হোইয়াট হাউস যদি কোনো সাংবাদিকের জন্য তাদের দরজা খুলে রাখে তাহলে অন্য সাংবাদিকদের ভিন্ন মতামতের কারণে সেই দরজা বন্ধ করে দিতে পারে না।"
গালফ অফ মেক্সিকোকে গালফ অফ অ্যামেরিকা লিখতে অস্বীকার করে সংবাদসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি। সেই কারণে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হোয়াইট হাউস। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক বিচারক হোয়াইট হাইসকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বলে।
ডিসট্রিক্ট জাজ ট্রেভর এন ম্যাকফাডেন তার রায়ে জানিয়েছেন, "ওভাল অফিস হোক বা ইস্ট রুম -- হোইয়াট হাউস যদি কোনো সাংবাদিকের জন্য তাদের দরজা খুলে রাখে তাহলে অন্য সাংবাদিকদের ভিন্ন মতামতের কারণে সেই দরজা বন্ধ করে দিতে পারে না। এটা সংবিধান স্বীকৃত।"
এপি-র উপর নিষেধাজ্ঞা
এর আগে এপির সাংবাদিকদের ট্রাম্পের ওভাল অফিস বা এয়ার ফোর্স ওয়ানে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, হঠাতই তাদের ইস্ট রুমে ট্রাম্পের বৈঠক কভার করতে ডাকা হয়।
সংবাদসংস্থার মুখপত্র লরেন ইস্টন বলেন আদালতের রায়ে তারা 'খুশি'। তিনি আর বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অ্যামেরিকাবাসীকে যে বাকস্বাধীনতার অধিকার দেয় তা স্বীকৃত হলো।'
হোয়াইট হাইসের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এই রায় কবে থেকে চালু করা হবে তা নিয়েও সুস্পষ্ট কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউস।
চূড়ান্ত রায় ঘোষণার অপেক্ষা
ট্রাম্প প্রশাসনকে এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্পের লড়াই
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং সিএনএন সাংবাদিক জিম একোস্টার মধ্যকার সাম্প্রতিক বাদানুবাদ সারাবিশ্বে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে৷ তবে এবারই প্রথম সাংবাদিকদের আক্রমণ করেননি ট্রাম্প৷ অতীতেও ঘটেছে বহুবার৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সাংবাদিকদের আক্রমণ ট্রাম্পের অভ্যাস
মধ্যবর্তী নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সিএনএন হোয়াইট হাউস রিপোর্টার জিম একোস্টাকে আক্রমণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ একোস্টা প্রেসিডেন্টের কাছে একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আপনার মতো একজনকে কাজ করার সুযোগ দেয়ায় সিএনএন-এর লজ্জিত হওয়া উচিত৷ আপনি একজন রুঢ় এবং ভয়ানক মানুষ৷’’ সেই বাদানুবাদের পর একোস্টার ‘প্রেস পাস’ স্থগিত করে হোয়াইট হাউস৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
‘আমি জানি আপনি ভাবছেন না, আপনি কখনোই ভাবেন না’
চলতি অক্টোবরে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এবিসি সাংবাদিক সিসিলিয়া ভেগা সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন ভেগার কোনো প্রশ্ন আছে কিনা জানতে চেয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘আমি তাঁকে বেছে নেয়ায় তিনি বিস্মিত৷ মনে হচ্ছে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছেন৷’’ জবাবে ভেগা বলেন যে তিনি আসলে বিস্মিত নন৷ তখন ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটা ঠিক আছে৷ আমি জানি আপনি ভাবছেন না৷ আপনি কখনোই ভাবেন না৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bevilaqua
টুইটারে নামধরে অভিযোগ
গত বছরের জুনে এমএসএনবিসি উপস্থাপক মিকা ব্রেজেজিন্সকির ওপর ক্ষিপ্ত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তখন তিনি টুইটারে সেই সাংবাদিককে ‘কম বুদ্ধিসম্পন্ন পাগল মিকা’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং দাবি করেন যে, ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের রিসর্ট ভ্রমণ করার সময় সেই সাংবাদিকের চেহারার বলিরেখা দূর করার সার্জারির জায়গা থেকে ভয়াবহভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Senne
কিছু সাংবাদিক বছরের পর বছর আক্রান্ত
চলতি বছরের মার্চে পেনসিলভানিয়াতে এক প্রচারণা চলাকালে এনবিসি উপস্থাপক চাক টডের উপর নিজের রাগ ঝাড়েন ট্রাম্প৷ টডের ‘মিট দ্য প্রেস’ শো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিককে ‘ঘুমচোখা টড’ হিসেবে বর্ণনা করেন৷ এ সময় তিনি তাঁকে গালমন্দও করেন৷ অতীতেও টডকে নিয়ে এরকম মন্তব্য করেছেন নানা কারণে সমালোচিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Frey
টুইটার: ট্রাম্পের প্রিয় আক্রমণের স্থান
সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ চালাতে প্রায়শই টুইটারকে বেছে নেন ট্রাম্প৷ গত বছরের জুলাইয়ে তিনি একটি ভিডিও টুইট করেন৷ সেখানে তাঁকে সিএনএন-এর লোগো দিয়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তিকে মারতে দেখা যায়৷ গত ডিসেম্বরে এক ভুল টুইট করার দায়ে ওয়াশিংটন পোস্ট সাংবাদিক ডেভ উইগেলকে চাকুরিচ্যুত করার দাবি জানান তিনি৷ আর মাঝেমাঝেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ফেক নিউজ’ আখ্যা দিয়ে টুইট করতে দেখা যায় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. D. Ake
5 ছবি1 | 5
বিচারক ম্যাকফাডেন বলেন, "এপিকে হোয়াইট হাউসের ঢোকার সর্বকালীন অনুমতি দিতে বলছে না কোর্ট। এপিকে কোন বিশেষ সুবিধা দিতেও বলা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের অন্যান্য সাংবাদিক সহকর্মীদের থেকে কম সুবিধা দেওয়া যাবে না।"
সংবাদসংস্থা হওয়ার পাশাপাশি এপি-র স্টাইলবুক বা ইংরেজি ব্যবহারের নিয়মাবলী বিখ্যাত। পৃথিবীর তাবড় ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম এই স্টাইলবুকটি ব্যবহার করে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এই সংস্থার সাংবাদিকদের 'বামপন্থি পাগল' বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, যদি না তারা তাদের সিদ্ধান্ত বদল করে এপির সাংবাদিকদের তিনি হোয়াইট হাইসের খবর করতে দেবেন না।