দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষ দিকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা করতে একমত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ এছাড়া দুই দেশের নেতাদের মধ্যে টেলিফোন হটলাইন চালুর কথাও জানানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অফিসের প্রধান চুং ইউই-ইয়ং এর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের পিয়ংইয়ং সফর শেষে দেশে ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে এই তথ্য জানানো হলো৷ প্রতিনিধি দলটি সোমবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করেছে৷ ইউই-ইয়ং বলেন, বৈঠকে উত্তর কোরিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, যদি তাদের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকি দেয়া বন্ধ হয় এবং তারা বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায় তাহলে তাদের আর পরমাণু অস্ত্র রাখার প্রয়োজন পড়বে না৷
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলেরসঙ্গে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন কিম জং উন৷ সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন কিম ইয়ো জং৷ গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকের সময় বোন জংকে প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে পাঠিয়েছিলেন উন৷ ফলে গত পঞ্চাশের দশকে হওয়া কোরীয় যুদ্ধের পর জংই দক্ষিণ কোরিয়া সফর করা উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবারের প্রথম সদস্য৷
দক্ষিণ কোরিয়ার আট দর্শনীয় স্থান
এশিয়ায় ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য দক্ষিণ কোরিয়া৷ সেখানকার আটটি দর্শনীয় স্থান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/Augenklick/Kunz
সৌল
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী৷ ছবিতে ‘হাই-লাইন-পার্ক সৌলো ৭০১৭’ দেখা যাচ্ছে৷ একটি অব্যবহৃত ওভারপাসকে হাঁটার রাস্তায় পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানে আরও আছে রেস্তোরাঁ, ক্যাফে আর প্রদর্শনীর স্থান৷ এটি ছাড়াও সৌলে ঐতিহাসিক অনেক কিছু দেখার আছে৷ যেমন, হ্যানোক এলাকায় গেলে জোসন আমলের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ির দেখা মেলে৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
বুলগুকসা টেম্পল
গিওংজু শহরের এই বৌদ্ধমন্দির কমপ্লেক্সটি ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়৷ সেখানে পর্যটকরা চাইলে ভিক্ষুদের সঙ্গে কিছুদিন থেকে মেডিটেশনে অংশ নিতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/robertharding/M. Runkel
পুসান
রাজধানী সৌলের পর বন্দরনগরী পুসানেই সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস৷ সেখানকার সৈকত আর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এশিয়ার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
সেওরাকসান ন্যাশনাল পার্ক
সারা বছরই সেখানে পর্যটকরা ঘুরতে যান৷ তবে শরৎকালে সেই পার্ক এমন রঙ ধারণ করে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অন্যতম সুন্দর বলে গণ্য৷ ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে লাল আর হলুদ বনের সৌন্দর্য আগতদের মুগ্ধ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Gilbert
ডিমিলিটারাইজড জোন
যাঁরা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাস জানতে আগ্রহী, তাঁরা দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত পানমুনজম এলাকায় যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Kalker
জেজু দ্বীপ
দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলের কাছে অনেকগুলো দ্বীপ আছে৷ এরমধ্যে জেজু একটি৷ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এই আগ্নেয় দ্বীপের নাম৷ সেখানে গেলে ‘হেনিয়ো’দের দেখা মিলবে৷ তাঁরা হচ্ছেন নারী ডাইভার৷ কোনো যন্ত্রের সহায়তা ছাড়াই হেনিয়োরা সাগরতল থেকে শামুক, সাগরের শজারু, শেলফিশ সংগ্রহ করেন৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
হোংদে ফ্রি মার্কেট
সৌলের এই মার্কেটে প্রত্যেক সপ্তাহান্তে চারুকলার শিক্ষার্থীরা তাঁদের তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন৷ আর যাঁরা ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ভক্ত তাঁরা চাইলে পুসানের শিনসেগে সেন্টারে যেতে পারে৷ ১৪ তলা বিশিষ্ট এই মার্কেট বিশ্বের অন্যতম বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর৷
জিমজিলবাং নামে পরিচিত এসব ঐতিহ্যবাহী গোসল ঘর অনেক কোরীয়র কাছে বেশ জনপ্রিয়৷ সেখানে গিয়ে তাঁরা সাওনা, স্টিম বাথ ইত্যাদি করে থাকেন৷ এছাড়া আছে মাসাজ সুবিধা৷ চাইলে কেউ সেখানে সারা রাত থাকতেও পারেন৷
ছবি: Wikipedia/Korean Culture and Information Service
8 ছবি1 | 8
আলোচনার সময় উনের হাতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের একটি চিঠি হস্তান্তর করা হয়৷ বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার সরকারিবার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছিল, উন দক্ষিণের প্রতিনিধি দলকে ‘উষ্ণ স্বাগতম’ জানান৷ ‘‘শীর্ষ সম্মেলনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের আগ্রহের কথা জেনে তিনি (উন) সে ব্যাপারে মতবিনিময় করেন এবং একটি সন্তোষজনক চুক্তিতে উপনীত হন,’’ বলেছে কেসিএনএ৷
অতীত শীর্ষ সম্মেলন
গত ৭০ বছরে মাত্র দুইবার দুই কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রথমটি হয় ২০০০ সালে৷ সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে-জুং উত্তর কোরিয়ার তৎকালীন নেতা কিম জং ইলের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ে বৈঠক করেন৷ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল৷ অবশ্য এটি এখন স্থগিত আছে৷ উদারপন্থি নীতির কারণে ঐ বছরই নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন কিম দায়ে-জুং৷
এরপর ২০০৭ সালের অক্টোবরে কিম জং ইলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোহ মু-হিয়ুন৷ তিনি কিম দায়ে-জুংয়ের উত্তরসূরি ছিলেন৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের রাজনৈতিক ‘মেন্টর' ছিলেন রোহ মু-হিয়ুন৷ ঐ শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরীয় যুদ্ধ শেষ করার বিষয়টি এগিয়ে নিতে দুই পক্ষ রাজি হয়েছিল৷ কিন্তু কয়েক মাস পর রোহ মু-হিয়ুনের মেয়াদ শেষে রক্ষণশীল একজন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বিষয়টি আর এগোয়নি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
উত্তর কোরিয়াকে কাবু করতে জাতিসংঘের কিছু ‘অস্ত্র’
পারমাণবিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কোনো তোয়াক্কাই করছে না উত্তর কোরিয়া৷ দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান রয়েছে তাই জাতিসংঘেরও৷ দেখা যাক, কত রকমের নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকা পড়েছে উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কয়লা এবং লোহার ওপর নিষেধাজ্ঞা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সব ধরনের কয়লা, লোহা এবং লোহার আকরিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ওপরের ছবিতে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ড্যানডং শহরের লিয়াওনিং গ্রিনল্যান্ড এনার্জি কয়লাখনি৷ খনিটি অবশ্য চীনের৷
ছবি: Reuters/B. Goh
মুদ্রায় নিষেধাজ্ঞা
বিদেশে কোনো ব্যাংক খুলতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷ এমনকি জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ যাতে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য লাভজনক কোনো আর্থিক লেনদেন বা চুক্তিতে না যায়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নাগরিক যদি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এমন কোনো ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে অবশ্যই ওই নাগরিককে বহিষ্কার করতে হবে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP/Getty Images
জাহাজ চলাচল
ছবির এই জাহাজটি উত্তর কোরিয়ার৷ ২০১৬ সালের মার্চে ফিলিপাইন্সে এটিকে থামানো হয়৷ উত্তর কোরিয়ার কোনো জাহাজে পণ্য পরিবহনও নিষিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ৷ এমনকি পিয়ংইয়ংযে নিজেদের জাহাজে অন্য দেশের পতাকা লাগিয়ে কাজ চালাবে, সেই পথও বন্ধ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Dumaguing
আকাশেও নিষেধাজ্ঞা
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স ‘এয়ার কোরিও’ অবশ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়৷ এখনো তাদের বিমান রাশিয়া আর চীনে যাওয়া-আসা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
জ্বালানিতেও...
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জ্বালানি আমদানিতেও কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় উত্তর কোরিয়া৷ ফলে জনজীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরে মাত্র ৪০ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে পারে উত্তর কোরিয়া৷ তাই সে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ডিজেল এবং কেরোসিন পেয়েই খুশি থাকতে হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং স্থাবর সম্পত্তি
উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ জার্মানিসহ এখনো হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস আছে, সেখানে উত্তর কোরীয় কূটনীতিকরা চাইলেও একটার বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না৷ দেশের বাইরে দূতাবাস ছাড়া আর কোনো কাজে ঘর ভাড়াও করতে পারে না উত্তর কোরিয়া৷
ছবি: picture alliance/dpa/S.Schaubitzer
সামরিক প্রশিক্ষণ
কোনো দেশ উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বা আধা সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে না৷ এ বিষয়েও রয়েছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Reuters/S. Sagolj
কিম জং উনের মূর্তি
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আবক্ষ মূর্তি দেখতে বা পছন্দের কোনো জায়গায় রাখতে চান? তা জাতিসংঘের একেবারেই কাম্য নয়৷ তাই উত্তর কোরিয়ার ওপর যে কোনো ধরনের মূর্তি বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷