1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এফআর টাওয়ারে আগুনে ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

১৪ মার্চ ২০২৩

ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে ২০১৯ সালের আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়৷ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে৷

ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.H. Opu

মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সম্প্রতি ঢাকার আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন৷

অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামি হলেন এস এম এইচ আই ফারুক, তাজভীরুল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, ওয়ারদা ইকবাল, কাজী মাহমুদুন নবী ও রফিকুল ইসলাম৷ আসামিদের মধ্যে ফারুক ও তাজভীরুল জামিনে আছেন৷ বাকি ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করেছে  ডিবি৷

মূল মালিক ফারুক জমির৷ বিএনপি নেতা তাজভীরুল ভবন পরিচালনা কমিটির সভাপতি৷ বাকি ছয়জন ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্য৷ ফারুক ও তাজভীরুল নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন৷

ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খানকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অভিযোগপত্রে আবেদন করেছে ডিবি৷

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এফআর টাওয়ারে আগুনে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর পেছনে অনেকগুলো কারণ  ছিল৷ তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো—ভবনের জমির মালিক ও ভবন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব৷ ভবনে অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা ছিল না৷ ভবনের দুটি সিঁড়ির একটি সার্বক্ষণিক বন্ধ থাকত৷'

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে৷ এই ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়৷ আহত হন অন্তত ৭৫ জন৷ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে বনানী থানায় মামলা হয়৷ মামলার বাদী বনানী থানা-পুলিশ৷ মামলায় ফারুক, তাজভীরুল ও লিয়াকতকে আসামি করা হয়৷

দুই কমিটি

মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি বলছে, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) থেকে ৯৯ বছরের জন্য আট কাঠা জমির ইজারা পান ফারুক৷ ১৮ তলা ভবন তৈরির জন্য তিনি শেখ আজহার হোসেন নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তি করেন৷ আজহারের আর্থিক অক্ষমতার কারণে ১৯৯৯ সালে চুক্তিটি বাতিল হয়৷ পরে ভবন নির্মাণের জন্য রূপায়ণ গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেন ফারুক৷ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নিয়ে ভবনটি ২৩ তলা পর্যন্ত করা হয়৷

ডিবির অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, রূপায়ণ গ্রুপ জমির মালিক ফারুককে তাঁর প্রাপ্য ফ্লোর–ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়৷ রূপায়ণ গ্রুপ তার ফ্লোর–ফ্ল্যাটগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে৷ কাসেম ড্রাইসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজভীরুল রূপায়ণের কাছ থেকে ২১, ২২ ও ২৩ তলা কিনে নেন৷ ভবন পরিচালনার জন্য ফারুককে সভাপতি করে ৯ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি করা হয়। অন্যদিকে তাজভীরুলকে সভাপতি করে সাত সদস্যের আরেকটি অ্যাডহক কমিটি হয়৷

দ্বন্দ্বের জেরে নিরাপত্তায় ঘাটতি

ডিবির অভিযোগপত্রে বলা হয়, ভবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ফারুক ও তাজভীরুল নিজ নিজ বলয় তৈরি করেন৷ উভয়ে নিজ নিজ কমিটি দিয়ে ভবন পরিচালনা করে আসছিলেন৷ দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল৷ দ্বন্দ্বের জেরে একাধিক মামলাও হয়৷ দুজনের দ্বন্দ্বের কারণে ভবনে কোনো ধরনের পরিচর্যা ছিল না৷ এতে ভবনের সামগ্রিক নিরাপত্তায় গুরুতর ঘাটতি দেখা হয়৷ ভবনে প্রশিক্ষিত জনবল রাখার প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা রাখা হয়নি৷ ফ্ল্যাটের মালিকেরা ইচ্ছেমতো ভবনের ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে দেন৷ তাঁরা ভবনের ‘ফায়ার এক্সিট' বন্ধ করে দেন৷ ‘ফায়ার এক্সিট' বন্ধ থাকায় জরুরি নির্গমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়৷ ভবনের প্রথম থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত অগ্নিপ্রতিরোধক কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷ ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, হস পাইপসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের মেয়াদ ছিল না৷ ভবনে ফায়ার প্রোটেকশন ব্যবস্থা কার্যকর ছিল না৷ ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম অচল ছিল৷ ভবনে কোনো প্রকার ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না৷ ভবনের দুটি সিঁড়ির একটি সার্বক্ষণিক বন্ধ করে রাখা হতো৷ দাহ্য পদার্থ দিয়ে ভবনের অনেক ফ্ল্যাট সজ্জিত করা হয়েছিল৷ ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনা সম্পর্কে কেউ সচেতন ছিলেন না৷ এসব বিষয় দেখার দায়িত্ব ছিল ভবন পরিচালনা কমিটির কিন্তু তারা তা দেখেনি৷ ফারুক ও তাজভীরুলের দ্বন্দ্বের কারণে ভবনের নিরাপত্তার কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনার সঙ্গে ভবন পরিচালনা কমিটির সবাই জড়িত৷

আটতলায় আগুনের সূত্রপাত

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভবনের অষ্টম তলার মালিক সেলিম উল্লাহ৷ তিনি অধিক দাহ্য বস্তু দিয়ে অষ্টম তলার কক্ষগুলো সাজিয়েছিলেন৷ দীর্ঘদিন ধরে এই তলায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এলোমেলোভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল৷

সঠিক পরিচর্যা না থাকায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অষ্টম তলার শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে আগুন ধরে যায়৷ এই আগুন দ্রুত অষ্টমতলার বিভিন্ন কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে৷ পরে আগুন ভবনে ছড়িয়ে পড়ে৷ ভবনে গ্লাস নল ব্যবহার করায় অগ্নিকাণ্ডের ফলে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়৷

এনএস/কেএম (প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ