যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ তাদের দাবি, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের নামে এফবিআই অনেক সময় নিরীহ মানুষদের হয়রানি করে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কিছু তথ্য তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)-এর মুখপাত্র আন্দ্রেয়া প্রাসো বলেন, ‘‘এফবিআই প্রায়ই এমন লোকদের ‘শিকার' বানায় তদন্ত শুরুর আগে যাদের সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না৷ তারা প্রায়ই ধর্মীয় বা জাতীয় পরিচয় বিবেচনায় নিয়ে মানুষগুলোকে ধরে৷ এটা স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন৷''
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
7 ছবি1 | 7
এইচআরডাব্লিউ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘নাইন ইলেভেন'-এর পর থেকে গত ১৩ বছরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৫০০ লোককে বিচারের মুখোমুখি করেছে এফবিআই৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই মুসলমান৷ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ২৭টি মামলার বর্ণনা দিয়ে আন্দ্রেয়া প্রাসো জানান, এফবিআই-এর এমন তৎপরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মুসলমানই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন৷ সরকারের প্রতি ভীতি নিয়ে বসবাস করছেন তাঁরা৷''
প্রতিবেদনে এফবিআই-এর বিরুদ্ধে ঘুস দিয়ে দরিদ্র মানুষকে সন্ত্রাস নির্মূল মামলায় জড়ানোর অভিযোগও তুলেছে এইচআরডাব্লিউ৷ মানসিকভাবে সুস্থ নন এমন লোকদের মামলায় জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে এফবিআই-এর বিরুদ্ধে৷ কখনো কখনো এফবিআই-এর গোপন তথ্য সরবরাহকারীরা ঢুকে পড়েন মসজিদে৷ সেখানে দরিদ্র কোনো মানুষকে ধরে তাঁর কাছ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল কার্যক্রমে সহায়তা চান৷ মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কেউ এফবিআই-এর ছক অনুযায়ী কাজ করতে রাজি হলে মামলা সাজাতে আর কোনো সমস্যা থাকে না৷ আন্দ্রেয়াস প্রাসো জানান, এমন পরিস্থিতিতে খুব আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা৷