একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রগুলোর ৬৪ ভাগে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে৷ এমন কেন্দ্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে৷ তাই নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
এবার মোট ৪০ হাজার ২শ' ৭৩টি ভোটকেন্দ্রে হবে ভোটগ্রহণ৷ এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮শ' ২৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ, যদিও এদের ‘গুরুত্বপূর্ণ' বলে উল্লেখ করেছে তারা৷ স্থানীয় পুলিশ ও মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা করা হয়েছে৷
ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টার-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘ঝুঁকিপূর্ণ বললে এক ধরনের নেতিবাচক বার্তা পৌঁছায় জনগণের কাছে৷ তাই আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলি৷''
এসব কেন্দ্র ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে৷ সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ৩ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন৷ অন্যদিকে, ঝুঁকিপূ্র্ণ এসব কেন্দ্রে থাকবেন ৫ জন করে৷ এছাড়া সাধারণত ঝুঁকিপূ্র্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২০ জন করে আনসার ও অন্য নিরাপত্তা সদস্য থাকেন৷ আর সাধারণগুলোতে থাকেন ১৫ জন করে৷
নির্বাচনি প্রচারণার কয়েকটি নীতিমালা
নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে ‘সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে৷ ছবিঘরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters
চাঁদা দেয়া যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেয়া বা দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পোস্টারের আকার
সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৬০X৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৩X১ মিটার হতে হবে এবং পোস্টারে বা ব্যানারে প্রার্থী তাঁর প্রতীক ও নিজের ছবি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক ছাপাতে পারবেন না৷ তবে প্রার্থী কোনো নিবন্ধিত দলের মনোনীত হলে সেক্ষেত্রে তিনি কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
যেখানে পোস্টার লাগানো যাবে না
কোনো প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহ এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিক্সা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না৷ তবে দেশের যে কোনো স্থানে এসব ঝুলানো বা টাঙানো যাবে৷
ছবি: Reuters
অন্যের পোস্টারে নয়
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির উপর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং উক্ত পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলিকপ্টার নয়
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনো শোডাউন করতে পারবেন না৷ প্রচারণাকাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না৷ তবে দলীয় প্রধানরা যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
ভয় দেখানো চলবে না
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে৷ তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পন্ড বা তাতে বাধা প্রদান বা ভীতিসঞ্চারমূলক কিছু করতে পারবে না৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
দেয়াললিখন নয়
দেয়ালে লিখে প্রচারণা চালানো যাবে না৷ কালি বা রং দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করা যাবে না৷ প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
খাবার দেয়া যাবে না
নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরকম কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনো উপঢৌকন দেয়া যাবে না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
মসজিদ, মন্দিরে নয়
মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না৷ প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গবৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেয়া যাবে না৷
ছবি: Reuters/M.P. Hossain
মাইক ব্যবহারের নিয়ম
নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নিয়ম না মানলে
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ দলের ক্ষেত্রেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
12 ছবি1 | 12
মোট ১ লাখ ২৩ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনেআইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন থাকবেন৷দায়িত্বে থাকবেন আরো ৫০ হাজার কর্মকর্তা৷ এছাড়া ২ হাজার ২শ' ২৬টি টহল, ৭৬৭টি স্ট্রাইকিং ও ৩৫৬ স্ট্যান্ডবাই দল থাকবে৷ সব মিলিয়ে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ৬ লাখ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য৷
২৫ হাজার ৮শ' ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৬৩২টি বিশেষ এলাকায় (পাহাড়ি ও দুর্গম)৷ তবে ঢাকা বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ ৯ হাজার ৮শ' ৭২টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৬শ' ৭৯টিই ঝুঁকিপূর্ণ৷