আইএস-এর বিরুদ্ধে ফ্রান্স বিমান হামলা বন্ধ না করলে এক জিম্মিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে আলজেরিয়ার এক জঙ্গি সংগঠন৷ আইএস মুসলমানদের প্রতি পশ্চিমা দেশের নাগরিকদের হত্যার আহ্বান জানানোর পরই ফ্রান্সের ওই নাগরিককে জিম্মি করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
ইসলামিক স্টেট (আইএস) এক বিবৃতিতে বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের নাগরিকদের হত্যা করার আহ্বান জানায়৷ আইএস-এর বিরুদ্ধে দেশ দুটি বিমান হামলায় অংশ নিচ্ছে বলেই এমন আহ্বান৷ তারপর রোববারই আলজেরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা তিজি উজু থেকে এক ফরাসি নাগরিককে জিম্মি করে জুন্দ আল খালিফা (খেলাফতের সৈনিক) নামের একটি ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ সংগঠনটি এক সময় আল-কায়েদার অনুসারী ছিল৷
রোববার তিজি উজু অঞ্চলের জুরজুরা ন্যাশনাল পার্ক থেকে জিম্মি করা হয় ফরাসি নাগরিক অ্যার্ভে গুর্ডেলকে৷ তাঁর বয়স ৫৫৷ শনিবারই তিনি ফ্রান্সের নিস শহর থেকে আলজেরিয়ায় যান৷ একদিন পরই পাহাড়ের হাইকিং করতে গিয়ে তিনি জিম্মি৷ আইএস-এর মতো জুন্দ আল খালিফাও একটি ভিডিও প্রচার করেছে৷ ভিডিওতে সাদা চুলের, চশমা পরা অ্যার্ভে গুর্ডেলকে দেখিয়ে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ইরাকে আইএস বিরোধী বিমান অভিযান বন্ধ না করলে তাঁকে হত্যা করা হবে৷ আইএস এ পর্যন্ত ভিডিও চিত্র প্রচার করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দুই সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ এবং জেমস ফলিকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করেছে৷
জুন্দ আল খালিফার হুমকির মুখেও অবশ্য ফ্রান্স জানিয়েছে, ইরাকে তাদের আইএস বিরোধী বিমান অভিযান চলবে৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ বলেছেন, ‘‘আমরা কোনো ব্ল্যাকমেলিংয়ের প্রয়াস, আল্টিমেটাম বা চাপের কাছে মাথা নত করবোনা৷ এটা আমাদের স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি৷ কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন কখনোই ফ্রান্সের ইচ্ছা, অবস্থান এবং স্বাধীনতার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা৷'' ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জঁ ইভ ল্য দ্রিয়ঁ-ও বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাবো৷ আমরা নিশ্চিতভাবে আগামীতেও (বিমান) হামলা চালিয়ে যাবো৷''
এসিবি/এসবি (এএফপি)
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷