শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতেও শুরু হলো ছাত্র আন্দোলন। বুধবার রাতে যা ঘিরে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। আক্রান্ত ২ বাম ছাত্র সংগঠনের ছাত্র।
বিজ্ঞাপন
জামিয়া মিলিয়া, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে এ বার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী। বুধবার রাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এবিভিপি এবং বাম ছাত্ররা। ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাম সংগঠনের দুই ছাত্র। তবে এবিভিপি সংঘর্ষে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ঘটনার সূত্রপাত বুধবার বিকেলে। অভিযোগ, তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়চত্বরে ঘুরতে দেখা যায় এবিভিপির কিছু ছাত্রের সঙ্গে বহিরাগতদের। বাম এবং অবিজেপি ছাত্রদের তারা হুমকিও দিতে থাকে। কিন্তু তখনও কোনও সংঘর্ষ হয়নি। মারপিট শুরু হয় রাতের দিকে। অভিযোগ, রাত ১০টার পরে পূর্বপল্লি হস্টেলের ভিতরে ঢুকে পড়ে বহিরাগতরা। শুরু হয় ভাঙচুর এবং মারধর। অর্থনীতির এক ছাত্রকে বেধরক মেরে রাস্তায় নিয়ে আসা হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। রাস্তাতেও তাকে বাঁশ এবং রড দিয়ে মারা হয়। ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে যান অন্যান্য হস্টেলের ছাত্ররা। আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে তাঁরা নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে ভর্তি তিনি। বিশ্বভারতীর আর এক অর্থনীতির ছাত্র ফাল্গুনী পান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''হাসপাতালেও চড়াও হয় এবিভিপির ছাত্র এবং গুন্ডারা। সেখানে আর এক প্রস্থ মারধর শুরু হয়। আমিও আহত হই। শুধু ছাত্রদের নয়, শিক্ষকদেরও হুমকি দেওয়া হয়। এমনকী, প্রাণনাশের কথাও বলা হয়। উপাচার্য সবই জানেন। তিনি গুন্ডাদের আড়াল করছেন।''
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ''এ সব প্রশ্ন করে উপাচার্যকে বিরক্ত করবেন না।''
এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকারের বক্তব্য, ''বাম এবং আরবান নকশালরা বিশ্বভারতীতে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। আমাদের কেউ সেখানে ছিল না। গতকাল যা হয়েছে তা বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ। আমাদের নাম অকারণে জড়ানো হচ্ছে।'' যদিও বিশ্বভারতীর ছাত্রদের বক্তব্য, যাদের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে, তারা সক্রিয় এবিভিপি কর্মী।
শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন
দুই বাংলার সাংস্কৃতিক যোগসূত্রকে আরো শক্তিশালী করতে শান্তিনিকেতনে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ভবন৷ এর জন্য ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ৷ এখানে ৪৫০ আসনের প্রেক্ষাগৃহসহ একটি সংগ্রহশালা ও পাঠাগারও রয়েছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
শুভ উদ্বোধন
রবীন্দ্রনাথের সার্ধ-শতবর্ষের সময়ই শান্তিনিকেতনে এই ভবন গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শেখ হাসিনা৷ তখন থেকেই তিনি প্রতীক্ষায় ছিলেন৷ শুক্রবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো৷ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ ভবনের৷ আশা, ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় খুলে যাবে এবার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আনন্দযজ্ঞ
বাংলাদেশ ভবনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগার তৈরি করা হয়েছে৷ সাধারণের ব্যবহারের করার কথা ভেবেই বাড়িটিতে একটি ক্যাফেটোরিয়াও রাখা হয়েছে৷ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শান্তিনিকেতনে এসে বাড়িটির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ তদারকি করে গিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে চাঁদের হাট
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের দিন শান্তিনিকেতনে উপস্থিত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা৷ ছিলেন বহু রবীন্দ্র অনুরাগীও৷ এদিনই ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবর্তন৷
ছবি: DW/P. Samanta
কবি ও মুজিবুর
বাংলাদেশ ভবন যে শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই৷ বাংলাদেশ ভবনের প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুরাল’ স্থাপন করা হয়েছে৷ ভেতরেও দেখা মিলবে তাঁদের৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
স্মারক
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক সংগ্রহশালায় দেখা মিলবে জানা-অজানা কিংবা চেনা অচেনা বস্তুর৷ কিন্তু রবীন্দ্র অনুরাগী মাত্রেই জানেন পদ্মার বোটের প্রতিরূপটির কথা৷ কবিগুরুর জীবনের একটা বিশেষ সময় কেটেছে বাংলাদেশে৷ সেই সব স্মৃতিকে নিয়ে গড়া হয়েছে বাংলাদেশ ভবনের গ্যালারি৷ এখানেই ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কবিগুরুর বাংলাদেশে কাটানোর নানা স্মৃতিবাহী স্মারক, ছবি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
পায়ে পায়ে শান্তিনিকেতন
বিশ্বভারতীতে আজকাল পর্যটকদের জন্য প্রায়ই যানজট হয়৷ ব্যক্তিগত গাড়ি বা টোটোর উৎপাতে অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে যান৷ তবে এমন আনন্দঘন মুহূর্তকে ধরে রাখতে কেউ কেউ পায়ে পায়েই বেরিয়ে পড়েছেন৷ পুলিশি নিরাপত্তায় শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন ভবনগুলি আর বিখ্যাত মনীষীদের বাড়িগুলিও দেখে নিয়েছেন তাঁরা৷ ছবিতে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’৷
ছবি: DW/P. Samanta
আলোকিত মঞ্চ
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবার শান্তিনিকেতনে এলেন বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সঙ্গে ছিলেন দুই বাংলার দুই নেত্রী৷ কাজেই তিস্তার জলবণ্টন সমস্যা বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে কোনো কথাই হয়নি, এটা ভাবা যায় না! বাংলাদেশে এ বছরই সাধারণ নির্বাচন৷ তাই শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ সফর বাড়তি তাৎপর্য পাচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
7 ছবি1 | 7
বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধর্না শুরু করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাদের দাবি, উপাচার্য আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
কিছুদিন আগে উপাচার্যের আমন্ত্রণে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত সিএএ নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতীতে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একাংশ সেই অনুষ্ঠান ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে এ ধরনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান তাঁরা হতে দেবেন না। এবং এর জন্য উপাচার্যকেও নিশানা করেন তাঁরা। রাত পর্যন্ত স্বপন দাশগুপ্তের অনুষ্ঠানস্থল ঘেরাও করে রাখা হয়।
স্থানীয় মানুষ এবং শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকদের বক্তব্য, তখন থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ছিল। বুধবার রাতে যা চরম চেহারা নেয়। ঘটনার নিন্দা করেছে তৃণমূলও। বৃহস্পতিবার বিবৃতি জারি করে তৃণমূল জানিয়েছে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত।