সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসা দুই তরুণীকে সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জর্জিয়া৷ সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে এমন দাবি করে গত সপ্তাহে তাঁরা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরব থেকে জর্জিয়ায় পালিয়ে এসেছিলেন দুই বোন মাহা আল সুবাই (২৮) এবং ওয়াফা আল সুবাই (২৫)৷ গত বুধবার তাঁরা টুইটারে এই খবর জানিয়ে নতুন কোনো দেশে বসবাসের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানান৷ এরই মধ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাসপোর্ট স্থগিত করেছে বলেও দাবি তাঁদের৷ টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে মাহা বলেন, ‘‘আমরা বিপদে আছি৷ আমাদের মত প্রকাশের জন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ আমরা চাই কোনো দেশ আমাদের স্বাগত জানাক এবং আমাদের অধিকার রক্ষা করুক৷ অনুগ্রহ করে আমাদের সহযোগিতা করুন৷’’
এমন আবেদনের প্রেক্ষাপটে জর্জিয়া সরকার বৃহস্পতিবার তাঁদের সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে৷ রাজধানী বিলিসিতে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে দেখা করেছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ৷ কিভাবে আশ্রয়ের আবেদন করতে হবে সে বিষয়ক তথ্য তাঁদের জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ‘‘দুই নারীকে সহযোগিতার প্রস্তাব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাঁদের সাথে দেখা করেছে,’’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, দুই বোনকে একটি নিরাপত্তা ভ্যানে করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অভিবাসন কার্যালয়েনিয়ে যাওয়া হয়৷ তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, এই দুজনের কোনো আত্মীয় জর্জিয়ায় নেই, যাদের মাধ্যমে কোনো বিপদ হতে পারে৷ তাঁদের পাসপোর্ট স্থগিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৌদি দূতাবাস৷ এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, মাহা এবং ওয়াফার পাসপোর্ট এখনো কার্যকর রয়েছে৷ দুই বোনের এমন দাবির কোনো সত্যতা নেই বলেও উল্লেখ করেছে সৌদি দূতাবাস৷ তবে জর্জিয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা৷
ক্যানাডায় কেমন আছেন সৌদি তরুণী রাহাফ?
পারিবারিক নির্যাতন এড়াতে ব্যাংককে পালিয়ে যান সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুন৷ পরিবারের কাছে ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন ক্যানাডাতে৷ কিভাবে সামলেছেন এ পরিস্থিতি, ক্যানাডায় কেমন আছেন তিনি?
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
শুরুতে থাইল্যান্ডে
কুয়েত থেকে পালিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড বিমানবন্দরের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন রাহাফ৷ নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করে পরিবারে ফিরে যেতে অস্বীকার করলে আন্তর্জাতিক মহলের চোখে পড়েন তিনি৷ এক পর্যায়ে থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ
হোটেলে অনেকটা বন্দি থাকলেও বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি তিনি৷ তাই নিজের অবস্থান জানাতে টুইটারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন রাহাফ৷ এ সময় তিনি ‘অ্যাসাইলাম’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি ক্যাম্পেইনও শুরু করেন৷ কখনো ফটো, কখনো ভিডিও প্রকাশ করে প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান নিজের সর্বশেষ অবস্থান৷
ছবি: Twitter/Rahaf Mohammeed
অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা
প্রথমে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে আশ্রয় দেবে না বলে জানায়৷ তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথাও ভাবছিল থাইল্যান্ড সরকার৷ পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝতে পেরে রাহাফ তাঁর বন্ধুর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার একটি বিমান টিকেট কেনেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Human Rights Watch/Rahaf Mohammed Alqunun
হেটেলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা
হোটেলে রাহাফের অবস্থান জানতে পেরে সেখানে তাঁর সাথে কথা বলতে যান থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি
বিমানবন্দরের হোটেলে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা থাকার পর, আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপে থাইল্যান্ড সরকার তাঁকে সে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Lalit
জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিরাও পাশে
পারিবারিক নির্যাতন এড়ানোর জন্য থাইল্যান্ডের হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাহাফ৷ সার্বিক অবস্থা জানতে পেরে তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যান জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
বিদায় থাইল্যান্ড
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্যোগের পর ক্যানাডা সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়৷ থাইল্যান্ড ত্যাগের আগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কার্যালয়ের সামনে একটি ছবি তুলতে ভোলেননি রাহাফ৷
ছবি: Reuters/UNHCR/K. Ibrahim
‘আমি পেরেছি’
থাইল্যান্ড থেকে ক্যানাডাগামী বিমানে বসে নিজের পাসপোর্টের একটি ছবি টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন রাফাহ৷ ছবির ক্যাপশনে লিখে দেন ‘আমি পেরেছি’৷
ছবি: Reuters/Twitter
ক্যানাডায় উষ্ণ অভ্যর্থনা
আন্তরিকভাবেই রাহাফকে গ্রহণ করে ক্যানাডা সরকার৷ পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে ক্যানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: Reuters/C. Osorio
সৌদি সরকারের বক্তব্য
সৌদি আরবে নারী অধিকার বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ৷ নির্যাতন এড়াতেই পরিবার ছেড়ে পালিয়েছেন রাহাফ৷ ঘটনার কয়েকদিন পর সৌদি সরকারের জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান এক বিবৃতিতে রাহাফের কর্মকাণ্ডকে ‘পারিবারিক মূল্যবোধবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Yorulmaz
10 ছবি1 | 10
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো নারীকে কাজ, বিয়ে বা ভ্রমণের জন্য পুরুষ অভিভাবকের অনুমতিপত্র রাখতে হবে৷ বিভিন্ন অধিকার সংস্থাগুলো এই নিয়মের সমালোচনা করে আসছে৷ তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় অনেক পরিবারে নারীদের বন্দি জীবন কাটাতে হয়৷
এই নিয়ম উপেক্ষা করে দেশটি থেকে পালিয়ে আসার ঘটনা অবশ্য এবারই প্রথম নয়৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বিমানবন্দরে পালিয়ে এসেছিলেন রাহাফ আল কুনুন নামের আরেক নারী৷ তিনিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন৷ পরে ক্যানাডা তাঁর এই আবেদন গ্রহণ করে৷
তবে সবার ক্ষেত্রে এমন ভাগ্য হয় না৷ যেমন দিনা আলি লাসলুম৷ ২০১৭ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেয়ার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে ফিলিপাইন্সের ম্যানিলায় আসেন৷ কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে পরিবারের পুরুষ সদস্যের হাতে তুলে দেয়া হয়৷