জার্মানির সাবেক ফুটবলার মেসুত ও্যজিল শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ইফতার করেছেন৷ এজন্য রবিবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোপের মুখে পড়েন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গতবছর বিশ্বকাপের আগে লন্ডনে এর্দোয়ানের সঙ্গে দেখা করে জার্মান ফুটবল ফেডারেশন বা ডিএফবি ও সমর্থকদের কাছে সমালোচিত হয়েছিলেন ও্যজিল৷ জার্মানির প্রতি তাঁর পূর্ণ আনুগত্য নিয়েও সেই সময় প্রশ্ন উঠেছিল৷
এর জবাবেও্যজিল ডিএফবিতে বর্ণবাদ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন৷ এর্দোয়ানের সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, তিনি তাঁর পরিবারের দেশের সর্বোচ্চ অফিসের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন৷ এছাড়া জার্মানির সাবেক অধিনায়ক লোথার মাথেউস একবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে দেখা করার পর গণমাধ্যমে যে নেতিবাচক কাভারেজ পেয়েছিলেন, সেই ঘটনার সঙ্গে নিজের ঘটনারও তুলনা করেছিলেন ও্যজিল৷
তবে ও্যজিলের কয়েকজন সহকর্মী ও ফেডারেশনের কর্মকর্তারা জার্মান ফুটবলে বর্ণবাদ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন৷
এরপর বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে জার্মানির বিদায়ের পর জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ও্যজিল৷
ইস্তাম্বুলের ডলমাবাহচে প্রাসাদে অনুষ্ঠিত ইফতারে ও্যজিলের সঙ্গে তাঁর বাগদত্তা সাবেক মিস তুরস্ক আমিনে গ্যুলসেও উপস্থিত ছিলেন৷ আগামী গ্রীষ্মে তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে৷ গত মার্চ মাসে ঐ বিয়েতে এর্দোয়ানকে আমন্ত্রণ জানিয়েও সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন ও্যজিল৷
যুব ও ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার ঐ ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেখানে তুরস্কের অন্যান্য ক্রীড়াবিদরাও উপস্থিত ছিলেন৷ তবে ইফতার অনুষ্ঠানে এর্দোয়ানের দুই পাশে ছিলেন ও্যজিল ও তাঁর বাগদত্তা গ্যুলসে৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
এক নজরে মেসুত ও্যজিল
এক যুগ জার্সি গায়ে বিভিন্ন পর্যায়ের জার্মান দলের প্রতিনিধিত্ব করার পর, এর্দোয়ান-বিতর্কে অবসর নিলেন মেসুত ও্যজিল৷ চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ও্যজিলের বর্ণিল ক্যারিয়ার৷
২০০৫ সালে ও্যজিল নিজের শহর গালসেনকিয়র্শেনে বুন্ডেসলিগার দল শালকের যুবা দলে যোগ দেন৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর সাফল্য আসে বেশ দ্রুতই৷ ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি৷
ছবি: Imago/Team 2
ব্রেমেন এবং তারপর
যাঁরা একসময় ‘ভবিষ্যতের তারকা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ করেননি ও্যজিল৷ শালকের সাথে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ার পর ২০০৮ সালে ভ্যার্ডার ব্রেমেনে যোগ দেন তিনি৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তাঁর নজরকাড়া নৈপুণ্য ইউরোপের সবচেয়ে ভালো ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ২০১০ সালে ও্যজিল রেয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, পরে তৎকালীন সময়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফার মানিতে যোগ দেন ইংলিশ দল আর্সেনালে৷
ছবি: Imago/Sven Simon
ইন্টিগ্রেশন
২০১০ সালে ও্যজিল জার্মানির সর্বোচ্চ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ‘বাম্বি’ জিতে নেন৷ জার্মানিতে ও্যজিল তাঁর পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম৷ তুর্কি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করলেও, ও্যজিল জার্মানির প্রতি তাঁর আনুগত্যের কথা বরাবরই জানিয়ে এসেছেন৷ ও্যজিল একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ ২০১৬ সালে মক্কায় হজ করে এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
জয় করেছেন হৃদয়
২০১২ সালে জার্মানির হয়ে তুরস্ককে হারানোর পরের ছবি এটি৷ খেলোয়াড়দের কেবিনে গিয়ে ও্যজিলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের শান্ত মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অনেক ভক্তকে কাছে টেনেছেন৷ ২০১৪ সালে নিজের বিশ্বকাপ জয়ের উপার্জন ব্রাজিলের দুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে সবার মন জয় করে নেন তিনি৷
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে সাতটি ম্যাচই শুরুর করেছিলেন ও্যজিল৷ জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল তাঁর৷ সবচেয়ে বেশি সফল পাসের তালিকায় সেবার তৃতীয় হয়েছিলেন ও্যজিল৷ সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন তারকা মেসিই ছিলেন কেবল তাঁর চেয়ে এগিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/GES/M. Gillar
এর্দোয়ান বিতর্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের সঙ্গে আগেও দেখা করেছেন ও্যজিল৷ কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে এর্দোয়ানের সাথে এমনই এক সাক্ষাতের পর তোলা ছবি বিতর্ক উসকে দেয়৷ বামপন্থিরা এই বৈঠক ও ছবিকে বর্ণনা করেছেন স্বৈরাচারী এক শাসকের পক্ষে সমর্থনের প্রতীক বলে, অন্যদিকে, চরম ডান থেকে অভিযোগ এসেছে ও্যজিলের জার্মানির প্রতি আনুগত্যের অভাবের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Presidential Press Service
একটি অধ্যায়ের অবসান
২০১৮ সালে রুশ বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়ে জার্মানি৷ কয়েক দশকের মধ্যে যা ছিল দেশটির সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স৷ ডিএফবি-প্রধান রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল নিজের দিকে আসতে থাকা সমালোচনার তীর ঘুরিয়ে দেন ও্যজিলের দিকে৷ তিনি অভিযোগ করেন, এর্দোয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে বিক্ষিপ্ত মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে৷ এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে জার্মান ফুটবল ফ্যানরাও৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
জিতলে ‘জার্মান’, হারলে ‘অভিবাসী’
মাত্র ২৯ বছর বয়সেই টুইটারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবসরের ঘোষণা দিলেন ও্যজিল৷ গ্রিন্ডেলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তাঁর অদক্ষতার জন্য আমি বলির পাঁঠা হতে রাজি না’৷ ডিএফবি প্রধানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও তোলেন তিনি৷ বাজে সময়ে পাশে থাকায় জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ এবং সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি৷ জার্মানির হয়ে মোট ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৩টি গোল নিজে করেছেন এবং ৪০টি গোলে সহায়তা করেছেন ও্যজিল৷