এবার এসএমএস তালাক!
২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯তালাক, তালাক এবং তালাক৷ তিনবার এই একটি শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে একজন মুসলমান তাজিক তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন খুব সহজেই৷ কারণ তাজাকিস্তানের ইসলাম বিশেষজ্ঞরা তাই বিশ্বাস করেন৷ আর তাই তালাক এখানে একটি সাধারণ ব্যাপার৷
কিন্তু মোবাইল ফোনে তালাকের বিষয়টি কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও এই আধুনিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে বিদেশে কর্মরত অনেক তাজিক তাদের স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন৷
এই যেমন তাজাকিস্তানের আফগান সীমান্তের কাছে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত মুসলিম বিবাহিত নারী নাদিরার কথাই ধরা যাক৷ তার স্বামী কাজের উদ্দেশে রাশিয়া গিয়েছে৷ সে তার দুই বাচ্চাসহ শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সঙ্গে বসবাস করে৷ কিন্তু কোন ধরণের ঝগড়া বা গন্ডোগোল ছাড়াই একদিন তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ তাও আবার এসএমএস এর মাধ্যমে৷ তার মোবাইল এর পর্দায় তালাক শব্দটি তিন বার ভেসে উঠে৷ এরপর তার কাছে সবই অন্ধকার৷ কারণ সে জানতে পারলো তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে৷ তাজাকিস্তানের সমাজ ব্যবস্থায় তালাক বিষয়টি খুবই লজ্জার৷ সে বিষ খেতে চেয়েছিল অথবা বেছে নিতে চেয়েছিল আত্মহত্যাকে৷
তাজাকিস্তান একটি সুন্নি মুসলমান অধ্যুষিত দেশ৷ দেশটিতে গৃহ যুদ্ধের সময় কয়েক হাজার মানুষ মারা যায় এবং নব্বই এর দশকে এর অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে মারাত্মকভাবে৷ সেসময় প্রচুর লোক কাজের উদ্দেশ্যে অপেক্ষাকৃত উন্নত অর্থনীতির দেশ যেমন রাশিয়া বা চীন যায়৷ আর এই সময় থেকেই তাজাকিস্তানে প্রবাসী অধিবাসীদের মধ্যে তালাকের পরিমাণ বেড়ে যায়৷
মেয়েদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন একজন আইনজীবী দোসুলতান সোনাজিরোভা বলেন, এসএমএস মতো আধুনিক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই তালাক দিচ্ছে তাজাকিস্তানের প্রবাসী পুরুষরা৷
কিন্তু সুন্নি আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি তখনই তালাক দিতে পারবে যখন তার সামনে তার স্ত্রী থাকবে৷ অন্যথায় নয়৷ এর অর্থ মোবাইলে সঠিক নিয়মে তালাক দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন তাজাকিস্তান ইসলামি কেন্দ্রের ফতোয়া বিভাগের প্রধান কোবিল্ডজোন বয়েভ৷ তিনি বলেন, মোবইলে তালাকের মাত্রা তাজাকিস্তানে বেড়েই চলেছে যা ইসলাম সম্মত নয়৷
ঘটনার সংখ্যা কতো এবিষয়ে কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বিষয়টি পরিষ্কার যে, এটি এখন স্বাভাবিক৷
আইনজীবী দোসুলতান সোনাজিরোভা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, অনেক মেয়েরই বিবাহের কাগজপত্র না থাকায়, তারা সঠিক ভাবে আদালতের কাছে বিচার চাইতে পারে না৷ তবে বিষয়টি প্রতিকারে পরিবার এবং সমাজ থেকে উদ্যোগী হওয়া উচিৎ৷
প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার