সোমবার সরাসরি কাটালুনিয়া রাজ্যের শাসনভার তুলে নিচ্ছে স্পেনের ফেডারেল সরকার৷ সংবিধানসম্মত এই দৃষ্টান্তহীন পদক্ষেপের বাস্তব পরিণতি আন্দাজ করা কঠিন৷ এদিকে স্বাধীনতাবিরোধীদের শক্তি বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতার পথে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েও কাটালুনিয়া রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শেষ পর্যন্ত ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়লো৷ মাদ্রিদে ফেডারেল সরকার শুরু থেকেই কড়া অবস্থান নিয়ে এসেছে৷ তাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা ঘোষণা করায় শুক্রবারই কাটালুনিয়া রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখোইয়ের সরকার৷ আগামী ২১শে ডিসেম্বর আগাম নির্বাচন পর্যন্ত কাটালুনিয়ার শাসনভার তুলে নিচ্ছে ফেডারেল সরকার৷ নির্বাচনের পর নতুন রাজ্য সরকার গঠন হলে আবার ক্ষমতা হস্তান্তর হবার কথা৷
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একের পর এক নাটকীয় ঘটনার প্রেক্ষাপটে কাটালুনিয়ার মানুষ গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ এতকাল স্বাধীনতার সমর্থকরাই মূলত রাজপথে নেমে শক্তি প্রদর্শন করেছে৷ কিন্তু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চরম অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে এবার সরব হয়ে উঠছে স্বাধীনতাবিরোধী মানুষ৷ জনমত সমীক্ষায় আপাতত তাদেরই পাল্লাভারি৷ রবিবার বার্সেলোনায় স্পেনের ঐক্যের পক্ষে বিশাল মিছিল দেখা গেছে৷
এই অবস্থায় কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামী শিবির উভয় সংকটে পড়েছে৷ মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’-এর অভিযোগ করে বরখাস্ত হওয়া সরকারের প্রধান কারলেস পুজেমন শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে প্রতিরোধ চালিয়ে যাবার ডাক দিয়েছেন৷ তবে আসন্ন নির্বাচনে যোগদানের প্রশ্নে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সামনে দুটি বিকল্পই বড় কঠিন৷ শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদের কর্তৃত্ব মেনে নির্বাচনে অংশ নিলে এতদিনের প্রতিরোধ বৃথা হয়ে যাবে৷
এরই মধ্যে তাদের প্রতি জনসমর্থনে ভাটা পড়েছে৷ মাদ্রিদের কর্তৃত্ব মেনে নিলে স্বাধীনতাকামী অনেক ভোটারও ক্ষুব্ধ হয়ে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবেন৷ আবার নির্বাচনে অংশ না নিলে আগামী রাজ্য বিধানসভায় তাদের অস্তিত্বই থাকবে না৷
কাটালুনিয়ার প্রশাসন যন্ত্র মাদ্রিদের সরাসরি শাসন কতটা মেনে নেবে, তা নিয়েও জল্পনাকল্পনা চলছে৷ প্রশাসনের সদস্য থেকে শুরু করে সরকারি কর্মীরা বিদ্রোহ করলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা-ও স্পষ্ট নয়৷ সে ক্ষেত্রে অরাজকতার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে৷
আগাম নির্বাচনের পরেও বর্তমান সংকটের নিরসন হবে, এমনটা ধরে নেওয়া কঠিন৷ স্বাধীনতাকামী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে বা রাজ্য বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি না থাকলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বজায় থাকার আশঙ্কা রয়েছে৷ এমনকি দুই শিবিরই সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট শক্তি না-ও অর্জন করতে পারে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
স্পেনের পর ইউরোপে আরও বিভাজনের আশঙ্কা?
স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্যের স্বাধীনতার গণভোট নিয়ে বিতর্কের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কিছু অঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতার প্রয়াস উৎসাহ পাচ্ছে৷ এই সব অঞ্চলে কাটালুনিয়ার স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
ব্রেক্সিটের পর স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ
২০১৪ সালেই এক গণভোটে স্কটল্যান্ডের ৫৫ শতাংশ ভোটার ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে তাদের মতামত আবার যাচাই করতে চায় স্কটল্যান্ডের জাতীয় পার্টি৷ ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হলে, এমনকি কোনো বোঝাপড়া না হলেও স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করতে চায় এসএনপি দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/G. Stuart
বেলজিয়াম থেকে ফ্লেমিশ অঞ্চলের বিদায়?
১৮৩০ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মাঝে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেলজিয়াম সৃষ্টি হয়েছিল৷ ফরাসি-ভাষাভাষী দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবার স্বাধীনতার চেষ্টা চালাচ্ছে উত্তরের ফ্লেমিশভাষী সমৃদ্ধ অঞ্চল৷ বেলজিয়ামের জোট সরকারের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী এনভিএ গোষ্ঠী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাফল্য বাড়িয়ে স্বাধীন ফ্লেমিশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন কার্যকর করতে চায়৷
ছবি: Reuters
স্পেনের বাস্ক অঞ্চলের সংগ্রাম
১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীন বাস্ক রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘এটা’৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই এই গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করেছে৷ শান্তিপূর্ণ পথে ফ্রান্স ও স্পেনে বাস্ক সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চায় ‘সর্টু’ নামের এক রাজনৈতিক দল৷ কাটালুনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের প্রতি স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা গেছে৷
ছবি: AP
নিউ ক্যালিডোনিয়ার বিদায় আসন্ন?
প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে ফ্রান্সের শাসন থেকে মুক্তি পেতে পারে নিউ ক্যালিডোনিয়া৷ আগামী নভেম্বর মাসে সেখানে এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে৷ ১৮৫৩ সাল থেকে ফ্রান্সের অধীনে থাকার পর ২৮০,০০০ জনসংখ্যার এই দ্বীপমালা স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে৷ ১৯৯৮ সাল থেকেই নিউ ক্যালিডোনিয়া স্বায়ত্তশাসনের আরও অধিকার ভোগ করছে৷
ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৩৩০,০০০৷ সেখানকার জাতীয় লিবারেশন ফ্রন্ট ২০১৪ সালের জুন মাসে স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন ত্যাগ করেনি৷ স্বায়ত্তশাসনের বেশ কিছু অধিকার সত্ত্বেও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল রয়েছে৷
ছবি: DW/E. Bryant
ডেনমার্কের ফেরো দ্বীপ
আটলান্টিক মহাসাগরে ফেরো দ্বীপপূঞ্জে মাত্র ৪৮,০০০ মানুষের বাস৷ সেখানকার ভোটাররা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এক গণভোটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁদের রায় জানাবেন৷ ১৯৪৮ সাল থেকে ফেরো দ্বীপ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পেয়েছে৷ শুধু পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার বিষয় দু’টি ডেনমার্কের হাতে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্তশাসন চায় ইটালির উত্তরাঞ্চল
আরও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লম্বার্ডি ও ভেনেতো রাজ্য আগামী ২২শে অক্টোবর এক গণভোটের আয়োজন করেছে৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ উত্তরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল গোটা দেশের অর্থনীতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের দাবিদার৷ ফলে কাটালুনিয়ার মতো এই অঞ্চলও কর বাবদ অর্থের আরও বড় অংশ নিজেদের কাছে রাখতে চায়৷