মার্কিন কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের অর্থের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেও সম্ভবত শেষরক্ষা করতে পারবেন না ট্রাম্প৷ ১৬টি রাজ্য তাঁর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার জন্য অর্থ সংগ্রহে বদ্ধপরিকর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাই মার্কিন কংগ্রেস ৫৭০ কোটি ডলার বরাদ্দ না করায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিপর্যয়সহ একাধিক তহবিল থেকে সেই অর্থ সংগ্রহের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি৷ কংগ্রেস এই অঙ্কের মাত্র এক চতুর্থাংশ বরাদ্দ করায় অন্য সূত্র থেকে বাকি অর্থ পেতে চাইছেন ট্রাম্প৷ হোয়াইট হাউসের সূত্র অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে মূলত বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ তহবিল থেকে প্রায় ৬৬০ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পারেন৷
বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ এবার অ্যামেরিকার ১৬টি রাজ্য আদালতে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করলো৷ সোমবার ‘প্রেসিডেন্ট দিবস'-এর দিনটিকেই মামলার জন্য বেছে নেওয়ায় বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ রাজ্য সরকারগুলির অভিযোগ, ট্রাম্প সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন এবং তিনি নিজেই এই সাংবিধানিক সংকটের জন্য দায়ী৷ তাছাড়া সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশকে জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থা হিসেবে তুলে ধরার ব্যাখ্যাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসনের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে অনুপ্রবেশের হার গত ৪৫ বছরে সবচেয়ে কম মাত্রা ছুঁয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদীরা দক্ষিণের স্থলসীমান্ত পেরিয়ে দেশে প্রবেশ করছে, এমন কোনো তথ্যও সরকার দিতে পারে নি৷
মার্কিন সীমান্ত যখন ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’
উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর মধ্য অ্যামেরিকা থেকে অসংখ্য মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন৷ অভিবাসন থামাতে মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নীতি সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেই হার মানতে প্রস্তুত নন৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
অ্যামেরিকায় প্রবেশের স্বপ্ন
হাতে গোনা যে কয়েকজন শরণার্থী এ যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, ১৫ বছর বয়সি হন্ডুরাসের বায়রন গার্সিয়া তাদের অন্যতম৷ ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অ্যামেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
পথের শেষে অপেক্ষা
সবার এমন সৌভাগ্য হয় না৷ মেক্সিকোর উত্তরে সীমান্তে অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই৷ মার্কিন সীমান্তের কাছে টিহুয়ানা শহরে তাঁবু খাটিয়ে শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নীচে তাদের রাত কাটাতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
আপদকালীন সাহায্য
ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই শরণার্থীদের অনেকে প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন৷ প্রায় সহায়সম্বলহীন এই মানুষগুলির জন্য টিহুয়ানা শহরে খাদ্যের ব্যবস্থা করেন সাহায্যকারীরা৷ অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হবে, এমন আশায় অপেক্ষা করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamayo
টিহুয়ানায় আগমন
২০১০ সাল থেকে ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠন শরণার্থীদের এই ‘ক্যারাভ্যান’ আয়োজন করে আসছে৷ এভাবে তারা অভিবাসীদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়৷ মার্কিন কর্তৃপক্ষ অবশ্য খুব কম মানুষকে সে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Duenes
হিংসালীলা থেকে দূরে
মূলত হন্ডুরাস, এল সালভাদোর ও নিকারাগুয়া থেকেই বেশিরভাগ মানুষ এই যাত্রায় যোগ দেন৷ তাঁদের অনেকেই নিজেদের দেশে স্থানীয় মাফিয়ার হত্যার হুমকি, জোর করে অর্থ আদায় ও হিংসার শিকার হয়েছেন৷ রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনাও বিরল নয়৷
ছবি: Getty Images/D. McNew
কূটনৈতিক সংকট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে ন্যাশানাল গার্ড বাহিনীকে সীমান্তে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অ্যামেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে কূটনৈতিক সংকটের ফলে উদ্যোক্তারা যাত্রা বন্ধ করে দেন৷ তবে প্রায় ৬০০ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে টিহুয়ানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Heng
মরিয়া প্রচেষ্টা
কয়েকজন শরণার্থী মরিয়া হয়ে সীমান্তের কাঁটাতার পেরোনোর চেষ্টা করেছেন৷ ‘পুয়েবলো সিন ফ্রন্তেরাস’ সংগঠনের এক সদস্যের মতে, এই শরণার্থীরা যে অপরাধী বা সন্ত্রাসবাদী নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তা দেখিয়ে দিতে চান তাঁরা৷ তাঁর মতে, ভয়ভীতি ছাড়া বাঁচার তাগিদেই মানুষ এমন কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Tamajo
সাফল্যের সম্ভাবনা কম
বেশিরভাগ শরণার্থীর জন্য অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে সত্যি কম৷ একটি সূত্র অনুযায়ী গত বছর মার্কিন কর্তৃপক্ষ এল সালভাদোর, হন্ডুরাস ও গুয়াতেমালার ৭৫ থেকে ৭৯ শতাংশ শরণার্থীদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ
যাবতীয় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষ মার্কিন সীমান্তে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত৷ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ আরও মানুষকে প্রবেশ করতে দেবে, তাদের মনে এই আশা ও প্রার্থনা কাজ করে৷ সেই সুযোগ পেলে তবেই আশ্রয়ের আবেদন করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/E. Garrido
9 ছবি1 | 9
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্তরে ক্ষমতা বণ্টনের প্রশ্নে সর্বোচ্চ আদালত জোরালো অবস্থান নিতে পারে৷ তখন পরিকল্পিত সরকারি ব্যয় অনুমোদনের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতেই রাখার রায় দিলে প্রেসিডেন্ট এমন বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না৷
রবিবারই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল৷ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল সেভিয়ার বেসেরা এ দিন বলেন, ফেডারেল সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্যালিফোর্নিয়াসহ একাধিক রাজ্যের মানুষ সামরিক প্রকল্প, বিপর্যয়ের সময়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ ও অন্যান্য তহবিল থেকে বঞ্চিত হতে পারে৷ বেসেরা বলেন, ট্রাম্প নিজে স্বীকার করেছেন যে জরুরি অবস্থা ঘোষণার কোনো কারণ নেই৷
রিপাবলিকান দলের মধ্যেও ট্রাম্প বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷ সমালোচকদের আশঙ্কা, এমন দৃষ্টান্তকে সম্বল করে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টরাও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে জাতীয় স্তরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন৷
সীমান্তে প্রাচীর গড়ার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে একাধিক আইনি পদক্ষেপের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ প্রস্তাবিত প্রাচীর গড়া হলে জমি হারানোর আশঙ্কায় মামলা করেছেন টেক্সাস রাজ্যের ৩ ব্যক্তি৷ এক পরিবেশ সংগঠনও শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ এনেছে৷