ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাশিয়া-কেলেঙ্কারির জের ধরে চাপের মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য ফাঁস হবার পর ওয়াশিংটনে অস্থিরতা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, ট্রাম্প-টিমের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই তদন্তে বাধা দিয়েছেন কিনা, এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তদন্ত করছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান রবার্ট মালার৷ সংবাদ মাধ্যমের আঁচ থেকে দূরে নীরবে কাজ করে চলেছেন তিনি৷ কিন্তু ট্রাম্প নিজে বিষয়টি নিয়ে যে চরম অস্বস্তিতে ভুগছেন, থেকে থেকে সেই ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে৷ মঙ্গলবার তাঁর টুইট বার্তায় আবার তা স্পষ্ট হয়ে গেল৷ তথ্য ফাঁসের নিন্দা করে ট্রাম্প লিখেছেন, যে অপরাধ ঘটেই নি তার তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার প্রশ্নই ওঠে না৷
তদন্ত সম্পর্কে তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার কারণে ট্রাম্প এবার বেজায় চটেছেন৷ ট্রাম্প-এর প্রাক্তন আইনজীবী জন ডোড সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের কাছে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন৷ তাঁর দাবি, গত মার্চ মাসে ট্রাম্প-এর আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে মালার বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছায় জেরার মুখে পড়তে না চাইলে তিনি প্রেসিডেন্টকে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করবেন৷
শুধু জন ডোড নয়, ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও ৪ জনকে উদ্ধৃত করে আগেই এমন দাবি করেছিল৷ তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালার-এর সঙ্গে ট্রাম্প টিমের দরকষাকষি চলছিল৷ শেষ পর্যন্ত মালার-এর টিম ট্রাম্প-কে জেরার বিষয়গুলি আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে৷ তার ভিত্তিতে ট্রাম্প-এর আরেক আইনজীবী ভেবেচিন্তে মোট ৪৯টি সম্ভাব্য প্রশ্নের খসড়া তৈরি করেন বলে দাবি করা হচ্ছে৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রও সোমবার সেই মর্মে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ ট্রাম্প-এর আইনজীবীদের টিমের বাইরের কোনো ব্যক্তি তাদের এই খবর দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷
শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরার মুখোমুখি হয়ে এই সব প্রশ্নের জবাব দেবেন কিনা, হোয়াইট হাউস সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি৷ ট্রাম্প নিজে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও টুইট বার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি সম্পর্কে এত পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখছেন, মালার সেগুলোর ভিত্তিতেও প্রশ্ন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নগুলির বাইরেও তিনি ট্রাম্প-কে অন্য বিষয়েও জেরা করতে চান কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ মালার-এর দপ্তর গোটা বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করে নি৷
তদন্তের মুখে ট্রাম্প এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার ফলে তাঁর নিজের অবস্থান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে যুক্ত তাঁর সহযোগীদের অনেককেই দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ আইনজীবীদের টিমেও বার বার রদবদল করে অনেকের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প৷ এই অবস্থায় তাঁর সরাসরি প্রভাব থেকে দূরে চলে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে মুখ খুলছেন, তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছেন৷
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের কথা জানা গেল যেভাবে
গতবছর মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ক্রেমলিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চলছে৷ সম্প্রতি একাধিক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও জানিয়েছে যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চেয়েছিল রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Lei
২০১৩: রাশিয়ায় ট্রাম্প
২০১৩ সালের ১৮ জুন ট্রাম্প টুইট করেন, ‘‘নভেম্বরের ৯ তারিখ মিস ইউনিভার্স প্যাজেন্ট রাশিয়ার মস্কো থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷ একটি বড় চুক্তি যা আমাদের দেশগুলোর মিলন ঘটাবে৷’’ পরবর্তীতে তিনি আরো লেখেন যে, ‘‘আপনাদের কি মনে হয় পুটিন (অনুষ্ঠানে) আসবে, যদি আসেন, তাহলে কি তিনি আমার নতুন বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন?’’ সেবছর এক চ্যাট শোতে ট্রাম্প জানান যে, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর অনেক ব্যবসা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Prokofyev
সেপ্টেম্বর ২০১৫: হ্যাকিংয়ের অভিযোগ
এক এফবিআই এজেন্ট ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) এক তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তা দেয়া কন্ট্রাক্টরকে জানান যে, ডিএনসি সম্ভবত হ্যাকড হয়েছে৷ ২০১৬ সালের ১৪ জুন, ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে জানায় যে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাজটা করেছে৷
ছবি: picture alliance/MAXPPP/R. Brunel
জুলাই ২২, ২০১৬: আসাঞ্জ জানালেন আরো বিস্তারিত
জুলিয়ান আসাঞ্জের উইকিলিক্স ডিএনসি থেকে চুরি যাওয়া ২০,০০০ ইমেল প্রকাশ করে যাতে দেখা যায় যে সিনেটর বার্নি সেন্ডারসের চেয়ে হিলারি ক্লিন্টনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/N. Hall
জুলাই ২৫, ২০১৬: তদন্তে এফবিআই
এফবিআই ঘোষণা দেয় যে ডিএনসি হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি৷ হ্যাকিংয়ের ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়ার কারণ রয়েছে বলেও জানায় এফবিআই৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
নভেম্বর ৮, ২০১৬: জিতলেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই খবর শুনে রাশিয়ার সংসদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নভেম্বর ১০, ২০১৬: রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার
রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের যোগাযোগ ছিল বলে জানান রাশিয়ার উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিবাকভ৷ তবে ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন একথা অস্বীকার করে৷
ছবি: Imago/Itar-Tass
মার্চ ২০, ২০১৭: ট্রাম্প-ক্রিমলিন যোগাযোগ তদন্তে করছে এফবিআই
এফবিআই পরিচালক জেমস কমি ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত হাউস সিলেক্ট কমিটিকে নিশ্চিত করেন যে রাশিয়া এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্কের বিষয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/J. S. Applewhite
মে ৯, ২০১৭: কমিকে চাকুরিচ্যুত করলেন ট্রাম্প
কমিকে দেয়া ইস্তফা পত্রে ট্রাম্প লিখেছিলেন: ‘‘যদি আমি এটার প্রশংসা করি যে, আপনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে জানিয়েছেন যে, আমাকে নিয়ে কোন তদন্ত হচ্ছে না, তাসত্ত্বেও আমি জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, আপনি এফবিআই কার্যকরভাবে পরিচালনায় সক্ষম নন৷’’
ছবি: Reuters/J. Ernst/K. Lamarque
সেপ্টেম্বর ২০১৭: সিনেট কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প জুনিয়র
ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে জানান যে, বিদেশি কোনো সরকারের সঙ্গে কোনো আঁতাত করেননি তিনি৷ কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২০১৬ সালের জুনে ট্রাম্প জুনিয়র এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেরড কুশনার ও ক্যাম্পেইন ম্যানেজার পাউল মানাফোর্টের সঙ্গে রাশিয়ান আইনজীবী নাটালিয়া ভেসেলনিৎসকায়ার সাক্ষাতের বিষয়ে আলোচনা হয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগল মার্কিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়া এ সব প্লাটফর্মের অপব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে৷ কোম্পানি তিনটি নভেম্বরে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির মুখোমুখি হতে পারে৷