প্রত্যর্পণ বিল স্থগিত করার পর এবার হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তবে, হংকংয়ের কেন্দ্রীয় সরকার চীন তাঁর পদত্যাগের পক্ষে নেই বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
বিজ্ঞাপন
আগের দিন প্রায় ২০ লাখ লোকের বিক্ষোভের পর সোমবারও রাস্তায় নামে হংকংয়ের হাজার হাজার মানুষ৷ শুরুতে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও পুলিশের অনুরোধে রাস্তা ছেড়ে দেন তাঁরা৷
এরপর ক্যারি লামের কার্যালয়ের সামনে সরে গিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা৷ এ সময় পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা৷
এর মধ্যে বিকেলে হংকংয়ের তরুণ নেতা জোসুয়া ওংকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হলে নতুন মাত্রা পায় চলমান বিক্ষোভ৷ ২০১৪ সালে হংকংয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের পর ওই ‘আন্দোলনের মুখ' ওংয়ের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
ওই অভিযোগে এক মাস আগে তাঁকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল৷ সাম্প্রতিক বিক্ষোভের কারণে সাজার মেয়াদ এক মাস বাকি থাকতেই সোমবার মুক্তি পেলেন তিনি৷ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সরাসরি নগর কার্যালয়ের সামনের বিক্ষোভে যোগ দেন ওং৷
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মিলে এই তরুণ নেতাও ক্যারি লামের পদত্যাগের দাবি জানান৷ ‘‘আমব্রেলা মুভমেন্টের পর বলেছিলাম, আমরা আবারও রাস্তায় ফিরব৷ শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছর পর আমরা ঠিকই এসেছি,'' সেখানে বলেন তিনি৷
ওং আরো বলেন, ‘‘এটা সৌভাগ্যের যে, বেইজিং আর ক্যারি লাম একটি তরুণ প্রজন্মকে সাধারণ নাগরিক থেকে তাদের বিরোধী হিসাবে রূপান্তরিত করেছে৷ এর মূল্য বেইজিংকে পরিশোধ করতেই হবে৷''
২০১৪ সালে ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট' নাম পাওয়া আন্দোলনে টানা এক সপ্তাহ হংকংয়ের রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন হাজার হাজার মানুষ৷ সে সময় সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচনের পথ বন্ধ করার জন্য হতে চলা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন তারা৷
টয়লেটের ভেতরেই রান্নাঘর!
একসঙ্গে পায়খানা আর রান্নাঘর? হংকংয়ে সেটা কোনো দুঃস্বপ্ন নয়, বরং নির্মম বাস্তব৷ সব দৃষ্টিকোণ থেকেই হংকংয়ে জায়গার অভাব, কাজেই সেখানে মানুষকে যেভাবে মাথা গুঁজে থাকতে হয়, তা অবর্ণনীয়৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
রান্না করতে হলে...
বাঁ-দিকে প্রথমে টয়লেট; তার পাশে কিচেন সিংক, যার ওপর আবার মাংস বা শাকসবজি কাটার জায়গা; তার পাশে হটপ্লেট ও কড়াই, যেখানে রান্না হবে৷ ডানদিকে ওয়াশিং মেশিন, রাইস-কুকার ইত্যাদি৷ হংকংয়ের এই খুপরি ফ্ল্যাটে বাস, সেথা দম নেওয়াতেই নাভিশ্বাস...
ছবি: Benny Lam & SoCo
বাসস্থান, নাকি মালগুদাম?
ক্যানাডার আলোকচিত্রী বেনি ল্যাম একটি দারিদ্র্য দূরীকরণ এনজিও-র হয়ে হংকংয়ে মানুষজন কিভাবে বাস করেন তা দেখাতে এই ছবিগুলো তোলেন৷ খেয়াল রাখবেন: টেলিভিশন, বিয়ারের ক্যান বা টয়লেট পেপার, একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার কোনো আনুষঙ্গিকই বাকি নেই – এমনকি দেয়ালে ফুটবলের পোস্টার অবধি৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
ছিল বাথরুম, হয়েছে রান্নাঘর
যেন সুকুমার রায়ের হাঁসজারুর কোনো আধুনিক সংস্করণ! হংকংয়ের জনসংখ্যা ৭৫ লাখ ছাড়িয়েছে, অথচ আর বাড়ি তৈরির কোনো জায়গা নেই বললেই চলে৷ কাজেই ফ্ল্যাট বা বাড়ির ভাড়া ও দাম আকাশে চড়েছে৷ সাধে কি আবাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে হংকং বিশ্বের সবচেয়ে মহার্ঘ শহরগুলির মধ্যে পড়ে!
ছবি: Benny Lam & SoCo
স্টার ওয়ার্স থেকে স্মার্টফোন
কথায় বলে, যদি হয় সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন৷ আজকাল আর তেঁতুলপাতায় ন’জনকে ধরাতে হয় না, তবে জিনিসপত্র ধরাতে হয় বৈকি৷ কাজেই দেয়াল থেকে ব্যাগের পর ব্যাগ ঝোলে৷ হংকংয়ে নাকি ৮৮,০০০ এ ধরনের ফ্ল্যাট বা খোঁদল কিংবা গুদামঘরে লাখ দুয়েক মানুষ বাস করছেন৷ এরা গৃহহারা নন, চাকরিবাকরিও আছে৷ কিন্তু সে চাকরিতে এই খোঁদলের বেশি মাথা গোঁজার স্থান হয় না৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
দুই দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে...
সাজিয়ে নিয়ে দেখি শি জিনপিং-কে৷ ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে হংকংয়ের কেন্দ্রীয় এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম দ্বিগুণ হয়ে বর্গমিটার পিছু প্রায় ১৪ হাজার ডলার কিংবা ১১ হাজার ইউরোতে দাঁড়ায়৷ কাজেই বহু খেটে খাওয়া মানুষ হংকংয়ে বাস করেন মুক্ত প্রকৃতিতে জীবজন্তুদের মতো: মাথা গোঁজার জায়গা হলেই হলো৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
তোষকের সাইজের ফ্ল্যাট
তার ওপর শুয়ে ক্যান থেকে বিনস খেতে খেতে টেলিভিশন দেখতেই বা আপত্তি কি? ডানদিকে নিয়ন লাইটের টিউবটাও খেয়াল করবেন৷ জানলা-দরজা নেই তো কী হয়েছে? ছারপোকা আর আরশোলা, নিখর্চায় দুই’ই পাচ্ছেন...
ছবি: Benny Lam & SoCo
খাঁচা, নাকি শবাধার?
হংকংয়ের লোকজন এ ধরনের ফ্ল্যাটগুলিকে ঐ নামেই ডেকে থাকে৷ হংকংয়েও ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ তবে সুবিশাল শপিং মল, অভিজাত হোটেল আর বহুতল আবাসিক ভবনের সঙ্গে এই খাঁচা বা কফিনগুলোর তফাৎ বোধহয় তার চেয়েও বেশি৷ মুম্বাই সম্পর্কে এককালে বলা হতো, সেখানে জায়গা থাকে শুধু বাসিন্দাদের হৃদয়ে৷ হংকং-এর ক্ষেত্রেও কি তা বলা উচিত?
ছবি: Benny Lam & SoCo
ডিম আগে, না মুরগি আগে?
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ছিল বাথরুম, হয়েছে রান্নাঘর৷ তবে সাধ করে নয়৷ হংকংয়ে সরকারি আবাসন পেতে নাকি গড়ে বছর পাঁচেক সময় লাগে৷ আর একা মানুষ হলে, দশ বছরের বেশি অপেক্ষা করাটাও নাকি অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ এই পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাটের বদলে শুধু বাথরুমটা ভাড়া দিতে চাইলেও ভাড়াটের কোনো অভাব হয় না৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
বাঁচার তাগিদ
রাইস-কুকারের পাশেই ওয়াশিং মেশিন; তার তলায় বাক্সপ্যাঁটরা; তার তলায় বিছানা...৷ জাতিসংঘ হংকংয়ের এই খাঁচা বা কফিন ফ্ল্যাটগুলোকে বলেছে ‘মানব মর্যাদার প্রতি অবমাননা৷’ হংকং সরকার বলছেন, ২০১৭ সালের মধ্যে আরো দু’লাখ আশি হাজার সরকারি ফ্ল্যাট তৈরি হবে৷ তখন কি এই খাঁচা বা কফিনগুলো খালি পড়ে থাকবে? সাধে কি কবি বলেছেন, জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা...৷
ছবি: Benny Lam & SoCo
9 ছবি1 | 9
৯ জুন বন্দি প্রত্যর্পণ বিল প্রস্তাব করার পর থেকেই হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ চীনের প্রস্তাব করা এ বিলটি নিয়ে গত বুধবার সকালে সংসদে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল৷ আইনটি পাস হলে চীন, তাইওয়ান ও ম্যাকাওয়ে আদালত আদেশের মাধ্যমে কোনো অভিযুক্তকে সেসব দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে হংকং৷
বিক্ষোভে ও সংঘর্ষের মধ্যে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিলটি পাসের উদ্যোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন ক্যারি লাম৷ বিলটি পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে৷
১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে শহরের দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তরের পর প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভটিই ছিল সবচেয়ে বড়৷
‘লামকে পদত্যাগ করতে দেবে না চীন'
এদিকে ক্যারি লাম পদত্যাগ করতে চাইলেও চীন তা ‘হতে দেবে না‘ বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একজনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷
হংকং স্বায়ত্বশাসনে চললেও ক্যারি লামের বিরুদ্ধে চীনের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে বিরোধীরা৷
বিক্ষোভের কারণে লাম সরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তার বরাতে জানায় রয়টার্স৷ ‘‘তবে এটা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না,'' রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘‘তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা মনোনীত৷ এ কারণে তাঁর পদত্যাগের জন্য উচ্চপর্যায়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন৷‘‘