করোনার প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে জার্মানি৷ আরো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র খোলা, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নতুন নিয়ম চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে৷ বাতিল হয়েছে অক্টোবর ফেস্ট৷ বড়দিনের উৎসবের কী হবে?
বিজ্ঞাপন
জার্মানির আবহাওয়া এখন সুন্দর থাকায় সাধারণ মানুষ শীতকাল নিয়ে তেমন ভাবছেন না৷ তবে শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং এ নিয়ে কী করা যায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ গত চার সপ্তাহ ধরে সারাদেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে৷
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সেসব দেশ আবার নতুন করে লকডাউনের কথা বিবেচনা করছে৷ শীতকালে কিভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে জার্মান আইন প্রণেতারাও চিন্তাভাবনা করে এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পান সোমবার শীতে করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুতগতিতে করোনা টেস্ট এবং জ্বর মাপার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার পরিকল্পনার কথা বলেন৷ অন্যান্য ক্লিনিকে রোগীর চাপ কমিয়ে আলাদাভাবে করোনা টেস্ট করা হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ জার্মান দৈনিক রাইনিশে পোস্টকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে তাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চার সপ্তাহের মধ্যে খুব ভালোভাবে করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম৷
বার্লিনে করোনার ঝুঁকি দূরে রেখে আলোর উৎসব
প্রতি বছরের মতো এবারও বার্লিনে শুরু হয়েছে ‘ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস’৷ করোনা সংকট এই উৎসবে যোগ করেছে কিছু ভিন্নতা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
ব্রান্ডেনবুর্গ গেট
১৫ বছর পেরিয়ে এ বছর বার্লিনের ‘ফেস্টিভ্যাল অফ লাইটস’ পা দিলো ১৬ বছরে৷ এই উৎসবের মূলে থাকে শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান৷ এৱ মধ্যে অবশ্যই রয়েছে বিখ্যাত ব্রান্ডেনবুর্গ গেট৷ আলো দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেড়ে গেলে কিছুক্ষণের জন্য আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভিড় কম হয়৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
জাদুঘরের সমাহার যেখানে...
জার্মানির সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য বার্লিনের এই টিভি টাওয়ার৷ আলোর উৎসব থেকে বাদ পড়েনি এটিও৷ বেশ কিছু জাদুঘর রয়েছে শহরের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’ অঞ্চলে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সচেতনতা প্রকল্পের আওতায় এবার টিভি টাওয়ারসহ বেশ কিছু স্থাপত্যের গায়ে জ্বলবে কমলা আলো৷ এই আলো বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতার প্রতীক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
বার্লিন ক্যাথিড্রাল
মিউজিয়াম আইল্যান্ডের অদূরে বার্লিন ক্যাথিড্রাল৷ বেশ কিছুদিন ধরে সংস্কার কাজ চলছিল সেখানে৷ সেখানেও চলছে আলোর উৎসব৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
বেবেলপ্লাৎজ
ঐতিহ্যবাহী বেবেলপ্লাৎজে হাঁটলে মনে হবে যেন কোনো অসাধারণ শিল্পকর্মের মাঝখানে হেঁটে বেড়াচ্ছেন৷ এবারের উৎসবের ‘একসাথে জ্বলবো আমরা’ স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে সেজে উঠেছে বেবেলপ্লাৎজের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট অপেরা ও বিখ্যাত হোটেল ডে রোম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
অপেরা
জার্মানি-ইসরায়েল সম্পর্কের ৫৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইসরায়েল দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আলোকিত করা হয়েছে বার্লিন স্টেট অপেরাকে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
হোটেল ডে রোম
উনিশ শতকের শেষের দিকে তৈরি হওয়া এই বাড়িটি যাত্রা শুরু করে ড্রেসডেনার ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে৷ পরে ২০০৬ থেকে এটি অবশ্য হোটেল৷ এর মূল আকর্ষণ ছাদ থেকে পাওয়া বার্লিনের অসামান্য চিত্র, যা এই আলোর উৎসবের সময়ে পর্যটকদের নজর কাড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/S. Yuqi
হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ
বেবেলপ্লাৎজের অন্যতম অংশ হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ভবন৷ আঠারো শতাব্দীতে এই বাড়িটি তৈরির নির্দেশ দেন প্রাশিয়ান রাজা ফ্রেডেরিক৷ ১৯৬৯ সালে হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ভবনের মর্যাদা পাবার আগ পর্যন্ত এটি ছিল পাঠাগার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বাদ যায়নি
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনটিও সেজেছে উৎসবের আলোয়৷ সহনশীলতা ও সামাজিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে এবারের আলোর ডিজাইন বেছে নিয়েছেন চিত্রশিল্পী কার্স্টেন জান্ডের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chr. Gateau
শার্লটেনবুর্গ প্রাসাদ
করোনা সংকটের মাঝে মানুষের ভিড় যাতে শহরের একটি অংশেই সীমিত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে এই উৎসবকে শহরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ শহরের কেন্দ্র থেকে একটু দূরের শার্লটেনবুর্গ প্রাসাদ ও বের্গগ্রুয়েন জাদুঘরের আলোর সাজ সেই উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
পটসডামার প্লাৎজ
প্রতি বছরের মতো এবারও আলোর উৎসবের প্রাণকেন্দ্র বার্লিনের পটসডামের প্লাৎজ৷ এবারের আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বিশাল এক ‘লাভ সাইন’, যা অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী জারা পাসফিল্ডের সৃষ্টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
10 ছবি1 | 10
স্পান শীতের জন্য করোনা পরীক্ষার নতুন কৌশলগুলো নিয়ে অক্টোবরে মাসে জার্মানির ১৬টি রাজ্যের প্রধানদের সাথে আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘এ বছরের শুরুতে করোনার বিরুদ্ধে আমাদের যেমন প্রস্তুতি ছিল, এখন আমরা তার চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত৷’’
করোনার বিস্তার রোধে জার্মানির বিশ্ব খ্যাত অক্টোবরফেস্ট বাতিল করা হয়েছে অনেক আগেই৷ জার্মানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন৷ এবং বড়দিনকে ঘিরে হয়ে থাকে ক্রিসমাস বাজারসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন৷
জার্মানির বাভারিয়ার মুখ্যমন্ত্রী স্যোয়ডার সোমবার বলেন, ক্রিসমাস বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ সুরক্ষিত করা এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলে ক্রিসমাস মার্কেট করা যেতে পারে৷
এ বিষয়ে থুরিঙ্গেনের মুখ্যমন্ত্রী বোডো রামেলো বলেন, বড়দিনের বাজার আরো ছোট আকারে করা যেতে পারে৷
সারল্যান্ডের মূখ্যমন্ত্রী টোবিয়াস হান্সও এ বছর ক্রিসমাস বাজারের আয়োজন করার পক্ষে৷ তবে তিনি সেখানে অ্যালকোহল পান সীমিত করা উচিত বলে মনে করেন৷
অনেক সাংসদের আশঙ্কা, অতিরিক্ত মদ্য পানের পর সামাজিক দূরত্ব বা অন্যান্য করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলা সম্ভব নয়৷
এলিয়ট ডগলাস/এনএস
গত ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
ইউরোপের দশটি আকর্ষণীয় ক্রিসমাস মার্কেট
ক্রিসমাস মার্কেটের ধারণাটি মূলত জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলের হলেও এখন গোটা ইউরোপেই এই প্রবণতা দেখা যায়৷ এসব শহরের মানুষের জন্য তা এখন বছরের সবচেয়ে উৎসবময় আয়োজনে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Gören Assner
ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় যাত্রা শুরু হয়েছিল ১২৯৬ সালে৷ তখন নাম ছিল ডিসেম্বর মার্কেট৷ সেটি এখন পরিণত হয়েছে তিন হাজার বর্গ মিটার আয়তনের ক্রিসমাস মার্কেটে৷ অপূর্ব আলোকসজ্জায় পার্কের মধ্য দিয়ে কেনাকাটাটি বেশ উপভোগ্যই হয়ে ওঠে৷
ছবি: Stadt Wien Marketing
প্রাগ, চেক রিপাবলিক
পুরাতন প্রাগ শহরের ঠিক কেন্দ্রস্থলে এই আয়োজনটি হয়৷ বিশাল এক ক্রিসমাস ট্রি আর তাতে লাগানো হাজারো বাতির আলোয় অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে সেখানে৷ চেকদের খাবার, শিল্পকলা, কাঁচের গহনা কিংবা কাঠের খেলনা সবকিছুরই দেখা মিলবে এই মার্কেটে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/V. Wolf
স্ট্রাসবুর্গ, ফ্রান্স
ফ্রান্সের এই আয়োজন ঠিক একটি স্থানে নয়, শহরের ১২ টি জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে৷ এ কারণে এই শহরকে ক্রিসমাস ক্যাপিটাল বলেও ডাকে অনেকে৷ স্ট্রাসবুর্গে ১৫৭০ সাল থেকে এই আয়োজনের কথা জানা যায়, যা এটিকে ফ্রান্সের সবচেয়ে পুরাতন ক্রিসমাস মার্কেটে পরিণত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Hertzog
মস্কো, রাশিয়া
স্ট্রাসবুর্গের মানুষ তাদের এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়াতেও৷ রাজধানী মস্কোতে ২০১২ সালে তারা ক্রিসমাস মার্কেটের প্রচলন করেছে৷ এটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে এখন শহরের একাধিক জায়গায় ক্রিসমাস মার্কেটের দেখা মেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Thiele
গোথেনবুর্গ, সুইডেন
সুইডেনের সবচেয় বড় ক্রিসমাস মার্কেটটি বসে গোথেনবুর্গের লিসবার্গ বিনোদন পার্কে৷ শত বা হাজার নয় রং-বেরঙ্গের ৫০ লাখ বাতিতে আলো ঝলমলে হয়ে ওঠে এই মার্কেট৷ সেখানে পাওয়া যায় দেশটির কুটির শিল্প আর ঐতিহ্যবাহী সব পণ্য৷
ছবি: Gören Assner
মাসট্রিখট, নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের মধ্যযুগীয় শহর মাসট্রিখট৷ তার কেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী খোলা চত্ত্বরেই বসে ক্রিসমাস মার্কেট৷ বিশাল চরকি, কৃত্রিম বরফ স্কেটিং সব মিলিয়ে আয়োজনটির জন্য যথাযথ জায়গা এটি৷
ছবি: NBTC
লন্ডন, গ্রেট ব্রিটেন
বরফের ভাস্কর্য আপনাকে নিয়ে যাবে ১৯ শতকের লন্ডনে, থাকবে আইস স্কেটিং শো, সার্কাস উপভোগের সুযোগসহ বিভিন্ন রাইড৷ ক্রিসমাস মার্কেটের এই আয়োজনটি হয় লন্ডনের হাইড পার্কের উইনটার ওয়ানডারল্যান্ডে৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Alexander
এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
এডিনবার্গের প্রিন্সেস স্ট্রিট৷ শহরের প্রাণকেন্দ্রেই এর অবস্থান৷ তবে ক্রিসমাস মার্কেটের দোকান, রাইডগুলো রাস্তা ছাড়িয়ে জায়গা করে নেয় পার্কেও৷ জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খাবার উপভোগের সুযোগ মেলে সেখানে৷
ছবি: CC BY-NC-ND 2.0/Ross G. Strachan
জাগরেব, ক্রোয়েশিয়া
ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী শহর গোটাটাই যেন পরিণত হয় ক্রিসমাস মার্কেটে৷ যেমন, এই ছবিতে একটি সড়কটি৷ দুপাশের কয়কশ’ গাছ থেকে বেরিয়ে আসা আলোর ঝরনা আপনাকে মুগ্ধ করবে৷
ছবি: europeanbestdestinations.com
বার্লিন, জার্মানি
ঐতিহাসিক একটি থিয়েটার আর এবং গির্জাকে পটভূমিতে রেখে সেজেছে বার্লিনের এই মার্কেটটি৷ সচরাচর এ ধরনের সব আয়োজনেই কোনো-না-কোনো রাইড থাকে৷ তবে ব্যাতিক্রম বার্লিনের এই মার্কেট৷ তার বদলে এখানকার মঞ্চে নিত্যদিনই উপভোগ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে৷