যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রের রহস্যমৃত্যু নিয়ে যখন উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, তখন খড়্গপুর আইআইটির এক গবেষকের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার রাতে খড়্গপুর আইআইটি-তে সূর্য দীপান নামে এক গবেষকের দেহ উদ্ধার হয়। আর কে হল থেকে তার দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ তার দেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সূর্য কেরালার ছেলে। মাস তিনেক আগে সে গবেষণার জন্য খড়্গপুরে এসেছিল। পুলিশ তার পরিবারের কাছে খবর পাঠিয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে তারা।
ফায়জান আহমেদের মৃত্যু
খড়্গপুর আইআইটিতেই মাস সাতেক আগে ফয়জান আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু ঘিরেও প্রচুর প্রশ্ন ছিল।
আইআইটির একটি হস্টেল থেকে ফয়জান আহমেদের দেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ফয়জান আসাম থেকে এসেছিলেন।
প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, র্যাগিংয়ের কারণেই ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। তারপর এই মৃত্যু নিয়ে মামলা হয়। আদালত তার দেহ আবার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার ও আইআইটি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ আইনি লড়াই চলে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছাত্র মৃত্যু
শিক্ষাক্ষেত্রে দেশের অগ্রণী বিশ্ববিদ্যালয় হলো যাদবপুর। ছাত্র মৃত্যুর পর এখন তা সবচেয়ে বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ ঘটনা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকায় দেশের পাঁচ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঘটে যাওয়া এক মৃত্যু নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় রাজ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক পড়ুয়ার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পড়ুয়াদের দাবি
হস্টেলের অন্য পড়ুয়াদের দাবি, ৯ অগস্ট, বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তারা ওপর থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পান। তারা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক ছাত্র। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ মৃত্যু হয় ওই ছাত্রের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য
এর পর ধীরে ধীরে এই মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়ে উঠেছে রহস্য। মৃত ছাত্র হস্টেলের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে? তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গেটে তালা
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতে মৃত্যুর আগে ওই ছাত্রের আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তেমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই ছাত্র নাকি বার বার বলছিলেন, ‘‘আমি সমকামী নই।” ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর একটা গেটে তালা পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘প্রাক্তনীদের মৌরসীপাট্টা’
এরপর পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই গোটা ঘটনায় আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। আঙুল উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ‘বেআইনিভাবে’ থেকে যাওয়া প্রাক্তনীদের দিকে। ছাত্রদের একাংশের দাবি, হোস্টেলে ‘র্যাগিং’-এর নেপথ্যে রয়েছেন মূলত তারাই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডায়রির পাতা
পড়ুয়া্দের অনেকেই জানিয়েছেন, এই প্রাক্তনীরা প্রায়ই হস্টেলে মত্ত অবস্থায় ঝামেলা করেন। র্যাগিং করেন। আশঙ্কা, ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যেও প্রাক্তনীদের হাত থাকতে পারে। এরই মধ্যে সামনে এসেছে মৃত ছাত্রের ডায়েরিতে লেখা একটি চিঠি। সন্দেহ করা হচ্ছে তার মৃত্যু রহস্যের মোড় অন্যপথে চালিত করতেই এই চিঠির অবতারণা। পুলিশি জেরায় চিঠি লেখার কথা স্বীকার করেছেন ধৃত পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নয়জন গ্রেপ্তার
পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরী গ্রেপ্তার হন। এর পর রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার আরও ছয়জন পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
‘র্যাগিং নতুন কিছু নয়’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ঘটা করে তৈরি হয় ‘অ্যান্টি-র্যাগিং’ কমিটিও। এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছে। বিবৃতি প্রকাশ করে তাঁদের প্রশ্ন, হস্টেলের সুপারের উপস্থিতিতে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল। যাদবপুর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পকসো
যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যু মামলায় তদন্তকারী পুলিশ জানিয়েছে তারা পকসো আইনের ধারা জুড়তে পারে। কারণ যাদবপুরের মৃত ছাত্রের বয়স মৃত্যুর সময় ১৮ পূর্ণ হয়নি বলে পরিবার সূত্রে খবর। সে ক্ষেত্রে ওই ছাত্র নাবালক। এবং তার বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের অভিযোগে নাবালকের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনের আইন পকসো জুড়বে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেঁদেই ফেলেন রেজিস্ট্রার
ঘটনার চার দিন পর অবশেষে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি ক্যাম্পাসে আসতেই তাকে প্রশ্ন করা হয়, এতদিন কোথায় ছিলেন? ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না কেন? সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েই কেঁদে ফেলেন রেজিস্ট্রার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কমিশনের নোটিস
সোমবারই ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত এই নোটিসে কমিশন জানায়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনার আগে ডিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মৃত ছাত্রের সহ-আবাসিকেরা। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাবেক উপাচার্যের মত
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী এক সংবাদপত্রে কলম ধরেছেন। লিখেছেন, “আমি ইস্তফা দেওয়ার পরেই যাদবপুরে অরাজকতার কালো দিনের সূচনা। আমার মনে হয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় খাপ পঞ্চায়েতের আদলে চলে। সেখানে ‘জিবি মিটিং’ এবং নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনের খাতিরে আধিকারিক ও উপাচার্যকে ‘ঘেরাও’ করা দু’টি প্রচলিত ‘রীতি’।”
ছবি: Subrata Goswami/DW
রেজিস্ট্রারকে তলব
যাদবপুরকাণ্ডে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ডেকে পাঠানো হয় লালবাজারে। সেই মতো রেজিস্ট্রার বিকেলে হাজিরা দিলেও যাননি ডিন। পুলিশ সূত্রে খবর, পড়ুয়ারা ‘ঘেরাও’ করে রাখার কারণে তিনি লালবাজারে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উত্তাপ বাড়ছে
বুধবার উত্তপ্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সঙ্গে বচসা এবং হাতাহাতি হয় এআইডিএসও-র সমর্থকদের। মৃত ছাত্রের এলাকা বগুলা থেকেও বহু মানুষের প্রতিবাদ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
আদালত জানিয়েছে, আইপিএস অফিসার কে জয়রামনের নেতৃত্বে তদন্ত চলবে। আদালতই তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠন করেছে। রাজ্য সরকার এর বিরোধিতা করেছিল।
যাদবপুর-কাণ্ডে আরো ধৃত
যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জেরা করা হয়েছে। তাদের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্র সপ্তক কামিল্যাকে যাদবপুরের হস্টেলে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে সেদিনের ঘটনার পুর্নির্মাণ করা হবে। ধৃত সব ছাত্রকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করা হবে।
তবে যাদবপুরের পাশাপাশি খড়্গপুরেও একাধিক ছাত্রের রহস্যমৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা নিরাপদ?