৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তৃতীয় দফা নির্দেশনায় আবার ৫৪টি বন্ধ রাখা হয়েছে ৪টি খুলে দেওয়ার মাধ্যমে৷ খুলে দেওয়া চার নিউজ পোর্টাল হচ্ছে ঢাকা টাইমস২৪, প্রিয় ডটকম, রাইজিং বিডি ও পরির্বতন ডটকম৷
বিজ্ঞাপন
৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তৃতীয় দফা নির্দেশনায় আবার ৫৪টি বন্ধ রাখা হয়েছে ৪টি খুলে দেওয়ার মাধ্যমে৷ খুলে দেওয়া চার নিউজ পোর্টাল হচ্ছে ঢাকা টাইমস২৪, প্রিয় ডটকম, রাইজিং বিডি ও পরির্বতন ডটকম৷
সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বিটিআরসি থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এর আগে রবিবার (৯ আগস্ট) রাতে উল্লিখিত চারটিসহ ৫৮টি ওয়েবসাইট ও লিংক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি৷ সোমবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে পোর্টালগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ৷ এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় সবগুলো সাইট ফের চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়৷ পরে সোমবার রাতেই আসে তৃতীয় নির্দেশনা৷
বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নতুন করে ৫৪টি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷ আমরা একসঙ্গে ৫৮টি ব্লক করেছিলাম৷ এর মধ্যে ৪টি নিউজ পোর্টাল পড়ে গিয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না৷ কিছু কারিগরি বিষয়ের কারণে এমনটি হয়েছে৷ যেহেতু একসঙ্গে ব্লক করা হয়েছে, ইচ্ছা করলেই আলাদা করে খুলে দেওয়া যায় না৷ যে চারটি খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলো খোলার জন্য ৫৮টিকে একসঙ্গে খুলতে হয়েছে এবং পরে ঝুঁকিপূর্ণ বাকিগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷’’
যে ৫৪টি ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেসব সাইট ও লিংক প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
কী ধরনের অভিযোগে এই সাইটগুলো বন্ধ করা হলো সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাঁরা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এগুলো বন্ধ করা হয়েছে৷ এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ- এমন অভিযোগ থেকেই বিটিআরসি কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে৷ সেই প্রেক্ষিতে সাইটগুলো বন্ধের নির্দেশনা পাঠানো হয়৷
উল্লেখ্য, বন্ধের নির্দেশ দেওয়া ৫৪টি নিউজ পোর্টাল হচ্ছে: বিডিপলিটিকো ডট কম, পেজনিউজ২৪ ডট কম, রিপোর্টবিডি২৪ ডট কম, রেয়ারনিউজ২৪ ডট কম, বিএনপিনিউজ২৪ ডট কম, প্রথমবাংলাদেশ ডট নেট, ডেইলিআমারদেশ ডট এক্সওয়াইজেড, ডিএনএন ডট নিউজ, রাজনীতি২৪ ডট কম, আরবিএন২৪ ডট কো ডট ইউকে, সংবাদ২৪৭ ডট কম, দেশভাবনা ডট কম, আমারদেশ২৪৭ ডট কম, অ্যানালাইসিসবিডি ডট কম, আওয়াজবিডি ডট কম, বদরুল ডট ওআরজি, বিএনপিঅনলাইনউইং ডট কম, বিএনপিবাংলাদেশ ডট কম, ইএন- বিএনপিবাংলাদেশ ডট কম, বাংলামেইল৭১ ডট ইনফো, এটিভি২৪বিডি ডট কম, বাংলাস্ট্যাটাস ডট কম, বিবাড়িয়ানিউজ২৪ ডট কম, শীর্ষনিউজ২৪ ডট কম, শিবির ডট ওআরজি ডট বিডি, নিউজ২১-বিডি ডট কম, ওয়াননিউজবিডি ডট নেট, নিউজবিডি৭১ ডট কম, জাস্টনিউজবিডি ডট কম, এক্সপ্রেসনিউজবিডি ডট কম, ডেইলিবিডিটাইমস ডট কম, ময়মনসিংহনিউজ২৪ ডট কম, মূলধারাবিডি ডট কম, সিএনএনবিডি২৪ ডট কম, ডেইলিমিরর২৪ ডট কম, দেশনেত্রীসাইবারফোরাম ডট কম, আলাপন ডট লাইভ, দিগন্ত ডট নেট, মোরালনিউজ২৪ ডট কম, পত্রিকা ডট কম, দাওয়াহিলাল্লাহ ডট কম, আলেহসার২ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, আলজামাহওয়ান ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, বাংলাদারুসুল কুরআন ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, গাজওয়াহ ডট নেট, জঙ্গিমিডিয়া ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, মাক্তাবাতুলইসলামিয়াবিডি ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, মাইকুরআনস্টাডিওয়ানআইয়াহাডে ডট কম, সুহাদারকাফেলা ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, ডিফেন্সআপডেটবাংলাদেশ ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম, ডিইএফবিডি ডট কম, বাংলাদেশডিফেন্স ডট ব্লগস্পট ডট কম৷
‘‘বাকস্বাধীনতার প্রসঙ্গটি নানাভাবে আসে’’
05:01
বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন এখনো পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলে
ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংক্রান্ত যেসব আইন তৈরি হয়েছে, এবং এখনো বলবৎ আছে, তাতে কী বলা হয়েছে৷ ছবিঘরে জেনে নিন কিছু আশ্চর্য আইনের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩
ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যার কয়েকটি কিছুটা সংশোধিত আকারে আজও রয়ে গেছে৷ যেমন: ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩৷ এ আইন অনুযায়ী, যে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশের আগে জেলার ডেপুটি কমিশনারের লিখিত অনুমোদন লাগবে৷ এটি ১৮২৩ সালে ভারতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত গর্ভনর জেনারেল জন অ্যাডামের অধ্যাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
দণ্ডবিধি ১৮৬০
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ‘১২৪ ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে, তার তিন বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এটি একেবারেই মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ একই আইনের ‘৫০৫ খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো প্রতিবেদন বা বিবৃতি যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তাকে ৭ বছর কারাভোগ করতে হবে৷ একইভাবে মানহানির জন্য ৪৯৯ এবং ৫০১ অনুচ্ছেদে শাস্তির বিধান রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪
বাংলাদেশের অবাধ তথ্যের প্রবাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন বা স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪৷ প্রথমটিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যেতে পারে এমন কোনো বিষয় কাউকে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় আইনে রাষ্ট্রের চোখে অনিষ্টকর কোনো তথ্য গণমাধ্যমে কেউ প্রকাশ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ (১) অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে৷ অথচ ৩৯(২)-এ এই স্বাধীনতা আইনের দ্বারা আরোপিত ‘যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষেই’ নিশ্চিত হবে বলা হয়েছে৷ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃংখলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে অথবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে এই বাধা-নিষেধের কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা
২০১৩ সালের সংশোধিত আইনে কোনো ব্যক্তি যদি ইন্টারনেটে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যার দ্বারা কারো মানহানি ঘটে, কিংবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে, বা এ ধরনের তথ্য কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়, তাহলে এটি অপরাধ এবং সেই অপরাধে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: Schlierner - Fotolia.com
ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা
এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ৷
ছবি: Badruddoza Babu
৩২ ধারায় শাস্তি
এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে৷ কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
ছবি: Imago/IPON
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯
এই আইনটি বাক স্বাধীনতার পক্ষে৷ বলা হয়েছে, ‘‘এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷’’ আরো বলা হয়েছে, ‘‘তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে৷’’