নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিশেষ কিছু কাজে রোবট যথেষ্ট উন্নতি করলেও প্রকাশ্য রাজপথে এখনো তাদের দেখা যায় না৷ এবার জার্মানিতে এমন রোবট পার্সেল বিলির কাজ শুরু করতে চলেছে৷ তবে সর্বদা সেটির উপর নজর রাখা হবে৷
জার্মানিতে এমন রোবট পার্সেল বিলির কাজ শুরু করতে চলেছেছবি: DW
বিজ্ঞাপন
জামানিতে কর্মজীবী রোবট
04:03
This browser does not support the video element.
ভবিষ্যতের ডেলিভারি সার্ভিস এমন হতে পারে৷ বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে চাকার উপর বাক্স বসানো আছে৷ কিন্তু তার ভেতরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনেক হাইটেক ভরা৷ প্রায় স্বাবলম্বী এই রোবট হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতে পার্সেল বিলি করবে৷ তার নাম টেও৷ হে-টেও কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অশ্বিন রামচন্দ্রন বলেন, ‘‘এটা একটা কার্গো-ভিত্তিক অটোনমাস ভেহিকেল৷ একইসঙ্গে হালকা ওজনের বিদ্যুতচালিত যানও বটে৷ পুরোপুরি ইলেকট্রিক শক্তিতে চলে৷ সেন্সর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অটোনমাস কারের সঙ্গে অনেক মিল থাকায় সেটি অত্যন্ত নিরাপদ৷ প্রথম এল-ফোর অটোনমাস ভেহিকেল হিসেবে আমরা সেটিকে জার্মানির রাজপথে দেখবো৷''
ইসরায়েলের ‘রোবট মৌচাক’
ইসরায়েলের একটি স্টার্টআপ ‘রোবট মৌচাক’ আবিষ্কার করেছে৷ মৌমাছির দেখাশোনা থেকে শুরু করে তাদের খাবার দেয়া, মধু সংগ্রহ করা সব কাজ রোবট করে৷
ছবি: JACK GUEZ/AFP/Getty Images
রোবট মৌচাক
এটি একটি মৌচাক যাতে রোবট আছে৷ মৌমাছির দেখাশোনা থেকে শুরু করে তাদের খাবার দেয়া, মধু সংগ্রহ করা সব কাজ রোবট করে৷
ছবি: JACK GUEZ/AFP/Getty Images
স্টার্টআপের চেষ্টা
ইসরায়েলের স্টার্টআপ বিওয়াইজ রোবট মৌচাকের উদ্ভাবক৷ দেশটির উত্তরাঞ্চলের গ্যালিলি এলাকায় ‘বিহোম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তারা৷ এর আওতায় ২৪টি রোবট মৌচাক পরিচালিত হচ্ছে৷
ছবি: JACK GUEZ/AFP/Getty Images
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি বিশ্বের প্রথম মধু
স্টার্টআপের কর্মকর্তারা বলছেন, মে মাসের শেষ নাগাদ তারা প্রকল্প থেকে প্রথম মধু সংগ্রহ করবেন৷ একে তারা ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি বিশ্বের প্রথম মধু’ বলছেন৷ কারণ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তি মৌচাকের পরিস্থিতির উপর সর্বক্ষণ নজর রাখে৷
ছবি: JACK GUEZ/AFP/Getty Images
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি
রোবটের সঙ্গে সেন্সর লাগানো আছে৷ তাই মৌচাকে কী হচ্ছে তা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারে রোবট৷ এছাড়া চিনি, পানি ও ওষুধ দেয়ার কাজও করতে পারে রোবট৷ সমস্যা মনে করলে মৌমাছি পালনকারী অ্যাপের মাধ্যমে সেটি জানতে পারেন৷ সমস্যার সমাধানও কম্পিউটারে বসে করা যায়৷ না হলে তখন গিয়ে সমাধান করতে হয়৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
পরিকল্পনা
ইতিমধ্যে ইসরায়েলে একশ’র বেশি রোবট মৌচাক কাজ করছে৷ যুক্তরাষ্ট্রেও কয়েকটি পাঠানো হয়েছে৷ তবে ইউরোপের বাজার ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ ২০১৮ সালে চালু বিওয়াইজ স্টার্টআপের কর্মী সংখ্যা প্রায় ১০০৷ ইতিমধ্যে ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে বিওয়াইজ৷
ছবি: Jack Guez/AFP
মৃত্যু হার কমাতে সহায়ক
জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌমাছি গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক শ্যারনি শাফির বলেন, অনেকসময় একজন মৌমাছিপালনকারী কয়েক মাস পর মৌচাকের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন৷ ততদিন অনেক মৌমাছি মরে যায়৷ কিন্তু রোবটের কারণে মৌচাকের অবস্থা তৎক্ষণাৎ জানা যায়৷ তাই রোবট মৌচাক মৌমাছির মৃত্যু হার কমাতে পারে৷
ছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
ক্যামেরা ও সেন্সরের দৌলতে রোবট চারিদিকে সবকিছুই দেখতে পায়৷ পথে কোনো বাধাবিপত্তি, পথচারী বা ট্রাফিক লাইটও চিনতে পারে সেই যন্ত্রমানব৷ তবে একাই পথে নামার ক্ষমতা থাকলেও সেটা কার্যকর করা এখনই সম্ভব নয়৷ অশ্বিন রামচন্দ্রন মনে করেন, ‘‘এখনো এই প্রণালীর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখার সময় আসে নি৷ তাই মানুষের বুদ্ধির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যা সঠিক ফিডব্যাক দিয়ে কম্পিউটরের বুদ্ধিমত্তার সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে৷ অন্যদিকে জার্মানির এক নতুন আইনের আওতায় রাজপথে এল-ফোর অটোনমির অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অর্থাৎ সব সময়ে তত্ত্বাবধায়ক রাখতে হবে, যিনি রোবটের দিকে নজর রেখে রোবটের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন৷''
শুধু এমন ছোট রোবট নয়, অটোনোমাস বাস, গাড়ি বা ট্রাকও জার্মানির রাজপথে নামতে পারে৷ প্রশ্ন হলো, এমন যান ও রাজপথে বাকি যান বা মানুষ এর ফলে কতটা নিরাপদ থাকবে? ইনোক্যাম এনআরডাব্লিউ সংগঠনের প্রো. লুৎস একস্টাইন মনে করেন, ‘‘এটা এই কারণে নিরাপদ, যে সবার আগে প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে জার্মান ফেডারেল পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেতে হবে৷ আইন অনুযায়ী নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করলে তবেই কোনো যান সেই সবুজ সংকেত পাবে৷ চলার সময়েও নিরাপত্তা বজায় থাকে, কারণ আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যানের উপর নজর রাখা হবে৷ কঠিন পরিস্থিতিতে রোবট একা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেখান থেকে সাহায্য করা হবে৷''
টেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে তার দায় মালিকের ঘাড়ে পড়বে৷ টেও-কে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷ যানপ্রতি একজন করে চালকের আর প্রয়োজন নেই৷ এক জন কর্মী একাধিক রোবট নিয়ন্ত্রণ করবেন৷ ফলে ব্যায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে যাবে৷ ডেভেলপার হিসেবে অশ্বিন রামচন্দ্রনের হাতে আরও অনেক কাজ রয়েছে৷ এখন তিনি প্রোটোটাইপটিকে আরও নিখুঁত করার চেষ্টা করছেন৷ কাজটা মোটেই সহজ নয়৷ হে-টেও কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অশ্বিন অবশ্য বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি বিষয়ই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং৷ তবে আবেগের কারণে আমার বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না৷ কঠিন না হলে মজা কীসের!''
প্রোটোটাইপটিকে বাক্সে ভরে এক সপ্তাহ আগে ইটালিতে পাঠানো হয়েছে৷ সেখানে খোলা রাজপথে টেও প্রথম বার কয়েকটি ট্রিপ শেষ করেছে৷ আধা-স্বাবলম্বী এই রোবট আপাতত পুলিশের পাহারায় থাকলেও তাকে দেখে শিশুরা বেশ আমোদ পাচ্ছে৷ আগামী বছর আর সেই সুবিধা থাকবে না৷ টেও তখন একাই পথে নামার অনুমতি পাবে৷
মার্টা গ্রুডজিনস্কা/এসবি
আসল হাতি রক্ষায় ভারতের মন্দিরে ‘রোবট হাতি’
ভারতের কেরালার এক মন্দিরে সম্প্রতি এক যান্ত্রিক হাতি উপহার দিয়েছে প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন পেটা৷
ছবি: PETA India
রোবট হাতি
প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ বা পেটার ভারতীয় শাখা সম্প্রতি কেরালার ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরকে একটি যান্ত্রিক হাতি উপহার দেয়৷
ছবি: PETA India
লোহার তৈরি
ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, রোবট হাতির উচ্চতা ১১ ফুট, ওজন ৮০০ কেজি৷ লোহার ফ্রেম দিয়ে তৈরি হাতিটির বহিরাবরণ রাবার দিয়ে ঢাকা৷ পেটা জানিয়েছে, রোবট হাতিতে পাঁচটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক মোটর রয়েছে৷ জীবিত হাতির মতোই এটি মাথা, চোখ এবং কান নাড়াতে পারে৷
ছবি: PETA India
খরচ
কেরালার থ্রিসুর শহরের কয়েকজন শিল্পী হাতিটি তৈরি করেছেন৷ এতে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ রূপি৷ এই হাতিতে একসঙ্গে পাঁচজন চড়তে পারবেন৷ আর মাহুত সুইচ দিয়ে শুঁড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷
ছবি: PETA India
উদ্দেশ্য
এক বিবৃতিতে পেটা ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি শ্রী কৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় আচার পালন, উৎসব আয়োজন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে জীবন্ত হাতি বা অন্য কোনো প্রাণি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার করেছিল৷ এর পরই পেটা ইন্ডিয়া ঐ মন্দিরকে রোবট হাতিটি উপহার দেয়৷
ছবি: PETA India
ধর্মীয় আচার
মন্দির কর্তৃপক্ষ রোবট হাতিটির নাম দিয়েছে ‘ইরিঞ্জাদাপ্পিল্লি রমন’৷ সম্প্রতি এই হাতিকে দিয়ে ‘নাদায়িরুথাল’ (দেবতার উদ্দেশ্যে হাতি উৎসর্গ করা) পালন করা হয়৷ জ্যোতিষী পদ্মনভ শর্মা, তান্ত্রিক কারুমাথ্রা বিজয়ন ও শ্রী পদ্মনভস্বামী মন্দিরের পুরোহিত সাদিশান নামবুথিরি এই আচারে অংশ নেন৷
ছবি: PETA India
হাতির ব্যবহার
কেরালার বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীর অনুষ্ঠানে হাতি ব্যবহার করা হয়৷ তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রায়ই শিকলে বেঁধে রাখা হয়৷ মন্দিরে এভাবে হাতির ব্যবহারের সমালোচনা করেছিলেন প্রাণি অধিকারকর্মীরা৷ বছরের পর বছর ধরে এসব বন্দি হাতির স্বাস্থ্য, পরিচর্যা ও চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তারা৷
ছবি: PETA India
আহ্বান
বিবৃতিতে পেটা জানিয়েছে, উৎসবের সময় অতি উচ্চ শব্দে হাতিগুলোকে বশীভূত করা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর’ চর্চা৷ এই অমানবিক চর্চা বন্ধে প্রতিটি মন্দিরের উচিত যান্ত্রিক হাতি ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করা৷
ছবি: PETA India
খুশি মন্দির কর্তৃপক্ষ
ইরিঞ্জাদাপ্পিলি শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত রাজকুমার নাম্বুথিরি জানান, তারা এই যান্ত্রিক হাতিটি পেয়ে খুশি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখাদেখি অন্য মন্দির কর্তৃপক্ষও তাদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য এ ধরনের রোবট হাতি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে চিন্তা করবে বলে প্রত্যাশা করি৷’’
ছবি: PETA India
হাতির মৃত্যু
প্রাণি অধিকার সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র সম্প্রতি কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর বর্ধিত মৃত্যুহার সম্পর্কে চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, কেরালায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৩৮টি বন্দি হাতি মারা গেছে৷
ছবি: PETA India
বুনো হাতির সংখ্যা
বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বুনো হাতি বন্দি অবস্থায় আছে৷ এর প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগই রয়েছে কেরালায়৷