1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার জার্মানির পতাকা সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার

৫ জুন ২০১৮

মাগুরার কৃষক আমাজাদ হোসেন বিশ্বকাপ উপলক্ষে এবার জার্মানির সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা বানিয়েছেন৷ মঙ্গলবার সেই পতাকা উদ্বোধন করেছেন জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা৷ আমজাদ নিজের জমি বিক্রি করে এই পতাকা বানিয়েছেন৷

Fußballverrückter Bangladeschei Amzad Hossain
ছবি: Mazharul Haq

২০০৬ সাল থেকে আমজাদ হোসেন ফুটবল বিশ্বকাপের সময় জার্মানির পতাকাবানিয়ে তা প্রদর্শন করেন৷ ২০০৬ সালে এই পতাকার দৈর্ঘ ছিল দেড় কিলোমিটার৷ এরপর পতাকার দৈর্ঘ বাড়তে থাকে৷ ২০১০ সালে পতাকা হয় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ৷ ২০১৪ সালে সাড়ে তিন কিলোমিটার এবং এবারের ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে এই পতাকার দৈর্ঘ্য হলো সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার৷

মাগুরার নিশ্চিন্তপুর  স্কুল মাঠে মঙ্গলবার এই পতাকার উদ্বোধন করা হয়৷ উদ্বোধনের সময় জার্মান দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা ক্যারেন ভিজোরা ও তামারা কবির উপস্থিত ছিলেন৷ আরো ছিলেন মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম৷ এছাড়াও ছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ামোদী এবং স্থানীয় জার্মান ফ্যান ক্লাবের সদস্যর৷ মাঠের চারদিক ঘিরে পতাকাটি খোলা হলেও পুরো পতাকা প্রদর্শন করা যায়নি৷ আমজাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, বিশ্বকাপ শুরু হলে তিনি পুরো পতাকাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন৷ অনুষ্ঠানে আমজাদ ও দূতবাসের কর্মকর্তাদের ফুলের মালা পরিয়ে দেন জার্মান ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা৷

‘‘যতদিন বেঁচে আছি, প্রতি বিশ্বকাপেই জার্মানির পতাকা বানাবো এবং প্রতিবারই দৈর্ঘ্য বাড়ানার চেষ্টা করবো’

This browser does not support the audio element.

সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তা ক্যারেন ভিজোরা বলেন, ‘‘আমরা আমজাদের এ উদ্যোগে অভিভূত৷ এটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ জার্মান পতাকা৷ তাই আমরা পতাকাটি দেখতে মাগুরা ছুটে এসেছি৷ আমরা জানি, আমজাদ অনেক কষ্ট করে এটি তৈরি করেছে, তাই আমাদের কর্তব্য তাঁর পাশে থাকা৷ আমরা তাঁর পাশে থাকবো এবং আমজাদের জার্মানি সফরের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো৷''

তিনি বলেন, ‘‘এবারের বিশ্বকাপেও জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হবে এবং খুব শিগগিরই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলবে এ আশাও করি৷''

জার্মান দূতাবাসের শিক্ষা ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা তামারা কবির বলেন, ‘‘আমজাদ বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে একটি দারুণ বন্ধুত্বের স্বাক্ষর রেখেছে৷ আগামিতে বাংলাদেশের ফুটবলকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে আমি জার্মানির যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো৷''

স্থানীয় সাংবাদিক মাজহারুল হক লিপু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জার্মান ফ্যানক্লাবের সদস্যরা জার্মানির উদ্যোগে মাগুরায় একটি আধুনিক ফুটবল ক্লাব স্থাপনের অনুরোধ করেন৷ জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন৷ আর স্থানীয়রা মনে করেন, আমাজাদ তাঁর এই দীর্ঘ পতাকা তৈরির মাধ্যমে মাগুরাকে জার্মানি, তথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরছেন৷ তাঁরা আমজাদকে নিয়ে গর্ববোধ করেন৷''

আমজাদ হোসেনের বাড়ি মাগুরার ঘোড়ামারা গ্রামে৷ ১০ সন্তানের জনক, কৃষিজীবী আমজাদ শুরুতে নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে টাকা জোগাড় করে এই পতাকা বানানো শুরু করেন৷ এ নিয়ে তাঁকে নানা ঝামেলাও পোহাতে হয়েছে৷ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সময় তাঁকে অনেকেই এই পতাকা বানাতে নিরুৎসাহিত করেন৷ কিন্তু তিনি উৎসাহ হারাননি৷ সেবার  তিনি তাঁর ৩০ শতক জমি বিক্রি করে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা বানান৷ তখনকার জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরায় গিয়ে ওই পতাকা উদ্বোধন করেন এবং জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷

‘জার্মান ফ্যানক্লাবের সদস্যরা জার্মানির উদ্যোগে মাগুরায় একটি আধুনিক ফুটবল ক্লাব স্থাপনের অনুরোধ করেন'

This browser does not support the audio element.

আমজাদ বলেন, ‘‘এবারের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পতাকা তৈরি করতে গিয়েও আমাকে ১০ শতক জমি বিক্রি করতে হয়েছে৷ তবে এখন কেউ কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন৷ উৎসাহ দেন অনেকে৷ বিশ্বকাপ শুরুর পর পতাকার পুনঃপ্রদর্শনীর সময় জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা আবারো আসবেন৷ তাঁরা এবার আমার বাড়িতেও যান৷''

জার্মানির এই পতাকা বানানোরকাপড় মাগুরায় যায় ঢাকা থেকে৷ আর একেক সময় একেক দর্জিকে দিয়ে  পতাকা তৈরি করান আমজাদ৷ তিনি জানান, ‘‘এবার ১০ শতক জমি বিক্রি করে তিন লাখ টাকা পাই৷ ঢাকার এক কোম্পানিকে  দুই মাস আগে অর্ডার দিয়ে কাপড় আনিয়েছি এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায়৷ দর্জিকে সেলাই খরচ দিয়েছি  ৬৪ হাজার৷ বানাতে লেগেছে  ১৬ দিন৷ আরো অনেক খরচ আছে৷ আমি মাগুরার বাইরে থেকে দর্জি আনি, কারণ, এখানকার দর্জিরা অনেক বেশি টাকা চায়৷''

তিনি প্রতি বিশ্বকাপেই নতুন কাপড় দিয়ে জার্মানির পতাকা বানান৷ আর পুরনো পতাকা যতদূর সম্ভব সংরক্ষণ করে রাখেন৷ আমজাদ হোসেন বিশ্বকাপের সময় কেন জার্মানির পতাকা বানান? তিনি কি জার্মান ফুটবলের পুরনো ভক্ত? তিনি কি একজন ফুটবলপ্রেমিক? সেই প্রশ্নের জবাবাও দিয়েছেন তিনি৷ তিন বলেন, ‘‘২০০৫ সালে আমার এক কঠিন রোগ হয়৷ সে রোগের নাম আমি প্রকাশ করতে চাই না৷ প্রথমে বাংলাদেশ ও ভারতে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েও আমি সুস্থ হইনি৷ এরপর এক  চিকিৎসকের পরামর্শে জার্মানি থেকে ওষুধ আনা হয়৷ ওই ওষুধ তিন মাস খেয়ে আমি রোগ থেকে মুক্তি পাই৷ এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, জার্মানির ওষুধ খেয়ে আমার রোগমুক্তি ঘটেছে সেই জার্মানির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবো৷ তাই ২০০৬ সালে জার্মানিতে বিশ্বকাপের সময় প্রথম দীর্ঘ জার্মান পতাকা বানাই ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে৷''

আমজাদের কথা, ‘‘যতদিন বেঁচে আছি, আশা করি প্রতি বিশ্বকাপেই জার্মানির পতাকা বানাবো এবং প্রতিবারই দৈর্ঘ্য বাড়ানার চেষ্টা করবো৷ কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়, এটা জার্মানির প্রতি আমার ভালোবাসার প্রকাশ৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ