এবার বাংলাদেশে এক জাপানী নারী নিখোঁজ হওয়ার পর তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা৷ আর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
জাপানী ওই নারীর নাম হিরোয়ি মিয়েতা (৫৫)৷ তিনি প্রায় একমাস আগে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে নিখোঁজ হন৷ উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ জানায়, নিহত মিয়েতা উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে ১৩/বি নম্বর সড়কের ৮ নম্বর ‘হোল্ডিংয়ে সিটি হোমস' নামে একটি ডরমিটারিতে থাকতেন৷ গত আগস্টে তিনি তাঁর কয়েকজন ব্যবসায়িক পার্টনারের পরামর্শে উত্তরার ভাটারা থ এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন৷ মিয়েতার সঙ্গে জাপানে বসবাসরত তার মায়ের সঙ্গে প্রতিদিন টেলিফোনে কথা হত৷ গত ২৬শে অক্টোবর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার মা৷ এরপর তিনি ঢাকায় জাপান দূতাবাসকে বিষয়টি জানান৷
জাপান দূতাবাসের পক্ষে ভাইস কাউন্সিলর কুসুকি মাৎসুনা প্রথমে বিষয়টি থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে জানান৷ পরে ১৯শে নভেম্বর উত্তরা পূর্ব থানায় মিয়েতা নিখোঁজ থাকার বিষয়ে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি করেন৷ এরপর পুলিশ তাঁর পাঁচজন ব্যবসায়িক পার্টনারকে আটক করে৷ তারা তাঁকে হত্যা এবং লাশ উত্তরার খালপাড় এলাকায় দাফন করার কথা স্বীকার করে বলে পুলিশ জানায়৷ পুলিশ কবর থেকে লাশ উত্তোলন এবং ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করেছে৷
[No title]
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কাছে এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাপানি নারীকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা জানার জন্য তদন্ত চলছে৷ আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং লাশ তুলে ময়না তদন্তের পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে।‘‘ পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, জাপানি নারীকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টা করেছিল দুর্বৃত্তরা৷তিনি ঢাকায় তৈরি পোশাকের বায়িং হাউজের ব্যবসা করতেন বলে জানা যায়৷
এই ঘটনায় আটকরা হলেন, মো. মারুফ, রাশেদুল হক বাপ্পী, ফখরুল ইসলাম, ডা. বিমল চন্দ্র শীল ও মো. জাহাঙ্গীর৷
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাপানী নারী হত্যার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করার কথা বললেও তা বাতিল করে৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
প্রসঙ্গত বাংলাদেশে গত দুই মানে একজন ইটালিয়ান এবং একজন জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়৷ এছাড়া আরো ইটালিয়ান নাগরিক ও একজন খ্রীস্টান ধর্ম যাজককে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ আর সর্বশেষ এক জাপানী নারীকে হত্যার খবর পাওয়া গেল৷
এ নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে খুন গুমের ঘটনা যেন স্বাভাবিক৷ কিন্তু এরমধ্যেই বিদেশিরা অনেকটা নিরাপদে ছিলেন৷ কিন্তু গত দু'মাসে তাঁদের ওপর যে হামলা হয়েছে তাতে আর তাঁরা বাংলাদেশে নিরাপদ নন বলেই মনে হয়৷ আর সর্বশেষ তারা নিখোঁজ, হত্যা এবং গুমেরও শিকার হলেন৷''