প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের হোটেল ও অফিস টাওয়ারে বিদেশি রাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করছেন, এমন মারাত্মক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হলো মার্কিন আদালতে৷
বিজ্ঞাপন
হোয়াইট হাউস থেকে বেশি দূরে নয় ট্রাম্প ইন্টারন্যাশানাল হোটেল৷ সেখানে বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলি আচমকা অস্বাভাবিক অঙ্কের ব্যয় করতে শুরু করেছে৷ ২০শে জানুয়ারি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পর থেকে এমনটা চলে আসছে৷ বিশেষ করে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি এ ক্ষেত্রে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে৷ যেমন, কুয়েতের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান এই হোটেলে আয়োজন করা হয়েছে৷ সৌদি আরবও সেখানে লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করছে৷ শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে এবং তাঁর প্রশাসনও ট্রাম্প হোটেলে অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন৷ নিউ ইয়র্কে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশানাল টাওয়ারেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ সেখানে চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক আইসিবিসি অফিস ভাড়া নিয়েছে৷ রাশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানও ট্রাম্প টাওয়ারে অর্থ ঢালছে৷
অথচ মার্কিন সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি সেই পদের সুযোগ নিয়ে নিজের সম্পদ বাড়াতে পারেন না৷ তিনি দেশি-বিদেশি সরকারি উপহার বা উপঢৌকনও গ্রহণ করতে পারেন না৷ আসলে অ্যামেরিকার ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত এমন মাপের ব্যবসায়ী কখনো প্রেসিডেন্ট হননি৷ প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করার পরেও ট্রাম্প তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করেননি৷
এমন পরিস্থিতিতে মামলা করা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে৷ ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল কার্ল ব়্যাসাইন অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট হবার পর ট্রাম্প তাঁর ব্যবসা এক ট্রাস্টের হাতে তুলে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি এখনো সে সবের মালিক রয়েছেন৷ সেই সব ব্যবসা থেকে যে আয় হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বেশ সচেতন৷ ব়্যাসাইন আরও বলেন, মার্কিন কংগ্রেস সব দেখেশুনেও নীরব রয়েছে৷ মেরিল্যান্ড রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলও একই অভিযোগ পেশ করেছেন৷
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র শন স্পাইসার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাট দল এই দুই অ্যাটর্নি জেনারেলকে এ ক্ষেত্রে মদদ দিচ্ছে বলে তিনি পালটা অভিযোগ করেন৷ ট্রাম্পের আইনজীবীরা এর যোগ্য জবাব দেবেন, বলেন স্পাইসার৷
ওয়াশিংটনে সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত
উইকিলিক্স অথবা অন্য কোনো ‘বেসরকারি’ সংগঠন নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই ভিতরের মানুষ৷ ট্রাম্প ক্রোধে ফুঁসলেও তার উৎস খুঁজে পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
টেলিফোন সংলাপ
ক্ষমতায় আসার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু বিদেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ আলোচনা করেছিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন৷ সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে ট্রাম্প-এর রোষের শিকার হয়েছিলেন ওবামা আমলের অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস৷ তিনিই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প টিমের যোগাযোগ নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছিলেন বলে ট্রাম্প সন্দেহ করেন৷
ছবি: Reuters/L. Buckman
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইএস সম্পর্কে এমন গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও অজানা ছিল৷ সেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Tass/Alexander Shcherbak
এফবিআই মেমো
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার পর তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান জেমস কোমি৷ তাঁকে বরখাস্ত করার পর সেই ‘মেমো’-র অস্তিত্ব ও বিবরণ ফাঁস হওয়ায় জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Harrer
পোপনীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা
হোয়াইট হাউসের কর্মী ও উপদেষ্টারা ট্রাম্প-এর অনেক সিদ্ধান্ত আগেভাগে জানতে পারেন না৷ ফলে তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যে তাঁর দ্রুত চিন্তার সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না৷ এমন ‘অরাজকতা’-র ফলে তথ্য-ফাঁসের ঘটনা ঘনঘন ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
অন্তর্ঘাতের অভিযোগ
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা এই সব তথ্য ফাঁসের ঘটনার মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া দেখছেন৷ অনির্বাচিত আমলারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনকে হেয় করতে এমন অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে বলে রক্ষণশীল মহলে অভিযোগ উঠছে৷ এই সব ‘লিক’-এর উৎস খুঁজে বার করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা৷