নদিয়ায় তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলো। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা থামছে না। পুরুলিয়ার ঝালদা, পানিহাটি, রামপুরহাটের পর এবার নদিয়ার হাঁসখালি। এখানে তৃণমূল নেতা সহদেব মণ্ডলকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
সহদেব কাজ সেরে রাত আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরছিলেন। মুড়াগাছা বাজারে পিছন থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তাকে স্থানীয় মানুষ শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থা খারাপ হয়। প্রথমে তাকে কল্যাণীতে নেয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে রাতে তাকে কলকাতায় এনে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছে বলে সহদেবের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রাজনৈতিক চাপানউতোর
রানাঘাটে তৃণমূলের সভানেত্রী রত্না ঘোষ আনন্দবাজারকে বলেছেন, ''ঘটনাটা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তবে এতে বিজেপির ইন্ধন থাকতে পারে।'' আর বগুলার তৃণমূল সভাপতি শিশির রায়ের মনে হচ্ছে, ''বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতীরা এই কাজ করতে পারে।''
ভয়, উত্তেজনার রামপুরহাট
চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ছাই। হাওয়াই চটি। থমথমে গ্রামে সকলে সন্ত্রস্ত। পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ চিহ্নিত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। ঘটনাস্থলে ডিডাব্লিউ-র ক্যামেরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই গ্রামের অন্দরে
পোড়া বাড়ি থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। দমকলকর্মীরা এখনো বাড়ির ভিতর ঢুকে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তায় তাজা বোমা
গ্রামের রাস্তায় এখনো পড়ে আছে তাজা বোমা। পুলিশ গিয়ে কিছু বোমা উদ্ধার করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভয়াবহতার আরেক নাম
বাড়ির সামনে পড়ে আছে কলসি। জুতো, চটি। বাড়ির ভিতর আগুনে তছনছ হয়ে গেছে। পোড়া দেহগুলি শনাক্ত পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। এতই খারাপ অবস্থা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শিশুদের মৃত্যু
স্থানীয় মানুষ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই গ্রামে উত্তেজনা চলছিল। তার জেরে গ্রামের পুরুষরা আগেই পালিয়েছিল। যাদের পুড়ে মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই নারী ও শিশু। প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিহত ভাদু শেখ
স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের ছবি। গন্ডগোলের সূত্রপাত তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই। চায়ের দোকানে তার মাথা লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। তার মৃত্যুর পরেই গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে ফিরহাদ হাকিম
মঙ্গলবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ভাদু শেখের বাড়িতে কথা বলছেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিনিধি দল
সিপিএমের প্রতিনিধি দল সকালে ঢুকেছে গ্রামে। দলের সদ্য নিযুক্ত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রবীণ নেতা বিমান বসু ঘটনাস্থলে যাবেন। সেলিম মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সবকিছু ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এদিন গ্রামে ঢুকে সেলিম বলেন, পুলিশ সিন্ডিকেটের টাকায় চলছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপির প্রতিনিধি দল
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের দল এদিন রামপুরহাটে যাবে। তারাও এলাকা ঘুরে দেখবে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবিষয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন এবং শিশু সুরক্ষা কমিশন রাজ্যকে কড়া ভাষায় চিঠি দিয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি
তৃণমূল কর্মী খুন এবং আগুন লাগার বিষয়টি সম্পর্কযুক্ত কি না, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি রাজ্য প্রশাসন। মৃতের সংখ্যা নিয়েও একেকজন একেক কথা বলছেন। দমকলকর্মীরা বলেছিলেন মৃতের সংখ্যা ১০। স্থানীয় পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন মৃতের সংখ্যা সাত। রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন মৃতের সংখ্যা আট। গ্রামবাসীদের অভিযোগ মৃতের সংখ্যা আরো বেশি। পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থমথমে পরিস্থিতি
সব মিলিয়ে থমথমে পরিস্থিতি রামপুরহাটের গ্রামে। সাংবাদিকদেরও বিশ্বাস করতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। সন্ধের পর কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এই অভিযোগ খারিজ করে বলেছেন, তদন্ত করলে দেখা যাবে, এর পিছনে তৃণমূলের ভাগ বাটোয়ারার কাহিনি আছে।
কেন এই অবস্থা?
রাজ্যে কেন একের পর এক রাজনৈতিক নেতাকে প্রকাশ্যে এইভাবে খুন করা হচ্ছে বা খুনের চেষ্টা হচ্ছে?
প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রাজনীতি ও দুবৃত্তদের পথ মিলে গেলে এটাই হয়। এখন তো রাজনীতিতে বালি সহ বিভিন্ন মাফিয়া, সিন্ডিকেট সব মিলেমিশে গেছে।'' দীপ্তেন্দ্রের মতে, ''আগে মাফিয়ারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করত। এখন অনেক ক্ষেত্রে তার মধ্যে রাজনীতিবিদরা ঢুকে পড়ছেন ও মারামারির শিকার হচ্ছেন।''
সিবিআই তদন্তের দাবি নিহত তৃণমূল কাউন্সিলারের পরিবারের
গত রোববার পানিহাটিতে খুন হয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলার অনুপম দত্ত। বুধবার ছিল তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এখানেই খুন হন তিনি
এই সেই জায়গা, যেখানে রোববার সন্ধ্যায় অনুপম একটি স্কুটিতে ওঠার পর আততায়ী এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনুপম। মৃত্যু হয় তার। পুর বোর্ড গঠনের কয়েকদিন আগে কেন মারা হলো তাকে? বুধবার কাউন্সিলারদের শপথের অনুষ্ঠানে ঘুরপাক খেয়েছে এই প্রশ্ন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিযুক্ত ধৃত
এই সেই হোগলার জঙ্গল যেখান থেকে ধরা হয়েছিল অনুপম-হত্যার দায়ে মূল অভিযুক্ত অমিত পণ্ডিতকে। তাকে দীর্ঘ জেরা করে তার সম্পর্কিত ভাই সঞ্জীব পণ্ডিতকে ধরে পুলিশ। সঞ্জীবই অনুপকে হত্যার বরাত দিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে। সঞ্জীব এর আগে একজন ভাড়াটে খুনিকেও এই কাজে লাগিয়েছিল। তবে সে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনুপমের পরিচয়
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছিলেন অনুপম। ২০১৩ সালে তিনি কাউন্সিলার হন। তিনি তারপর থেকে জোর করে জমি নিয়ে প্রমোটারচক্র এবং তোলাবাজির বিরোধিতা করে এসেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চার বছর আগেও
২০১৮ সালেও একবার একটি বন্ধ কারখানার সামনে তাকে পিটিয়ে মারার চক্রান্ত হয়েছিল। তিনি একটি ফোন পেয়ে সেখানে যান। কিন্তু এক সতীর্থ কাউন্সিলার সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান অনুপম।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুর বোর্ড গঠনের আগে
পানিহাটি পুরসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন অনুপম। বুধবার নির্বাচিত কাউন্সিলাররা শপথ নিলেন। অনুপম নিতে পারেননি। তার ছবি রাখা ছিল শপথের মঞ্চে। পুর বোর্ড গঠনের আগেই তাকে হত্যা করা হলো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনুপমের বাড়িতে
অনুপমের বাড়ি এখন শোকস্তব্ধ। বৃহস্পতিবার ছিল তার শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান। তার মা বলেছেন, অনেক দুর্ভাগা হলে ছেলের শ্রাদ্ধ দেখতে হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআই তদন্তের দাবি পরিবারের
অনুপমের স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত দাবি করেছেন, এই খুনের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দিতে হবে। তাহলে কি রাজ্যের তদন্তের উপর ভরসা রখতে পারছেন না তিনি? রাজ্য সরকার অবশ্য সিআইডি-র হাতে এই তদন্তভার দিয়েছে। ছবিতে অনুপমের মা ও বাবা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন খুন?
তদন্তে নেমে সিআইডি বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে। স্থানীয় মানুষের দাবি, অনুপম স্থানীয় প্রমোটাররাজের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অনুপম স্থানীয় দুষ্কৃতীদের বিরোধিতাও করেছিলেন। তিনি পুরসভায় কারো পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। উপরে বন্ধ কারখানার ছবি। এই সব জমির উপর প্রমোটার-চক্রের নজর থাকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুর নির্বাচনের পর
পুরসভা নির্বাচন শেষ হতেই পুরুলিয়ায় কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দু এবং পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলার অনুপম দত্তের হত্যা পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তারা দুইটি হত্যার ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব আবার অভিযোগ করেছে, দুইটি ক্ষেত্রেই বিরোধীরা দায়ী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
9 ছবি1 | 9
সাংবাদিক ও অধিকাররক্ষা কর্মী আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের হাতেই সব ক্ষমতা কেন্দ্রিভূত। বিরোধীরা খুবই দুর্বল। তাই ক্ষমতার দখল নিয়ে লড়াইয়ে এখন তাই শাসক দলের নেতারা বিরোধে জড়াচ্ছেন।'' তার মতে, ''ক্ষমতা দখল বলতে এলাকা দখল থেকে শুরু করে সবই আছে।''