1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার নদী দখলমুক্ত করার দিকে নজর দিন

১৩ জুন ২০১৭

আবেদনটি কার কাছে করব তাই ভাবছি৷ নদীগুলো দেখভালের জন্য সরকারি যে কর্তৃপক্ষ আছে তাদের কাছে, নাকি সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে?

Global Ideas Bild der Woche KW 32 Arbeiter Aluminium Recycling Fabrik
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad

আমাদের দেশটাই যেন কেমন৷ এখানে, যদি আপনি সত্যিই চান যে, কোনো কাজ হোক, তাহলে যেভাবেই হোক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে৷ তাহলে আপনি সাফল্য আশা করতে পারেন৷ নদী দখলমুক্ত করার মতো যে কাজ, তা ঠিকঠাকমতো করার সামর্থ্য বা ইচ্ছা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আছে কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷ না, তাদের পর্যাপ্ত উপকরণ, যন্ত্রপাতি নেই, সেটা বলছি না৷ বলছি প্রভাবশালী দখলদারদের কাছ থেকে নদী ফিরিয়ে আনার মতো ক্ষমতা থাকার কথা৷ এই ধাপ পেরোনোর একমাত্র উপায় বোধ হয় প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি যদি একবার বলে দেন, ‘‘কোনো কথা শুনতে চাই না৷ আগামী কয়েকমাসের মধ্যে আমি সব নদী দখলমুক্ত দেখতে চাই'' তাহলেই হয়ত কাজ হয়ে যাবে৷ অন্তত এটা আমার আশা৷ আর নদীগুলোকে কেন তাদের আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া উচিত সেটা প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানেন৷ কারণ, একসময় জার্মানিতে থাকাকালীন তিনি কার্লসরুয়ে নামে যে শহরে থাকতেন, তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাইন নদী তিনি হয়ত দেখেছেন৷ সেই নদী দিয়ে বড় বড় কার্গো জাহাজের যাওয়া-আসা দেখে নিশ্চয় তাঁর সেইসময়কার ছোট্ট ছেলেমেয়ে জয় আর পুতুল অবাক হয়েছে, আনন্দ পেয়েছে৷ তিনি নিজেও হয়ত রাইনের পার ধরে সকাল-বিকাল হেঁটেছেন আর মুগ্ধ হয়েছেন৷ এছাড়া বিভিন্ন উন্নত দেশ সফরে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই সেসব দেশের নদীগুলোর সংস্পর্শে এসেছেন৷ তিনি দেখেছেন সেসব দেশে কীভাবে নদীগুলো দেখেশুনে রাখা হয়৷

এসব অভিজ্ঞতা থেকেই হয়ত প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেন৷ নদীগুলো দখলমুক্ত করা যার অন্যতম কাজ৷ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখলাম, তাদের কাছে কোন নদীর পাড়ে কতগুলো অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, তার হিসেব আছে৷ খুবই আশার কথা যে, তারা অন্তত জানেন নদীগুলোর কী অবস্থা৷ কিন্তু এখন প্রয়োজন এই স্থাপনাগুলোর স্থায়ী অপসারণ, অস্থায়ী নয়৷ এই কথা বলার কারণ, মাঝেমধ্যে আমরা অবৈধ স্থাপনা অপসারণের খবর পাই৷ কিন্তু পরে এ-ও জানা যায় যে, ক'দিন পরই আবার সেগুলো আগের জায়গায় ফিরে গেছে৷ অর্থাৎ স্থায়ীভাবে নদীগুলো দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না৷ এর জন্য প্রভাবশালী দখলদার ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী৷ প্রভাবশালীদের তালিকায় আছেন ধনী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ৷ মাঝেমধ্যে সেই তালিকায় পুলিশসহ সরকারেরই কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত হয়৷

একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ দেয়া যাক৷ এপ্রিলের ১৩ তারিখ শীতলক্ষ্যার তীরে খানপুর বরফকল এলাকায় ‘চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসি পার্ক' উদ্বোধন করেন সরকারের নৌমন্ত্রী ও নদী রক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান শাজাহান খান৷ বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) বলছে, ঐ এলাকায় নদীর সীমানা প্রাচীরের কাছ থেকে ৩৩৭ নম্বর পিলারের পর প্রায় দুই একর জমি ভরাট করে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ নদী দখল করে গড়ে তোলা পার্ক উদ্বোধন করেছেন নদী রক্ষা কমিটির প্রধান!

লেখার (নাকি মামার বাড়ির আবদার?) এই অংশে এসে ২০০৯ সালে প্রকাশিত একটি খবরের দিকে চোখ পড়ল৷ ঐ বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলবাজদের হাত থেকে নদী রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷

খবরটি পড়ে নিজেকে বোকা মনে হচ্ছে৷ কারণ, লেখার শুরুতে আমি আশা প্রকাশ করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশ দিলে কাজ হতে পারে৷ এখন দেখছি সেটি আমার ভুল ধারণা৷

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

তবে আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী সেই সময় নির্দেশ দিলেও পরবর্তীতে হয়ত আর এ সংক্রান্ত খবর নেয়ার সময় পাননি৷ কিংবা এ-ও হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী পরে ভেবে দেখলেন যে, নদী দখলমুক্ত করার চেয়ে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ইত্যাদি করলে মানুষ তথা ভোটারদের চোখে পড়বে বেশি৷ ফলে সেই দিকেই মনোযোগ দেয়া শুরু করেন৷

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সবসময় যে শুধু ভোট পাওয়ার জন্যই কাজ করতে হবে, তা তো নয়৷ নিজের মনে প্রশান্তি এনে দেয় এমন কাজও তো মানুষ করে৷ নদী দখলমুক্ত করার কাজটি তেমনই একটি কাজ ধরে নিয়ে আপনি এই দিকটায় নজর দেবেন, সেই আশা করছি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ