1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার নিরাপত্তার আশ্বাসে ঢাকা ও শর্তে বাঁধা দুর্গাপূজা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

দুর্গাপূজার আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি৷ অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এবার নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ গত বছরের দুর্গাপূজা দুঃখজনক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কেটেছে৷

ছবি: DW/M. Mamun

আর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার সরকার পূজার নিরাপাত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে৷ কিন্তু তারপরও কি নিরাপদ থাকবে পূজা?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, নিরাপত্তার কোনো ত্রুটি রাখা হবে না৷ বুধবার রাতে তার কাছে সেই নিরাপত্তার বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা তো আমি গত ১১ তারিখেই বলে দিয়েছি৷ এর কোনো ব্যত্যয় হবে না৷’’

গত বছর পূজার সময় কুমিল্লার একটি মন্দিরে পবিত্র কোরআন অবমাননার সাজানো অভিযোগ তুলে ব্যাপক হামলা চালানো হয়৷ কুমিল্লায় অনেকগুলো মন্দির ও পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দুদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়৷ কোরআন অবমাননার কথিত ঘটনাার প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও রংপুরেও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘যদি কুমিল্লায় স্বেচ্ছাসেবক থাকতো, তাহলে ওই ঘটনা ঘটতো না৷ কুমিল্লার মণ্ডপে একজন নিরাপত্তাকর্মী ছিল৷ তা-ও সে রাতে মণ্ডপ থেকে অনেক দূরের বেঞ্চে ঘুমিয়ে ছিল৷’’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১১ সেপ্টেম্বর তার মন্ত্রণালয়ে দুর্গা পূজার নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ সেখানে যেসব বিষয় উঠে আসে সেগুলো হলো:

১. পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা আনসার বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে৷
২. গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা নজরদারি করবেন৷
৩. সব পূজামণ্ডপে বাধ্যতামূলভাবে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে৷
৪. এমন জায়গায় পূজামণ্ডপ করা যাবে না, যেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না৷
৫. পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকদের বাধ্যতামূলকভাবে হাতে আর্মব্যান্ড পরতে হবে৷
৬. পূজায় যে-কোনো ধরনের গুজবের ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখা হবে৷ বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হবে৷ কোনো ধরনের গুজব ছড়ানোকে কঠোর হাতে দমন করা হবে৷
৭. পূজার সময় পুলিশ সদর দপ্তর এবং জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে৷ ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা যাবে৷
৮. থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷
৯. আজানের সময় পূজামণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ সহনীয় রাখতে বলা হয়েছে৷

দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ গত বছর ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে৷ এবার মণ্ডপগুলোতে সব মিলিয়ে এক লাখ ৯২ হাজার আনসার থাকবেন৷ তবে মোট কতজন পুলিশ থাকবেন তা এখানো নির্ধারণ করা হয়নি৷ গত বছর কোভিডের সময় পুলিশ সদস্যদের ৩০ ভাগ আক্রান্ত বলে পুলিশ কম দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আনসারের ‘খরচ’ কারা বহন করবে৷ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘আনসারের মহাপরিচালক বলেছেন, পর্যাপ্ত আনসার আছে৷ কিন্তু বাজেট লাগবে৷ বাজেট কি আমরা দেবো? সরকার যদি বহন করে, তাহলে তো ভালো৷ এটা সরকারেরই দায়িত্ব৷’’

তার কথা, ‘‘আমাদের দিক থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রত্যেক মণ্ডপে ২৪ ঘণ্টা আমাদের পাঁচজন থাকবেন৷ কিন্তু দায়িত্ব সরকার ও রাষ্ট্রের৷ সরকার যদি ‘মিন’ করে তাহলে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব৷’’

তিনি বলেন, ‘‘গত বছর পুলিশের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে৷ পবিত্র কোরআন রাখার কথিত ঘটনার লাইভ যদি পুলিশ করতে না দিতো তাহলে ওই পরিস্থিতি হতো না৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পূজার পাঁচ দিন শুধু নয়, আমরা সারা বছরের নিরাপত্তা চাই৷ পূজা শুরুর আগে এখন আমরা প্রতিদিনই প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাচ্ছি৷ এটা থামাবে কে?’’

পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরাও আমাদের দিক থেকে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য মণ্ডপগুলোকে ২১ দফা নির্দেশনা দিয়েছি৷ কিন্তু সব মণ্ডপে কি সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্ভব? এখানে খরচের বিষয়ও আছে৷ তার কথা, ‘‘সিসি ক্যামেরা, স্বেচ্ছাসেবক না থাকলে হামলা হবে- এটা তো মেনে নেয়া যায় না৷ তাহলে বোঝাই যায় হামলার পরিবেশ আছে৷ আমাদের নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে হবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা সব জেলার পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি৷ তাদের ২১ দফা নির্দেশনা দিয়েছি৷ আমাদের দিক থেকে যতটুকু ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব, তা নিচ্ছি৷ কিন্তু মূল দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের৷’’

ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা কাকলী মৃধা কলাবাগান মাঠে পূজা বন্ধের সিদ্ধান্তে দুঃখ পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বছরের পর বছর আমরা কলাবাগান মাঠে পূজা হতে দেখে এসেছি৷ কিন্তু গত বছর ওই মাঠে পূজা বন্ধ ছিল৷ এবারও হবে না৷ কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কারা নিয়েছেন আমরা জানি না৷ তবে আমি দুঃখ পেয়েছি৷’’

কী এমন ক্ষতি হতো ওই মাঠের পূজা বন্ধ না করলে: কাকলী মৃধা

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘আমি কলাবাগান মাঠের পূজায় প্রতি বছর অঞ্জলি দিতাম৷ সেটা আর পারছি না৷ চার-পাঁচটি দিনই তো৷ কী এমন ক্ষতি হতো ওই মাঠের পূজা বন্ধ না করলে!’’

মিরপুর ১০ নাম্বার এলাকায় থাকেন বিপ্লব কুন্ডু৷ তিনি বলেন, ‘‘১০০ মুসলিম পরিবারের মধ্যে এখানে আমি একমাত্র হিন্দু পরিবার৷ এখানে আমি রাজা৷ আমার কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু সারাদেশের চিত্র কি এরকম?’’

তার কথা, ‘‘আমাদের নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে৷ আমাদের বলা হচ্ছে তোমাদের সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে, ভলান্টিয়ার রাখতে হবে৷ তোমরাই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করো, আমরা সহযোগিতা করবো৷ কিন্তু কেন? সব রাজনৈতিক দলই বলে, সাম্প্রদায়িক শক্তি হামলা করতে পারে৷ তাহলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও না কেন?’’

বরিশালে উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা অসীম কুমার বালা৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় পূজার সময় কোনো ঝামেলা হয় না৷ কিন্তু আশপাশে বা সারা দেশে হিন্দুরা যেখানে সংখ্যালঘু, সেখানে সমস্যা হয়৷’’

তার কথা, ‘‘সরকার তো প্রতি বছর নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়৷ কিন্তু আমরা তো নিরাপত্তা পাই না৷ যদি অতীতের ঘটনাগুলোর বিচার হতো তাহলে হয়ত বারবার হামলার ঘটনা ঘটতো না৷’’

গত বছর পুলিশের দায়িত্বহীন আচরণের কারণে কুমিল্লার ঘটনা ঘটেছে: কাজল দেবনাথ

This browser does not support the audio element.

তিনি মনে করেন, ‘‘সমাজ ও রাষ্ট্রেও উগ্রবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ প্রশাসনে উগ্রবাদীরা আছে৷’’

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের কথা হলো, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলছেন তার মানে হলো পুলিশ আছে, পূজা আছে৷ পুলিশ নেই, পূজাও নেই৷ এইরকম পরিস্থিতি তো আমরা চাই না৷ পুলিশ পাহারা দিয়ে যদি পূজা উদযাপন করতে হয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন তা বোঝাই যাচ্ছে৷’’

তার অভিযোগ, ‘‘গত দুই সপ্তাহে সারা দেশে প্রতিমা ভাঙচুরের সাত-আটটি ঘটনা ঘটেছে৷ আর গত পূজার সময় হামলার পর এই এক বছর হিন্দুরা হামলার বাইরে ছিলেন না৷ হামলা তো বন্ধ হয়নি৷ নানা গুজব ছড়িয়ে তো মন্দির, হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে অনেক হামলা হয়েছে৷ তাহলে পরিবেশের তো কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না৷’’

আর কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে নিরাপত্তার কথা বলেছেন, তার ফল তো পূজায় দেখা যাবে৷ সেটা দেখেই আসলে বলা যাবে আমরা কতটা নিরাপদ ছিলাম৷’’

বাংলাদেশে ১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে৷ ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ