পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি নিয়ে নতুন করে ইরানের উপর চাপ তৈরি করল জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য।
বিজ্ঞাপন
চাপ ছিলই। ইরানের উপর চাপ আরও বাড়ল। এ বার আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির উপর চাপ তৈরি করল ইউরোপের তিনটি দেশ। জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স। মঙ্গলবার তারা জানিয়ে দিল, ইরান যদি এখনও এই চুক্তি অমান্য করে চলে, তবে তাদেরও ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরমাণু চুক্তি সহ একাধিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ইরানের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক অ্যামেরিকার। ইরানের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও একাধিকবার দিয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্প সরকার। পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরানও। সেই বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসিম সোলেইমানিকে হত্যা করে অ্যামেরিকা। কিন্তু তাতেও উত্তেজনা কমেনি, বরং বেড়েছে। অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইরান। একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির কোনও শর্তই তারা মানবে না। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সীমাও তারা মেনে নেবে না বলে ইরানের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল।
‘পিছু হটেছে’ ইরান, বললেন ট্রাম্প
ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যম মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় ৮০ জন নিহতের তথ্য জানালেও ট্রাম্প বললেন ভিন্ন কথা৷ ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন বা ইরাকি নিহত হননি৷ ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশগুলো দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
প্রতীক্ষিত ভাষণ
ইরানের হামলার পরপরই বেশ কিছু দেশ তাদের কোনো সৈন্য নিহত হয়নি জানালেও, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ রাতে টুইট করে ‘সব ঠিক আছে’ বললেও ক্ষতির পরিমাণ অ্যামেরিকার স্থানীয় সময় সকালে জানাবেন বলেও জানান ট্রাম্প৷ ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক স্পেনসার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ট্রাম্পের পাশে৷
ছবি: AFP/S. Loeb
‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না’
ভাষণের প্রথম বাক্যেই ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি যতদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আছি, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া হবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পরমাণু বোমার পেছনে ছুটে ইরান ‘সভ্য’ বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে৷ আমরা তা কখনও হতে দেবো না৷’’
ট্রাম্প জানান, ইরানের হামলায় কোনো অ্যামেরিকান বা ইরাকি আঘাতপ্রাপ্ত হননি৷ কেউই হতাহতও হননি৷ সব মার্কিন সৈন্য নিরাপদে আছে এবং সেনা ঘাঁটিতেও খুব সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ পূর্বসতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতার জন্য মার্কিন সেনাদের ধন্যবাদও জানান ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Nasser
‘পিছু হটেছে’ ইরান
মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘মহান’ এবং শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তি থাকলেই তা ব্যবহার করতে হবে তা তিনি মনে করেন না৷ ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ইরান ‘পিছু হটেছে’ বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ ইরানের এমন অবস্থান সকল পক্ষ এবং বিশ্বের জন্যেও ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Mehr
‘সন্ত্রাসী সোলেইমানি’
ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে বিশ্বের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, হেজবুল্লাহর মতো ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, রাস্তার পাশে বোমা পেতে রাখা এবং হাজার হাজার মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ ছিল সোলেইমানির বিরুদ্ধে৷
ইরানের সঙ্গে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি ‘ছুঁড়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ ওবামার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চু্ক্তিতে স্বাক্ষর করলেও ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর চুক্তি থেকে নাম প্রত্যাহার করেন৷ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো- জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনকেও চুক্তি বাতিল করতে আহ্বান জানালেন ট্রাম্প৷ সোলেইমানি হত্যার পর ইরান এ চুক্তি না মানার ঘোষণা দিয়েই রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
‘চুক্তির টাকায় সন্ত্রাস’
ট্রাম্প দাবি করেন, পরমাণু চুক্তির ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে পাওয়া অর্থে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ চালাচ্ছিল ইরানের বর্তমান সরকার৷ তিনি বলেন, এর ফলে ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান এবং ইরাক ‘নরকে’ পরিণত হয়েছে৷
ছবি: AFP/Iranian Presidency
আরো অবরোধ
ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি৷ নতুন অবরোধ কেমন হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উঠে আসেনি তার বক্তব্যে৷ তবে ইরান তার ‘ব্যবহার’ পরিবর্তন করার আগ পর্যন্ত এ অবরোধ জারি থাকবে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Brandon
নতুন অস্ত্র আসছে
মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট ন্যাটোকে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ নিজের প্রশাসনের অধীনে আড়াই লাখ কোটি ডলার খরচ করে মার্কিন সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷ আমাদের বড়, শক্তিশালী, নির্ভুল, প্রাণঘাতি এবং দ্রুতগামী মিসাইল রয়েছে৷ হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/U.S. Department of Defense/S. Apel
ইরানের প্রতি আহ্বান
ভাষণের শেষে ইরানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এবং জনতাকে সম্বোধন করেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইরানিদের জন্য ‘দারুণ’ এক স্বপ্নের ভবিষ্যত চান তিনি৷ যারা শান্তি চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে অ্যামেরিকা সর্বদা প্রস্তুত বলেও ভাষণে বলেন ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
10 ছবি1 | 10
ইউরোপের তিনটি দেশ এই বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছে। জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে বিশ্ব জুড়ে পরমাণুঅস্ত্রের যে ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে, তাতে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে ইরানকে বুঝিয়ে দিতে হবে, তারা যা বলছে, বাকি পৃথিবী তা মেনে নিচ্ছে না। যদিও একই সঙ্গে এই তিনটি দেশই বলেছে, অ্যামেরিকা যে ভাবে আগ্রাসী পদ্ধতিতে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তারা তা করবে না। তারা চায় এ বিষয়ে কূটনৈতিক আলোচনার দরজা খুলে যাক। ইরান আলোচনায় বসুক।
রাশিয়াও বিষয়টির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। কিন্তু ইউরোপের তিনটি দেশ যে ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, রাশিয়া তার বিরোধিতা করেছে। রাশিয়ার বক্তব্য, এমনিতেই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে, তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল। তার উপর এখন ইরানকে এ ভাবে হুমকি দিলে তা পরিস্থিতি আরও জটিল করবে।
ইরান অবশ্য জানিয়েছে, জাতি সঙ্ঘের এই চুক্তিকে বাঁচানোর জন্য যে কোনও গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে তারা তৈরি। অতীতেও তারা তাই করেছে। তবে একই সঙ্গে ইরানের বক্তব্য, অমান্য করার কোনও ইচ্ছা তাদের নেই। তবে একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, ইউরোপের দেশ গুলি যে হুমকি দিয়েছে, তা বাস্তবে ঘটলে প্রতিক্রিয়া হবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ইরান চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। আর তা হতে দেওয়া যাবে না। এ বার প্রশ্ন করতেই হবে।