যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বের অনেক দেশেই চলছে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ বিক্ষোভ-প্রতিবাদ৷ নানা জায়গায় বিতর্কিত মূর্তি ভেঙেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ এবার ভাংলেন ব্রিটেনে৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহান্তের মতো এই সপ্তাহান্তেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়েছে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ৷
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রিচমন্ডে ১৮৯১ সালে স্থাপন করা জেনারেল উইলিয়াম কার্টারের মূর্তি, মিশিগানের সাবেক বর্ণবাদী মেয়র অরভিল হুবার্টের মূর্তিসহ বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির মূর্তি বিক্ষোভকারীরা ভেঙে ফেলে ৷
বর্ণবাদ রোখার সাত উপায়
কিছু মানুষের কাজই বিভেদ সৃষ্টি করা, বিদ্বেষ ছড়ানো৷ বর্ণ, ধর্ম, জাতপাত, সংখ্যা, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে বর্ণবাদ ছড়ানোর এসব প্রয়াস রুখে দেয়া খুব জরুরি৷ কীভাবে তা সম্ভব? দেখুন সাতটি উপায়...
ছবি: Imago Images/PhotoAlto/F. Cirou
বাকস্বাধীনতার ‘হামলা’ পরিহার
ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র- এভাবে ছোট থেকে খুব বড় পরিসরে বিভিন্ন রূপে থাকে বর্ণবাদ৷ মুখের কথায়ও তা ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে৷ ক্যানাডার অ্যালবার্টা সিভিল লিবার্টিজ রিসার্চ সেন্টার বলছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ হিসেবে যা কিছু বলা বা লেখার মাধ্যমেও তা ব্যাপক হারে ছড়ায়৷ তাই ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির নামে পক্ষপাত বা ঘৃণা প্রকাশ পরিহার করুন৷
ছবি: AP
উদারতায় শ্রেষ্ঠত্ব, অহঙ্কারে নয়
উদারতায় শ্রেষ্ঠত্ব, অহঙ্কারে নয়৷ ধর্ম, জাতপাত, গায়ের রং, উচ্চতা, ভাষা, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করাও বর্ণবাদের নামান্তর৷ যে সমাজ বা রাষ্ট্রে এসব প্রবণতা যত কম, সেই সমাজ বা রাষ্ট্র তত বেশি বর্ণবাদমুক্ত৷
ছবি: Colourbox
অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতা বর্জন
কারো মত বা কাজ পছন্দ না হলে তাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করার প্রবণতা প্রায় সব সমাজেই দেখা যায়৷ এমন অসহিষ্ণু এবং বিদ্বেষপূর্ণ আচরণে বর্ণবাদ বিস্তৃতি পায়৷ গালাগাল, হুমকি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ইত্যাদিও এমন আচরণের অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: Imago/Indiapicture
ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ান
যে কোনো স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্ত , শ্রেণি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অশ্লীলতা কিংবা কুৎসা ছড়ানোর অপপ্রয়াস না রুখলে অপশক্তির সক্রিয়তা বাড়ে৷ ফলে ঘৃণার সঙ্গে সঙ্গে নানা পর্যায়ে বর্ণবাদও বাড়ে৷ মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রতিটি মানুষের উচিত এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো৷
ছবি: Imago/E. Biba
রুখে দিন সাইবার দুনিয়ার বর্ণবাদ
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা শাস্ত্র বিষয়ক তথ্যের উৎস সায়েন্সডাইরেক্ট ডটকম দশ বছরের এক গবেষণা শেষে বলেছে, ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে সাইবার দুনিয়ায় বর্ণবাদী তৎপরতা ব্য্যাপকহারে বেড়েছে৷ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীগতভাবে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের বর্ণবাদী প্রচার৷ যে কোনো সমাজে বর্ণবাদ রুখতে সাইবার দুনিয়ায় মানবিকতার প্রসার জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
প্রমান রাখুন, কর্তৃপক্ষকে জানান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর যে কোনো বক্তব্যের প্রমাণ রেখে দেয়া উচিত৷ অনেক সময় সম্মান এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সাইবার অপরাধ দমন বিভাগকে প্রমাণসহ বিষয়টি জানানো জরুরি হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXAPP/R. Brunel
সংঘাত নয় সমর্থন চান
সব দেশের সব মানুষের সুখে শান্তিতে থাকার অধিকার আছে৷ কারো বর্ণবাদী আচরণে শান্তি বিঘ্নিত হলেও সংঘাতে না যাওয়া ভালো৷ সংঘাতে অনেক সময় সমস্যা বাড়ে৷ তাছাড়া সংখ্যা বা শক্তিতে পিছিয়ে থাকাদেরই বেশি টার্গেট করে বর্ণবাদীরা৷ সেক্ষেত্রে প্রতিকার বা আত্মরক্ষার জন্য ‘প্রতিবেশীদের’ সমর্থন বা সহযোগিতা চান৷
ছবি: picture-alliance/E.Topcu
7 ছবি1 | 7
রবিবার ব্রিটেনের ব্রিস্টল শহরে এডওয়ার্ড কলস্টনের মূর্তিটিও দড়ি দিয়ে টেনে ফেলে নদীতে ফেলে দেয়া হয়৷ নদীতে ফেলার আগে ক্র্রীতদাস ব্যবসায়ী থেকে বিশ্ব পরিব্রাজক হয়ে ওঠা কলস্টনের মূর্তির মুখে লাল রং লেপে দেন বিক্ষোভকারীরা৷
১৬৮০ সালে রয়্যাল আফ্রিকান কোম্পানিতে যোগ দেন কলস্টন৷ তারপর দীর্ঘদিন ক্রীতদাস ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ বছরে অন্তত পাঁচ হাজার কৃষ্ণাঙ্গকে আফ্রিকা থেকে কিনে বিক্রি করতো রয়্যাল আফ্রিকান কোম্পানি৷
ক্রীতদাস কেনাবেচায় সরাসরি জড়িত কলস্টনের মূর্তি নদীতে ফেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ লেবার পার্টির সাংসদ ক্লাইভ লুইসসহ অনেক ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ বিতর্কিত এই মূর্তি অপসারণকে সমর্থন জানিয়েছেন৷
তবে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল৷ তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ এবং পুলিশের বর্ণবাদী আচরণ বন্ধের দাবি থেকে আন্দোলন যে অন্যদিকে সরে যাচ্ছে, এ ঘটনা তারই প্রমাণ৷