1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার ভোট দিলেন গুজরাট দাঙ্গার বলি বিলকিস বানো

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৩০ এপ্রিল ২০১৯

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় বিভত্স হিংসার শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানো এবং তাঁর পরিবার৷ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি৷ অবশেষে সুপ্রিম কোটের কাছে ন্যায় বিচার পেলেন তিনি৷

Indien Wahlen Haryana Wähler Warteschlange
ছবি: picture-alliance/AP Photo

অপরাধীদের শাস্তি হয়েছে. বিলকিসকে দেওয়া হয়েছে মোটা ক্ষতিপূরণ, চাকরি ও বাসস্থান৷ দুঃস্বপ্নের দিন কাটিয়ে গত মঙ্গলবার স্বামীসহ তিনি ভোট দিলেন চলতি নির্বাচনে৷

চলতি সংসদীয় নির্বাচনের মাঝে উঠে এলো আবার গুজরাট দাঙ্গাপ্রসঙ্গ৷ ২০০২ সালের তেসরা মার্চ৷ সবরমতী এক্সপ্রেসে কর সেবকদের কামরায় আগুন লাগার পরের দিন গুজরাট দাঙ্গায় গণধর্ষণের শিকার হন বছর কুড়ির গৃহবধূ বিলকিস বানো৷ তখন তিনি ছিলেন গর্ভবতী৷ চোখের সামনে খুন হতে দেখেন তাঁর সাড়ে তিন বছরের শিশুকন্যাকে৷ তাকে দাফন করাও সম্ভব হয়নি৷ হিংসা ও রক্তপাতের বন্যায় ভেসে যায় শিশুকন্যা সালেহার লাশ৷ ঐ উন্মত্ত হিংসায় খুন হন পরিবারের আরো ১৪জন সদস্য৷ তখন থেকে শুরু হয় বিলকিসের আপোষহীন আইনি লড়াই৷ অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার জন্য গুজরাট সরকারকে নির্দেশ দেন৷ শুধু তাই নয়, নির্দেশ দেন বিলকিস বানোকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, সরকারি চাকরি এবং বাসস্থান দেয়ার৷ গত ১৭ বছরে বিলকিস ও তাঁর স্বামী-সন্তানদের অন্তত ২০ বার আস্তানা পালটাতে হয়৷

 শীর্ষ আদালতের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর দিল্লির প্রেস ক্লাবে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন৷ বলেন, তাঁর মানসিক যন্ত্রণা যে, শীর্ষ আদালত বুঝতে পেরেছেন, তারজন্য তিনি কৃতজ্ঞ৷ ১৭ বছর ধরে বিলকিস বানোর লাগাতার লড়াই শুধু ধর্ষণকারী বা দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধেই ছিল না, তত্কালীন গুজরাট পুলিশ প্রশালনের বিরুদ্ধেও ছিল৷ কেননা, তত্কালীন গুজরাট সরকার আক্রান্তদের পাশে না দাঁড়িয়ে ক্রমাগত আড়াল করার চেষ্টা করে যায় দুষ্কৃতিদের৷ শুরুতে বিলকিসের অভিযোগকে আমলই দিতে চায়নি পুলিশ৷ তবু হার মানেননি গুজরাটের এই গৃহবধূ৷ স্বামী, সন্তান নিয়ে প্রাণের ভয়ে আস্তানা পালটাতে হয়েছে ২০ বার৷

এবার নতুন করে জীবন শুরু করবেন, বললেন বিলকিস বানো৷ স্বামী ইয়াকুব রসুলকে সঙ্গে নিয়ে গুজরাটের দাহোদ পোলিং বুথে হাসি মুখে ভোট দেন তিনি৷ উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর হয়ে বিলকিস মামলার তদন্ত করেছিলেন পুলিশ অফিসার বিবেক দুবে৷ ঘটনাচক্রে তিনিই এখন পশ্চিম বাংলায় নির্বাচন কমিশনের তরফে নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক৷

ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা তিনি কিভাবে খরচ করতে চান? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিলকিস জানান, মেয়ে সালেহা, যার লাশ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি, তার স্মৃতিতে কিছু টাকা তিনি তুলে রাখবেন আলাদা করে, সাম্প্রদায়িক হিংসা আর ধর্ষণের শিকার হওয়া মহিলা এবং সন্তানদের সাহায্যের জন্য৷ আর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, তাঁর বড় মেয়ে আসরত চায় আইন পড়ে উকিল হতে৷ যে শীর্ষ আদালত তাঁকে ন্যায়বিচার দিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েই একদিন যাতে সওয়াল করতে পারে আসরত, সেজন্য তাঁর পড়াশুনা বাবদ প্রয়োজনীয় টাকা খরচ করতে চান৷

নারীশক্তির জয় ছাড়াও ভারতীয় সংবিধানের মর্যাদা তুলে ধরা:মীনাক্ষি গাঙ্গুলি

This browser does not support the audio element.

ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে বিলকিস বানোর জয়কে কিভাবে দেখছেন– জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বন, ‘‘বিলকিস বানোর ন্যায়বিচার আগেও হয়েছিল, যখন সুপ্রিম কোর্ট এই কেসটা গুজরাট থেকে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ সেই সময় ভয় ছিল গুজরাটে বিচার হলে অভিযুক্তরা হয়ত ছাড়া পেয়ে যেতে পারে৷ দেখা গেল বিলকিস বানোর মামলায় যারা জড়িত ছিল, তাঁদের অনেকেই দোষী সাব্যস্ত হয়৷ এরপরের যে জয়টা হয়, সেটা বিলকিস বানোর মানহানির মামলার জয়৷ মানবাধিকারের জয়৷''

এই মামলার অন্য দিকও আছে৷ যেসব মানবাধিকার কর্মী বিলকিস বানোকে সমর্থন করে এসেছেন, অন্য রাজ্যে তাঁরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছিলেন৷ সবথেকে বড় কথা, বিলকিস বানো যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, সেটা তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে জানাজানি হওয়া সত্বেও তিনি লড়ে গেছেন৷ সব মিলিয়ে বিলকিস বানো ন্যায়বিচার আদায় করতে পেরেছেন, কারণ, অনেক সময় দেখা গেছে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও নানা ছুতোয় তারা ছাড়া পেয়ে গেছে৷ এটাকে কি নারীশক্তির জয় বলা যায় ? উত্তরে মীনাক্ষি গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নারীশক্তির জয় তো বটেই, একই সঙ্গে ভারতীয় সংবিধানের মর্যাদা তুলে ধরাও কম কথা নয়, কারণ, বিলকিস বানো দেশের সংবিধান এবং বিচার ব্যবস্থাকে হাতিয়ার করেই আইনি লড়াইয়ে জিতেছেন৷ আমরা ২০০২-এর পর ২০১২-তে দেখলাম৷ ২০১৩-তে নতুন আইন আনা হলো, যাতে  যৌন হিংসা থেকেরেহাই পাওয়া যায়৷ কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় সেটা হচ্ছে না৷ প্রথমত, পুলিশ এফআইআর নিতে ইতস্তত করে৷ নানা রকম টালবাহানা করে৷ এড়িয়ে যেতে চায়৷ তার উপর আসামি যদি প্রভাবশালী হয়, তাহলে পুলিশের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়৷ মানে যেটা বলতে চাইছি, সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা দরকার৷ কিন্তু সেটা হচ্ছে না৷ তবে একেবারেই হয়নি, তা নয়৷ নিশ্চয়ই হয়েছে৷ মি-টু'র কথাই ধরুন৷ যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ হওয়া উচিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ