এবার মণিপুর থেকে মুম্বই ন্যায় যাত্রায় রাহুল গান্ধী
২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
মণিপুর থেকে মুম্বই। লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর, পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতজুড়ে জনসংযোগ যাত্রায় নামছেন রাহুল গান্ধী।
বিজ্ঞাপন
রাহুল গান্ধীর এই যাত্রা শুরু হবে আগামী ১৪ জানুয়ারি। চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। এপ্রিল-মে থেকে শুরু হয়ে যাবে লোকসভার নির্বাচন। ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা হেঁটে ও বেশিরভাগটা বাসে করে ভারতের প্রায় ছয় হাজার দুইশ কিলোমিটার পথে রাহুল ভারত ন্য়ায় যাত্রা করবেন।
এর আগে তিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার ভারত-জোড়ো যাত্রা করেছিলেন। তাতে ১২টি রাজ্যের উপর দিয়ে গিয়েছিলেন রাহুল। সেই যাত্রায় জোর ছিল দক্ষিণ ভারত ও কাশ্মীরের উপর। এবারের যাত্রা আরো ব্যাপক। ১৬টি রাজ্যের উপর দিয়ে যাবে এই যাত্রা।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ও কে সি বেনুগোপাল জানিয়েছেন, বিস্তারিত যাত্রাপথ কয়েকদিন পর জাননো হবে। তবে এই যাত্রা মণিপুর থেকে শুরু হয়ে মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত হয়ে মহারাষ্ট্র ঢুকবে। শেষ হবে মুম্বইতে।
যাত্রার উদ্দেশ্য
কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন, ''রাহুলের এই যাত্রা হলো আর্থিক ন্যায়, সামাজিক ন্যায় ও রাজনৈতিক ন্যায়ের জন্য। এর উদ্দেশ্য হলো গণতন্ত্রকে বাঁচানো, সংবিধানকে বাঁচানো, মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব থেকে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা।''
কংগ্রেসের একাল-সেকাল
ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ২০১৯-এর নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বর্তমানে কিছুটা পিছিয়ে দলটি৷ ভারতের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দলের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসার গল্প নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিষ্ঠা
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ অফিসার অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্যোগে ১৮৮৫ সালে বোম্বে, অর্থাৎ আজকের মুম্বই শহরে জন্ম নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস৷ তৎকালীন বৃটিশ শাসকের সাথে সাধারণ ভারতীয় জনতার সংলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে কংগ্রেস৷ প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী উমেশচন্দ্র বনার্জী৷ তখন দলের প্রতীক ছিল চরকা৷
ছবি: DW/Payel Samanta
স্বাধীনতার লড়াইয়ে ভূমিকা
ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস৷ দলটি ছিল নানা মতের মিলনমেলা৷ একদিকে গান্ধী, নেহরু, জিন্নাহ’র মধ্যপন্থা, বিপরীতে ঋষি অরবিন্দ, লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক ও সুভাষচন্দ্র বসু’র চরমপন্থি জাতীয়তাবাদ — দলটি যেন দেশের মানুষের মতোই বিচিত্র, বহুমুখী৷
ছবি: picture alliance/AP Images
মতবিরোধ এবং সুভাষ বসুর দলত্যাগ
গান্ধী ও সুভাষের মধ্যেও মতবিরোধ ছিল৷ গান্ধী মনোনীত প্রার্থী, পট্টভি সীতারামাইয়াকে হারিয়ে ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন সুভাষ৷নিরস্ত্র আন্দোলন না সশস্ত্র আন্দোলন — কোন পথে লড়বে কংগ্রেস? এই প্রশ্নে উত্তাল দলের অভ্যন্তর৷ মতাদর্শগত টানাপড়েনের মুখে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র দল, ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ৷ কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজেন্দ্র প্রসাদ, যিনি পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন৷
ছবি: Public Domain
দাঙ্গা
ব্রিটিশরা সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ বপন করেছিল, তার ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা৷ ১৯৪৬ সালে জিন্নাহ’র নেতৃত্বে মুসলীম লীগ মুসলমানদের জন্য পৃথক অঞ্চলের দাবিতে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক চাপ বাড়লে কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়৷ ৪০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান ও লক্ষাধিক হন গৃহহীন৷ আস্তে আস্তে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জন্য তৈরি হতে থাকে ভারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
কংগ্রেস ও দেশভাগ
দাঙ্গার দগদগে ঘা নিয়েই ১৯৪৭ সালে অর্জিত হয় স্বাধীনতা৷ তবে অখণ্ড ভারত থাকেনি৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় দেশ, জন্ম নেয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান৷ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন গান্ধীবাদী জওহরলাল নেহরু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন গান্ধী
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি চরমপন্থি হিন্দু মহাসভার সদস্য, নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী৷ গান্ধী বেঁচে থাকাকালীন পাকিস্তান নিজেকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করলে হিন্দু মহাসভার মতো কিছু গোষ্ঠী ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ঘোষণার উদ্যোগ নেয়৷ গান্ধীর মৃত্যুকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরে নেহরু বিভিন্ন চরমপন্থি হিন্দু গোষ্ঠীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/K. Gandhi
নেহরুর নেতৃত্বে ভারতবর্ষ
জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস ১৯৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়৷ ১৯৬৪ পর্যন্ত দল ও দেশের নেতৃত্ব দেন নেহেরু৷ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম নেতা হিসেবে পরিচিত নেহরু ‘জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ও ‘সবুজ বিপ্লব’-এর মতো ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভেতরে ও বহির্বিশ্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷
ছবি: AP
ইন্দিরার হাত ধরে পরিবারতন্ত্রের শুরু
নেহরু-কন্যা ইন্দিরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪ অবধি তাঁর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেন৷ ১৯৬৪ সালে নেহরুর মৃত্যুর পর দলের হাল ধরেন ইন্দিরা৷ তবে ১৯৫৯ সালেই কংগ্রেসের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷ নেহরুর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন লালবাহাদুর শাস্ত্রী৷ ১৯৬৬ সালে তাঁরও মৃত্যু হলে ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/united archives
জরুরি অবস্থায় কংগ্রেস
১৯৭৫ সালের ভোটে কারচুপির অভিযোগে সারা দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওঠে ইন্দিরা-বিরোধী আওয়াজ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন ইন্দিরা৷ জরুরি অবস্থার শেষে পুনর্নিবাচনে কংগ্রেস হেরে যায়৷
ছবি: imago/ZUMA/Keystone
নতুন প্রতীক, নতুন আঙ্গিকের কংগ্রেস
১৯৫১ সাল পর্যন্ত দলের প্রতীক ছিল চরকা৷ ১৯৫২-৭১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রতীক ছিল হাল ও বাছুর৷ ১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ইন্দিরার নতুন দল কংগ্রেস (আই)-এর প্রতীক হয় হাত৷ পরে তা হয় একত্রিত কংগ্রেসের প্রতীক৷ বর্তমানে কংগ্রেসের প্রতীক ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে ডান হাত৷ ১৯৮০ সালে ইন্দিরার নেতৃত্বে আবার ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস৷ পুত্র সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর ইন্দিরা রাজনীতিতে নিয়ে আসেন দ্বিতীয় পুত্র রাজীবকে৷
ছবি: AP
ইন্দিরার প্রয়াণ, রাজীবের আগমন
১৯৮৪ সালে শিখ চরমপন্থিদের ঠেকাতে ইন্দিরা শুরু করেন ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’৷ স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন, যা শিখ ধর্মাবলম্বীদের একাংশকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে৷ সে বছরের অক্টোবর মাসের শেষে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী ভারতের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/Sven Simon
রাজীব গান্ধীর অকালমৃত্যু
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজীব৷ ১৯৮৭ সালে তিনি শ্রীলঙ্কায় শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে চরমপন্থি তামিল গোষ্ঠী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর রোষের মুখে পড়েন৷ ১৯৯১ সালে নির্বাচনের প্রচার করার সময় এলটিটিই কর্মীদের আত্মঘাতী বোমায় মারা যান রাজীব৷ ফলে আবার নেতৃত্বের সংকটে পড়ে কংগ্রেস৷
ছবি: Getty Images/AFP
পরিবারতন্ত্রে সাময়িক ছেদ
রাজীবের মৃত্যুর পর কংগ্রেস সভাপতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন পিভি নরসিংহ রাও৷ পাশাপাশি চলতে থাকে রাজীব গান্ধীর ইটালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনার প্রস্তুতি৷ বিজেপির নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় আসে এনডিএ জোট সরকার৷ ২০০৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Hadebe
ক্ষমতায় আসা যাওয়া
২০০৪ সালে সোনিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে কংগ্রেস৷ তবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাননি সোনিয়া৷ সেই দায়িত্ব পান মনমোহন সিং৷ কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের ইউপিএ জোট সরকারের সাথে জুড়তে থাকে ‘টু-জি মামলা’ বা কয়লা কেলেঙ্কারির মতো দুর্নীতির অভিযোগ৷ ২০১৪ সালে মাত্র ৪৪টি আসন জিতে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস৷ ২০১৭ সালের শেষে সোনিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নিলে দলের নেতৃত্ব নেন রাজীব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল৷
ছবি: Reuters/B. Mathur
দলের নেতৃত্বে রাহুল গান্ধী
২০১৩ সালে উপ-সভাপতি হওয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আগমনের পথ ধরেছিলেন রাহুল৷ ২০১৪’র নির্বাচনে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভরাডুবি হয়৷ এর জন্য তাঁর নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করেন অনেকে৷ তবে ২০১৯ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে কংগ্রেস৷
ছবি: IANS
15 ছবি1 | 15
জয়রাম জানিয়েছেন, ''প্রথম যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ভারত-জোড়ো। এবার যাত্রা সাধারণ মানুষ যাতে ন্যায় পান তা নিশ্চিত করা।''
বেনুগোপালের বক্তব্য, ''এর সঙ্গে রাজনীতি বা ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। রাহুল এই যাত্রা ভোটের জন্য করছেন না। ভোটের জন্য আলাদা কর্মসূচি থাকবে। আর এই যাত্রায় রাহুলের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে-সহ বিভিন্ন নেতা থাকবেন। এই যাত্রা হবে মূলত বাসে করে। তবে মাঝেমধ্যেই হাঁটবেন রাহুল'।'
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি মুখপাত্র নলিন কোহলি এএনআইকে জানিয়েছেন, ''শুধু মুখে ন্যায়ের স্লোগান দিলে কিছু হয় না। ন্যায় তো তখন নিশ্চিত হয়, যখন দেশের ৮০ কোটি মানুষকে মোদী সরকার বিনা পয়সায় রেশন দেয়। ন্যায় তো তখনই পাওয়া যায় যখন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশাসের ফল মানুষ পান, যখন ভারত দশ নম্বর অর্থনীতি থেকে পাঁচ নম্বরে আসে, দেশের মর্যাদা বাড়ে। এটা গরিবি হঠাওয়ের মতো শূন্য স্লোগান নয়, ভারত জোড়ো যাত্রার মতো ব্যর্থ প্রয়াস নয়। ন্যায় মানুষকে দিতে হয়।''
হারে বিপর্যস্ত কংগ্রেস, ইস্তফার প্রস্তাব সোনিয়ার
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর কংগ্রেসে আবার প্রবল ডামাডোল। ইস্তফা দিতে চাইলেন সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াংকা। তবে তা গৃহীত হয়নি। সোনিয়াকেই আবার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ছবি: Atul Loke/Getty Images
কংগ্রেসের অবস্থা
পরপর দুইটি লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। তারপর একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। গান্ধী পরিবার আর কংগ্রেসকে জেতাতে পারছে না। দলের মধ্যে প্রবীণ নেতারা একজোট হয়ে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। আলাদা দল করার চিন্তাভাবনা চলছে। সবমিলিয়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো দলের অবস্থা খুবই খারাপ।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
ইস্তফা দিতে চাইলেন সোনিয়ারা
পাঁচ রাজ্যে হারের পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। রীতিমতো উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে সেখানে। বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী বলেন, কংগ্রেসের জন্য তিনি, তার ছেলে রাহুল ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা আরো একবার ত্যাগস্বীকার করতে রাজি। তারা সকলে এই হারের দায় নিয়ে ইস্তফা দিতে চান। তারা কেউ আর কোনো পদে থাকবেন না। নতুন নেতা নির্বাচন করা হোক
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.K. Singh
সোনিয়াকেই দায়িত্ব
ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা সোনিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সোনিয়াই দলের কার্যকরি সভাপতি থাকবেন। তিনি দলের পুনর্গঠনের জন্য যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। কংগ্রেসের হাল ফেরানোর জন্য যা করার দরকার তিনিই করবেন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
রাহুল গান্ধী: পদ নেই, নিয়ন্ত্রণ আছে
কংগ্রেসে রাহুল গান্ধীর কোনো পদ নেই। কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, এখনো দলে তার কথাই শেষ কথা। তিনিই প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান প্রচারকারী। সোনিয়া স্বাস্থ্যের কারণে আর প্রচারে যান না। রাহুলই সেটা সামলান। এবার প্রিয়াঙ্কাকে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও অন্য রাজ্যে প্রচার করতে দেখা গেছে। প্রতিবার হারার পর রাহুল বলেন, তিনি ও দল এই হারের থেকে শিক্ষা নেবেন। কিন্তু তারপরেও প্রতিটি নির্বাচনে একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
প্রিয়াঙ্কা পারলেন না
প্রিয়াঙ্কার উপর উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব ছিল। তিনি সেখানে মেয়েদের ভোট পেতে স্লোগান দিয়েছিলেন, লড়কি হুঁ, লড় সাকতি হুঁ। মেয়েদের ঢালাও প্রার্থী করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি জনসভা তিনি করেছেন। তারপরেও দেখা গেল, ৯৭ শতাংশ আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে একসময় কংগ্রেস নেতারা ব্রক্ষ্মাস্ত্র বলতেন, সেই প্রিয়াঙ্কা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Deep
কংগ্রেসের হাতে
কংগ্রেস এখন রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় আছে। আর মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে তারা জোটের সঙ্গে ক্ষমতায় আছে। ভারতে আর কোনো রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি পাঞ্জাব এখন আপের দখলে। এবার গোয়া, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। উপরের ছবিটি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের।
ছবি: Imago Images
রাজ্যসভায় শক্তি কমবে
যত রাজ্য কংগ্রেসের হাতছাড়া হচ্ছে, ততই রাজ্যসভায় তাদের শক্তি কমছে। এখনো রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদ কংগ্রেসের হাতে, কিন্তু তা অদূর ভবিষ্যতে হাতছাড়া হতে পারে। কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল, হরিয়ানা সহ বহু রাজ্যে তাদের হাতছাড়া হয়েছে। হারের এই মিছিল চলতে থাকলে তাদের অবস্থা ভবিষ্যতে আরো খারাপ হতে বাধ্য।
ছবি: picture-alliance/dpa/STR
কংগ্রেসে বিদ্রোহ
বেশ কিছুদিন হলো, প্রবীণ নেতারা গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। মোট ২৩ জন নেতা এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীতে আছেন। তাদের বলা হয়, কংগ্রেসের জি২৩। এর মধ্যে গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিবাল, আনন্দ শর্মারা আছেন। গত দুইদিনে তারা দুইবার মিলিত হয়েছেন। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা আলাদা দল গঠন করতে পারেন বলেও কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছেন। উপরের ছবিটি গুলাম নবি আজাদের।
ছবি: AP
চিদাম্বরমের বক্তব্য
সাবেক মন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বলেছেন, পাঞ্জাবে আপ ও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে, সেই জোটে জুনিয়ার পার্টনার হয়ে চলতে হবে কংগ্রেসকে। তার এই স্বীকারোক্তি কংগ্রেস মহলে আলোড়ন ফেলেছে।
ছবি: UNI
কী হবে?
সোনিয়া গান্ধী হেরে যাওয়া পাঁচ রাজ্যের সভাপতিকে বরখাস্ত করেছেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে নভজ্যোত সিং সিধুও আছেন। কিন্তু কংগ্রেসেই প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত কি যথেষ্ট? কংগ্রেস ও তার নেতাদের চাল-চরিত্র-চেহারা বদল না হলে দল কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? গান্ধী পরিবার কি দলকে জয়ের পথে আনতে পারবে? নাকি, এভাবেই ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে কংগ্রেস?
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মুখপাত্র মনোজ পাণ্ডে পিটিআইকে বলেছেন, ''রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার বিপুল প্রভাব পড়েছিল। এই ন্যায় যাত্রারও পড়বে। উত্তরপূর্ব, পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এই যাত্রা হবে। এর ফলে কংগ্রেস তো বটেই সামগ্রিকভাবে ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি উপকৃত হবে।''
যাত্রার সুফল
একসময় লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রার প্রধান আয়োজক হিসাবে থাকতেন গোবিন্দাচার্য। তিনি বলতেন, এই যাত্রার সবচেয়ে বড় লাভ হয়, সাধারণ মানুষ দলের নেতাদের সামনে থেকে দেখতে পানা। তাদের কথা শুনতে পান। এর ফলে জনমত গড়ে ওঠে।
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই ধরনের যাত্রার দুইটি খুব ভালো দিক আছে। প্রথমটি অবশ্যই যে জায়গা দিয়ে যাত্রা যাবে, সেখানকার ও আশপাশের মানুষদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। এই জনসংযোগের পাশাপাশি দ্বিতীয় লাভ হলো, দলের কর্মীরা এর ফলে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এমনিতে হাইকম্যান্ড বা রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগে ঘাটতি থাকে। এই ধরনের যাত্রা কর্মী ও নেতাকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। তার প্রভাব আমরা কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে দেখেছি। ভারত জোড়ো যাত্রার প্রভাব সেখানে পড়েছে।''
জয়ন্তর মতে, ''গান্ধীজি এইভাবে জনসংযোগ করতেন। সুভাষচন্দ্র মূলত ট্রেনে যাতায়াত করতেন। যাত্রাপথে বা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে মিশতেন। স্বাধীনতার পর নেহরু মূলত জনসভার মাধ্য়মে এই জনসংযোগ করেন। তবে গান্ধীজি ও সুভাষ বোসের জনসংযোগ ছিল অতুলনীয়।''
সাংবাদিক মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই ধরনের যাত্রা একজন রাজনীতিককে পরিণত করে। এতে ভোটে খুব বেশি সুবিধা হয়ত হয় না। কিন্তু একজন রাজনীতিকের জন্য এই যাত্রা খুবই জরুরি বলে আমার মনে হয়।''