1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার লক্ষ্য লোকসভা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৩০ জুলাই ২০১৩

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের রায় গেল তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষে৷ এর পর কী হতে চলেছে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, সেটাই আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে এখন সবকটি রাজনৈতিক দলের সামনে একমাত্র হোমওয়ার্ক৷

Bilder unseres DW-Hindi-Korrespondenten Prabhakar Mani Tewari in Kolkata, der uns auch die Rechte daran überlässt. Zulieferer: Priya Esselborn Bengal Election Description: Masks of the prominent leaders like Chief Minister Mamata Banerjee are also being sold in the market. Pix Taken in Kolkata on 03-07-2013.
ছবি: DW/P. Mani Tewari

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, তবে পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকাগুলোর অদল বদল হয়ে গিয়েছে৷ পঞ্চায়েত ভোটে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট জনরায় নিয়ে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটে অনেক আসনেই তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন৷ অনেক জায়গায় সবকটি ভোট বিজিত তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে পড়েছে এবং বামফ্রন্টের ঘাঁটি বলে পরিচিত জেলাগুলিতে লক্ষ্যণীয়ভাবে ব্যাপকভাবে জিতেছে তৃণমূল৷ কার্যত পশ্চিমবঙ্গে চলতি নিম্নচাপজনিত ঝিরঝিরে বৃষ্টিতেই ধুয়েমুছে গিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্ট৷

এবং বিরোধী দলের স্বভাব-মতোই বামফ্রন্ট বলতে শুরু করেছে, ব্যাপক রিগিং এবং ছাপ্পাভোট করেছে তৃণমূল, ভোটের পর ব্যালট বাক্স লুট হয়েছে, গণনার সময় বিরোধী কাউন্টিং এজেন্টদের মেরেধরে বার করে দিয়ে, ব্যালট নিয়ে কারচুপি হয়েছে৷ শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে অবশ্য এই জাতীয় অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণার সময় থেকেই৷ ঠিক যে ভাবে এক কালের শাসক বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠত বিরোধী প্রার্থীদের ভয় দেখানোর, সন্ত্রাস ছড়ানোর এবং জোর জবরদস্তি এক তরফা ভোট করে জিতে যাওয়ার৷

কাজেই শাসক-বিরোধীর ভূমিকার অদলবদল ঘটলেও এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তিতে নতুন কিছু নেই৷ কিন্তু নতুন কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের এই ফলাফল থেকে৷ তার মধ্যে সবথেকে বড় শিক্ষা হল, শহুরে মিডিয়া, বিশেষত টেলিভিশন মিডিয়া যা-ই ভাবুক, বলুক এবং মানুষকে বোঝাতে চাক, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ওপর ভরসা রাখতে চান৷ এ ক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত ফের তাদের পুরনো জোট সহযোগী তৃণমূলের কাছেই মাথা নিচু করে ফিরে আসে কিনা, সেটা এবার দেখার৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরির খাসতালুক মুর্শিদাবাদ ছাড়া আর কোথাও সুবিধে করতে পারেনি কংগ্রেস৷ এমনকি উত্তরবঙ্গের ফলাফলও আদৌ স্বস্তি দিচ্ছে না কংগ্রেসকে৷

অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানেই আটকে থাকা বামফ্রন্ট যতই নির্বাচনী কারচুপি আর বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে হল্লা করুক, অথবা প্রাক নির্বাচনী সন্ত্রাসের অভিযোগে, বাংলার মাটিতে তাদের বহুখ্যাত সংগঠনের দুরবস্থা এবং দুর্বলতা কিন্তু আজ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট৷ শুধু বর্ধমান নয়, বাঁকুড়া, বীরভূমে বামেদের ঘাঁটি এলাকাগুলোতেও তৃণমূলের নিশান উড়ছে৷ কোচবিহারে বামফ্রন্ট শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের খাসতালুক ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল৷ বরং জলপাইগুড়ির ভাল ফল কিছুটা মুখরক্ষা করেছে বামফ্রন্টের৷ অন্যদিকে জঙ্গলমহলেও তৃণমূলের জোয়ারে প্রায় ধুয়েমুছে গিয়েছেন ফ্রন্ট প্রার্থীরা৷

তৃণমূল উল্লেখযোগ্যভাবে জিতেছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে, জিতেছে হুগলিতে এবং উত্তর ও দক্ষিণ, দুই ২৪ পরগণায়৷ ভোটের ফলে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে, সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি কোনও প্রভাব ফেলেনি৷ কামদুনি ধর্ষণ কাণ্ড অথবা অন্যান্য নিগ্রহ বা সন্ত্রাসের ঘটনাতেও প্রভাবিত হয়নি জনমত৷ ফলে যেসব বিশেষজ্ঞরা টিভি-তে এবং পত্র-পত্রিকায় শাসক তৃণমূলের মুন্ডুপাত করতে শুরু করেছিলেন, তাঁরা এখন ঢোক গিলে বলতে শুরু করেছেন, প্রমাণ হল, গ্রাম বাংলার বিশ্বাস সহজে টলে না৷

কিন্তু একটা কথা সম্ভবত সবাই ভুলে গিয়েছিলেন৷ যে সন্ত্রাস এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ বার বার উঠেছে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, সেই একই অভিযোগ বহুবার উঠেছে পূর্বতন শাসকজোটের বিরুদ্ধে৷ কিন্তু সে সব অভিযোগ সত্ত্বেও ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সুযোগ পেয়েছে বামফ্রন্ট৷ কারণ, সম্ভবত ভোটাররা এই সহজ সত্যিটা মেনে নিয়েছেন যে, যে দলই সরকারে যাক, ক্ষমতায় থাকার সুযোগ তারা নেবেই৷ কাজেই আদর্শ ব্যবস্থা যেমন হয় না, আদর্শ সমাজের আশা করাটা নেহাতই ভুল৷ ভোটাররা সেই পরিণতমনস্কতা দেখিয়েছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে তাঁরা আরও একটা সুযোগ দিয়েছেন৷ কোনও মিডিয়া রিপোর্ট, কোনও বিশেষজ্ঞের মতামত তাঁদের সেই সুচিন্তিত মতামতকে বদলাতে পারেনি৷

ছবি: AP

পঞ্চায়েতের ফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সবথেকে বিচক্ষণ মতামত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বলেছেন, ফলাফলে তাঁর দলের প্রাপ্ত ভোটের যে হিসেব আন্দাজ করা যাচ্ছে, তার থেকে আভাস পাওয়া গিয়েছে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে গ্রাম বাংলায়৷ তিনি এবার সেই হিসেব নিয়েই বসতে চান৷ ইঙ্গিত পরিষ্কার৷ এবার আসন্ন লোকসভা ভোটের হিসেব কষতে চান আত্মবিশ্বাসী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ