ফখরুলকে চাকর-বাকর বললেন ডা. জাফরুল্লাহ
৭ সেপ্টেম্বর ২০২১এ বিষয়ে চেষ্টা করেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি৷ তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,"তিনি যদি এধরনের মন্তব্য করে থাকেন তবে তা সভ্যতার বাইরে৷''
মির্জা ফখরুল সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে ডা. জাফরুল্লাহকে বিভ্রান্তিকর ও উল্টাপাল্টা কথা না বলতে অনুরোধ করেছেন৷ তিনি বলেন,"জাফরুল্লাহ সাহেবের বয়স হয়ে গেছে৷ তিনি অত্যন্ত সম্মানিত লোক, জ্ঞানী-গুণী লোক৷ কিন্তু বয়স হয়ে গেলে মানুষ কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলতেই পারেন৷”
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, "বিএনপির গঠনতন্ত্র মেনে তারেক রহমানকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি৷'' এই কথার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব নাটোরে ওই কথা বলেন৷ বিএনপি মহাসচিবের দাবি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে আছেন৷
এর আগেও তারেক রহমানের নেতৃত্বের সমালোচনা করায় গত ২৬ জুন প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বক্তব্য দিতে দেননি৷ তাকে ওই ধরনের বক্তব্য আর না দিতে হুমকিও দেয়া হয়৷
মঙ্গলবার জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ছাত্রদলের ওই নেতাদের সাথে মির্জা ফখরুলের কোনো পার্থক্য নাই৷ তারা আমার বয়স নিয়ে চিন্তিত৷ কিন্তু তারা তো খালি চোখে দেখে না৷ আমি তো খালি চোখে দেখি৷ তারা তো ডিমেনশিয়ায় ভোগে, আমি তো ভুগি না৷ তাদের যে দীনতা, তাদের যে চিন্তার দীনতা তাতে তাদের বয়স হওয়ার আগেই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে৷”
তিনি এর আগেও একাধিকবার তারেক রহমানের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন৷ তাকে পড়াশুনার উপদেশ দিয়েছেন৷ বলেছেন,"লন্ডন থেকে ওহি নিয়ে দল চালানো যাবে না৷” তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলতে বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেছেন একাধিকবার৷ তিনি বলেছেন,"গুলশানের বাসার চেয়ে নাজিমুদ্দিন রোডে থাকাই খালেদা জিয়ার জন্য শ্রেয়৷ এভাবে চললে খালেদা জিয়াকে মানুষ দুই মাস পর ভুলে যাবে৷” তিনি তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকেও বিএনপির নেতৃত্বে আনার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকবার৷
মঙ্গলবারও তিনি বলেন,"খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কিছুই করেনি৷ তাদের মাঠে নামতে হবে৷ ঘরে বসে থাকলে হবে না৷ তাদের মিথ্যা কথা বলা ছাড়তে হবে৷” তিনি আবারো বলেন,"তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারেন না৷ তাদের গঠনতন্ত্র সেটা অনুমোদন করে না৷”
তিনি দাবি করেন,"আমি যা ঠিক মনে করি তাই বলি৷ সবার সমালোচনা করি৷ আমি শেখ হাসিনাকেও তো ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতে বলেছি৷ আমি দেশে রাজনীতি চাই৷ আমি চাই দেশে রাজনীতি সচল থাকুক৷ আমি যা ঠিক মনে করি তা সব সময়ই বলব৷”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবশ্যই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সিপাহশালার৷ তবে এখন প্রধান সমস্যা হলো সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা৷ সেটাকে মূখ্য ধরলে অন্যান্য বিষয় গৌণ৷ তিনি বলেন," সমস্যাটা হলো উনি একটি পার্টির মূল নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছেন৷ পার্টির সমালোচনা করছেন৷ সেটা উনি আমাদের কাছে এসে বলতে পারতেন৷ যে পার্টিটা এদশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে সবাই মনে করে সেই দলকেই যদি বিতর্কিত করে ফেলি সেটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সপক্ষে কাজ করা হচ্ছে কী না? উনি তো একজন প্রবীণ মানুষ৷ এটাই দেখার জন্যই মহাসচিব ওনাকে অনুরোধ করেছেন৷”
তিনি চাকর-বাকর প্রসঙ্গে বলেন,"এই ভাষায় কথা বলাটা সভ্যতার একটু বাইরে চলে যায়৷ গণতন্ত্র আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে, সভ্য হতে শেখায়, গণতন্ত্র আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন দেখায়৷ এই ধরনের ভাষা স্বৈরতান্ত্রিক ভাষাকেই উৎসাহিত করবে৷”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"অবশ্যই তার সাথে আমাদের সম্পর্ক থাকবে৷”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির বন্ধু হিসেবেই পরিচিত৷ বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এবং সমমনা দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তা বলা হয় তাকে৷