এবার রেলগাড়ির জন্য সবুজ বিদ্যুৎ
১ অক্টোবর ২০১০বগুড়ার আমির হোসেন৷ এক কথায় তাঁকে যদি বলা হয় আবিষ্কারক, তাহলে মোটেই ভুল বলা হবে না৷ তিনি বানিয়েছেন নানা যন্ত্র৷ গ্রামীণ এই বিজ্ঞানী এবার বানালেন পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়ি৷ এরই মধ্যে বগুড়া শহরে গাড়িটি চালিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ গাড়ির নাম রেখেছেন ‘রফ-রফ তাহিয়া' অর্থাৎ সুন্দর ও দ্রুততম যান৷ এই গাড়ি পরিবেশ-সহায়ক, তেল-মোবিল লাগছে না৷ শক্তির উৎস ১২ ভোল্টের পাঁচটি চার্জেবল ব্যাটারি আর ৬০ ভোল্ট ডিসি মোটর৷ না, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়৷ এই গাড়ি তিনি বানালেন কেবল পরিবেশকে বাঁচানোর বিষয়টি চিন্তা করেই৷
গাড়ি থেকে প্রতিদিন প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে এই পৃথিবীতে৷ এই কার্বন ডাইঅক্সাইড বা সিওটু হলো জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম নিয়ামক৷ আর তাই বিশ্বব্যাপী গাড়ি উৎপাদকরা এবার নেমেছেন সিওটু মুক্ত গাড়ি বাজারজাত করার কাজে৷ জার্মানি এগিয়ে যাচ্ছে এই কাজে৷
সম্প্রতি জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানির রাস্তায় অন্তত ১ লাখ বিদ্যুৎচালিত গাড়ি দেখতে চান বলে উল্লেখ করেছেন৷ আর এই কথার পরপরই গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো উঠেপড়ে লেগেছে ‘সবুজ গাড়ি' বানানোর কাজে৷ ইতিমধ্যে বাজারজাতও হতে শুরু করেছে পরিবেশ সম্মত গাড়ি৷ প্রায়ই রাস্তায় দেখা মিলছে আউডি কোম্পানির নতুন সবুজ গাড়ি নিয়ে ছুটে যাচ্ছে কোন ট্রাক৷
কিন্তু কেবল কি প্রাইভেট কার বা অটোর জ্বালানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনলেই হবে? আর কোন পরিবর্তন আসবে না? জার্মানির একটি রেললাইন ধরে ছুটে চলে লোকোমেটিভ ইঞ্জিন আর সঙ্গে অসংখ্য বগি৷ মূলত বিদ্যুৎ চালিত এখনকার রেলগাড়ি৷
ডয়চে বান৷ জার্মানির জাতীয় রেল সংস্থা৷ কেবল জার্মানিতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে এই সংস্থা৷ তারা এগিয়ে এসেছে ক্ষতিকর গ্যাস থেকে এই বিশ্বকে বাঁচাতে৷ নতুন এক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তারা৷ নাম ইকো প্লাস৷ এই প্রকল্পের আওতায় ধীরে ধীরে সকল রেল ইঞ্জিনকে রূপান্তর করা হবে সবুজ জ্বালানি নির্ভর করে৷ এই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয় গেছে৷
সনটা ২০০৮৷ তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয় পরিবেশ সম্মত রেলগাড়ি চালানোর৷ এই কার্যসূচি গ্রহণ করার পর ১৯৯০ সালের তুলনায় এখন তারা শতকরা ৪০ ভাগ কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে৷ নতুন করে পরিকল্পনার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বলেছে, আরও ২০ ভাগ কমানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে৷ আর ২০২০ সাল নাগাদ তাদের যানবাহন থেকে এই গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনা হবে একেবারে শূন্যের কোটায়৷ যেমনটা জানালেন এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ শাখার কন্সটানটিন ফোগট৷ বললেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ যান চলে বিদ্যুতে৷ এক কথায় শতকরা ৯৫ ভাগ৷ আমরা যা করছি তা হলো সনাতনী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে সরে আসা৷ আমরা নিচ্ছি নবায়নযোগ্য জ্বালানি৷ সেই পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ আমরা দিচ্ছি আমাদের যানবাহনে৷ এক কথায় সেগুলো চলছে সবুজ বিদ্যুতে৷'
এ ক্ষেত্রে ডয়চে বান জলবিদ্যুৎ এর উপর নির্ভরশীল হচ্ছে৷ এখন তারা নিজেরাই নতুন নতুন এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এছাড়া অন্য যাদের কাছ থেকে তারা বিদ্যুৎ কিনছে, জানিয়ে দিয়েছে, তাদেরকে বিদ্যুৎ দিতে হলে সবুজ বিদ্যুতই দিতে হবে৷ এক্ষেত্রে বায়ু বিদ্যুৎ এর প্রতিও রয়েছে তাদের আগ্রহ৷ ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠান একটি বৃহৎ বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনেও নিয়েছে৷ যা চলছে বেশ৷
কন্সটানটিন ফোগট এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের কথা স্পষ্ট, ‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত অবিচল৷ আমাদের অবস্থান পরিষ্কার৷ আমাদের সঙ্গে ভ্রমণ এবং পরিবহণ হবে ক্ষতিকর কার্বন গ্যাস মুক্ত৷'
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন