প্যারিসের পর ব্রাসেলস৷ পর পর দুই বার সন্ত্রাসী হামলা ব্যর্থ হওয়ায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ বেঁচে গেল৷ কিন্তু ইউরোপের বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলস শহরের কেন্দ্রস্থলে সেন্ট্রাল স্টেশনে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একটি আত্মঘাতী হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে৷ হামলাকারী একটি বিস্ফোরণ ঘটানোর পর এক সৈন্য তার দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়৷ পরে তার মৃত্যু হয়৷
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, হামলাকারী বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে চরম ইসলামপন্থি বুলি আওড়াচ্ছিল৷ তার কাছে একাধিক বিস্ফোরক ছিল বলে জানা গেছে৷ তবে বড় একটি বোমা অকেজো হয়ে পড়ায় সেটির বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি সে৷ স্টেশনে প্রবেশের মুখে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে দেখা যায়৷ পুলিশ চারিদিকে রাস্তা খালি করে স্টেশনে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে৷ আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়৷
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী শার্ল মিশেল সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী ও রেল কোম্পানির কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ তাঁদের পেশাদারি মনোভাব ও সাহসের প্রশংসা করেন তিনি৷
একটি টেলিভিশন কেন্দ্র বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, তদন্তকারীরা হামলাকারীর পরিচয় জানতে পেরেছে৷ তবে প্রকাশ্যে তা এখনো জানানো হচ্ছে না৷ ব্রাসেলসভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ক্লোদ মোনিকে বলেন, হামলাকারী সম্ভবত কট্টর ইসলামপন্থি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের উদ্যোগেই এই ষড়যন্ত্র করেছিল, যেমনটা প্যারিসসহ অন্য অনেক শহরেদেখা গেছে৷ তাঁর মতে, সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেট চাপের মুখে পড়ায় ইউরোপে হামলার আশঙ্কা বেড়ে গেছে৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷