প্যারিসকে আলোকনগর থেকে সবুজ নগরে রূপান্তর করতে ৭২ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে ফ্রান্স৷ এর মধ্য দিয়ে আইফেল টাওয়ারের চারপাশের ৩০ হেক্টর এলাকায় বনায়ন করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
প্যারিসের মেয়র আন হিদালগো বলেন, ‘নগর বন' তৈরি করে প্যারিসকে সবুজ এবং এর রাস্তাগুলোকে শীতল করা হবে৷ শহরে উদ্যান এবং বাগান তৈরি করা হবে৷ ২০২০ সালের মধ্যে ৩০ হেক্টর এলাকায় বনায়ন করা হবে, লাগানো হবে ২০ হাজার গাছ৷ ৭২ মিলিয়ন ইউেরোর এই প্রকল্পের মাধ্যমে আইফেল টাওয়ারের চারদিকে সবথেকে বড় বাগান তৈরি করা হবে৷
প্রথম পর্যায়ে অব্যবহৃত একটি রেল রাস্তায় নিউ ইয়ার্কের হাই লেন পার্কের মতো করে গ্রিন বেল্ট তৈরি করা হবে বলে জানান হিদালগো৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই শহর যাতে বসবাসের অনুপযোগী না হয়ে যায় সেজন্য এটা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷
প্যারিসভিত্তিক পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ভিনসেন্ট ভিগুই বিশ্বাস করেন, শহরে মাইক্রোক্লাইমেট তৈরি করে রাস্তার তাপমাত্রা কমানো সম্ভব৷
বিশ্বে বনভূমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, তবে এই প্রবণতা থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ ইউরোপে প্রতিদিন দেড় হাজার ফুটবল মাঠের সমান এলাকায় বনায়ন হচ্ছে এবং ফ্রান্স এতে অগ্রগামী ভূমিকায় রয়েছে৷
ফ্রান্সের তিনভাগের একভাগ বনভূমি রয়েছে৷ ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং স্পেনের পরেই ফ্রান্সে বেশি বনভূমি রয়েছে৷ ১৯৯০ সাল থেকে ফ্রান্সের সামগ্রিক বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে সাত শতাংশ৷
জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে ৫টি দেশ সফলতা দেখাচ্ছে
মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে বন্যা, খরা এবং দাবদাহের মতো চরম আবহাওয়ার কবলে পড়বে পৃথিবী৷ এখানে এমন কয়েকটি দেশের কথা থাকছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷
ছবি: UNDP
একার পক্ষে সম্ভব নয়
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন কেবল কয়েকটি দেশের একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়৷ এর জন্য প্রয়োজন বিশ্বের প্রতিটি দেশের উদ্যোগ এবং সহযোগিতা৷ সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো, প্রতি বছর মোট জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এখনও কার্বনভিত্তিক উৎসের উপর ৮৫ ভাগ নির্ভরশীল৷
ছবি: Getty Images/Anadolu Agency/C. Ozedel
ডেনমার্ক
বিশ্বে সবচেয়ে জলবায়ুবান্ধব দেশ বলা হয় ডেনমার্ককে৷ দেশটি ২০৫০ সালের মধ্যে একাই জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে চলেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সবচেয়ে কার্যকর নীতি বলা হয় কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার৷ সেদিক দিয়ে পরিবেশ নিয়ে যাঁরা পড়ালেখা করছেন, তাঁরাও উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেন এই দেশটিকে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
চীন
পরিবেশবান্ধব দেশ হওয়ার পথে চীনকে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে৷ তবে দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করছে, তা চোখে পড়ার মতো৷ বিশ্বে সৌরশক্তি ব্যবহারের অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিত চীন৷ আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশটি ৩৪ গিগা ওয়াটেরও বেশি সৌরশক্তি ব্যবহার করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ৷
ছবি: UNDP
ফ্রান্স
প্যারিস চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বে অন্যতম ভূমিকা রাখছে ফ্রান্স৷ ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি কার্বন নিঃসরণ ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে৷ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে দেশের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে ফ্রান্স৷ এরই মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে ফেলেছে৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যাতে তাঁরা ফ্রান্সে এসে কাজ করেন৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
ভারত
বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম শক্তিধর দেশ ভারতে প্রচুর জ্বালানির চাহিদা রয়েছে৷ সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ভারতের বর্তমান সরকার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের নীতি ঠিক করেছে৷ দেশটি ক্রমেই সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে তৃতীয় শক্তিধর দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলছে৷ ভারতে বর্তমানে কয়লার চেয়েও সৌরশক্তি সস্তা৷
ছবি: Getty Images for SATC/S. Barbour
সুইডেন
২০৪৫ সালের মধ্যে সব ধরনের গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করার ব্যাপারে একটি আইন পাস করেছে সুইডেন সরকার৷ জলবায়ু মন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন৷ দেশটির অর্ধেকেরও বেশি জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Ghani
6 ছবি1 | 6
ফ্রান্সের এনার্জি ফার্ম ‘টোটাল'-এর প্রধান জানিয়েছেন, তারা নতুন বন সংরক্ষণ ও পুনর্বনায়ন প্রকল্পে বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে৷ কোম্পানিটির চিফ এক্সিকিউটিভ প্যাট্রিক পুইয়েন বলেন, ‘‘আমরা বন সংরক্ষণ প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের জন্য একটি ইউনিট স্থাপন করতে চাই, কারণ, কার্বন নির্মূলে এটাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি৷''
বিশ্বের ৫২০টি বড় শহরে পরিচালিত জুরিখ ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত নাতিশীতোষ্ণ এলাকার নগর অঞ্চলগুলো এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে সরে যাবে৷
জুলাই মাসে প্রকাশিত তাদের এক সমীক্ষায় বলা হয়, বন সংরক্ষণে ব্যাপক প্রচারণা চালালে তা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে৷