রাশিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে জেরবার ট্রাম্প টিম৷ তার উপর তদন্তের কাজে বারবার বাধা সৃষ্টি করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে বলে দাবি করছে ওয়াশিংটন পোস্ট৷
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প টিমের সঙ্গে রাশিয়ার ‘অবৈধ' সম্পর্ক নিয়ে একাধিক তদন্ত চলছে৷ কিন্তু এ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং রেহাই পেয়ে এসেছেন৷ এবার ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপাত্র জানাচ্ছে, সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন প্রাক্তন এফবিআই প্রধান রবার্ট মালার৷ এমনকি সেই তদন্তে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ড্যানিয়েল কোটস ও এনএসএ প্রধান অ্যাডমিরাল মাইক রজার্স৷ আগামী সপ্তাহেই রবার্ট মালার তাঁদের জেরা করতে পারেন বলে দাবি করছে ওয়াশিংটন পোস্ট৷ ট্রাম্প ‘অবস্ট্রাকশন অফ জাস্টিস' বা বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন কিনা, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চান মালার৷
রবার্ট মালার ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও বিরোধী ডেমোক্র্যাট দলের শ্রদ্ধার পাত্র৷ তাই ‘স্পেশাল কাউন্সেল' হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তি অত্যন্ত স্বচ্ছ৷ তাই হাতেকলমে তাঁকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা থাকলেও ট্রাম্প সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার ঝুঁকি নেবেন কিনা, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে৷
ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে এই তদন্তের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে৷ ২২শে মার্চ ড্যানিয়েল কোটস তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন৷ তিনি বলেন, প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টামাইক ফ্লিনের বিরুদ্ধে এফবিআই যাতে তদন্ত বন্ধ করে দেয়, সেই লক্ষ্যে তৎকালীন এফবিআই প্রধান জেমস কোমির কাজে হস্তক্ষেপ করতে বলেছিলেন ট্রাম্প৷ তার কয়েকদিন পর ট্রাম্প কোটস ও রজার্সের সঙ্গে আলাদা সংলাপে তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করে বলেছিলেন, তাঁরা যেন প্রকাশ্যে বিবৃতি পেশ করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তাঁর টিমের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো যোগাযোগের প্রমাণ নেই৷
বলা বাহুল্য, এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর ট্রাম্প শিবির অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মার্ক ক্যাসোভিৎস এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদনের জন্য এফবিআইকে দায়ী করেছেন৷ এমন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার কাজকে তিনি বেআইনি আখ্যা দেন৷
ওয়াশিংটনে সর্ষের মধ্যেই যখন ভূত
উইকিলিক্স অথবা অন্য কোনো ‘বেসরকারি’ সংগঠন নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দিচ্ছে হোয়াইট হাউস বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিরই ভিতরের মানুষ৷ ট্রাম্প ক্রোধে ফুঁসলেও তার উৎস খুঁজে পাচ্ছেন না৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
টেলিফোন সংলাপ
ক্ষমতায় আসার পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু বিদেশি শীর্ষ নেতার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ আলোচনা করেছিলেন৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বেশ কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন৷ সেই খবর সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে ট্রাম্প-এর রোষের শিকার হয়েছিলেন ওবামা আমলের অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস৷ তিনিই রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প টিমের যোগাযোগ নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেছিলেন বলে ট্রাম্প সন্দেহ করেন৷
ছবি: Reuters/L. Buckman
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ওভাল অফিসে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইএস সম্পর্কে এমন গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন, যা ঘনিষ্ঠ সহযোগীদেরও অজানা ছিল৷ সেই তথ্য ফাঁসের ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/Tass/Alexander Shcherbak
এফবিআই মেমো
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে আলোচনার পর তার বিস্তারিত বিবরণ লিখে রাখতেন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর প্রাক্তন প্রধান জেমস কোমি৷ তাঁকে বরখাস্ত করার পর সেই ‘মেমো’-র অস্তিত্ব ও বিবরণ ফাঁস হওয়ায় জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Harrer
পোপনীয়তা ও স্বতঃস্ফূর্ততা
হোয়াইট হাউসের কর্মী ও উপদেষ্টারা ট্রাম্প-এর অনেক সিদ্ধান্ত আগেভাগে জানতে পারেন না৷ ফলে তার ব্যাখ্যাও দিতে পারেন না৷ ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, যে তাঁর দ্রুত চিন্তার সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে পারে না৷ এমন ‘অরাজকতা’-র ফলে তথ্য-ফাঁসের ঘটনা ঘনঘন ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
অন্তর্ঘাতের অভিযোগ
ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা এই সব তথ্য ফাঁসের ঘটনার মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্রের কালো ছায়া দেখছেন৷ অনির্বাচিত আমলারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনকে হেয় করতে এমন অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে বলে রক্ষণশীল মহলে অভিযোগ উঠছে৷ এই সব ‘লিক’-এর উৎস খুঁজে বার করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যমকে চ্যালেঞ্জ করছে তারা৷