ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আইসিস জঙ্গিদের উপর বিমান হামলায় কিছু সাফল্যের পর মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ায় তাদের ঘাঁটির উপর হামলা চালানো নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে৷ এদিকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন – আইসিস ইসলাম ধর্মের জন্য অপমানজনক৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে নিজস্ব মডেলের কট্টরপন্থি ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করতে চায় আইসিস৷ ইরাকে সেনাবাহিনী ও কুর্দি পেশমারগা যোদ্ধারা অ্যামেরিকা সহ অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে আইসিস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু সিরিয়ায় অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইসলামি জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ সেখানে এক মার্কিন সাংবাদিকের নৃশংস হত্যা এই বাস্তব আরও স্পষ্ট করে তুলেছে৷ আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হয়ে পড়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সহযোগিতার কোনো সম্ভাবনাও আপাতত দেখা যাচ্ছে না৷ তাই প্রশ্ন উঠছে, শুধু ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সীমিত সাফল্য যথেষ্ট কি না৷ তাছাড়া শুধু সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের দমন করা সম্ভব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল বৃহস্পতিবার আইসিস জঙ্গিদের পরবর্তী চাল নিয়ে তাঁর সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, ইরাকে চাপের মুখে পড়ে তারা কৌশলগত পশ্চাদপসারণ করে সিরিয়ায় ফিরে আবার নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে৷ তারপর ফের ইরাকে ফিরে হামলা শুরু করতে পারে৷
সিরিয়ায় যে সব সরকার-বিরোধী গোষ্ঠী আইসিস-এর আদর্শের ঘোরতর বিরোধী, তারাও হয়ত ইরাকি কুর্দিদের মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে পারতো৷ কিন্তু অ্যামেরিকা সহ পশ্চিমা জগতের কোনো সামরিক ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া তাদের হাতে এমন ক্ষমতা নেই৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুরু থেকেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে কোনো পক্ষকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা না করার নীতি অনুসরণ করে চলেছেন৷ এমনকি ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর সে দেশের সংকটেও আবার জড়িয়ে পড়তে চান না তিনি৷ আপাতত ইরাকি সরকার ও কুর্দিদের সীমিত ও বিচ্ছিন্ন সহায়তা দিয়ে চলেছে ওয়াশিংটন৷ সেইসঙ্গে ইরাকের পর সিরিয়ার আকাশেও আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালানোর বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে মার্কিন প্রশাসন৷ খোদ জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে এমন হামলার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
জেনারেল ডেম্পসে সামরিক হামলার পাশাপাশি এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানসূত্রেরও উল্লেখ করেছেন৷ তাঁর মতে, সিরিয়া ও ইরাকে সুন্নিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ আইসিস-এর সমর্থনের ভিত্তিই এই সম্প্রদায়৷ ইরাকে নতুন সরকার দেশের সব সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের ফলে অনেক অঞ্চলে শাসনযন্ত্র কার্যত ভেঙে পড়ায় রাজনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না৷
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোইয়ুনো বলেছেন, আইসিস ইসলাম ধর্মের জন্য অপমানজনক৷ টিউনিশিয়াও আইসিস গোষ্ঠীর বর্বরোচিত অপরাধের তীব্র নিন্দা করেছে৷ আইসিস-এর কার্যকলাপ যে সার্বিকভাবে ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে এমন উপলব্ধি বেড়েই চলেছে৷ ফলে বেশ কিছু মুসলিম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছেন৷