মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সেনেটে ইমপিচমেন্ট তদন্ত শুরু হলো৷ রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সেখানে ট্রাম্পকে আড়াল করার চেষ্টা সত্ত্বেও ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হচ্ছে না৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সংসদের নিম্ন কক্ষের পর এবার উচ্চ কক্ষে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্ত শুরু হলো৷ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ আনুষ্ঠানিকভাবে সব নথিপত্র সেনেটের হাতে তুলে দেবার পর আগামী মঙ্গলবার থেকে এই প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কিনা, সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যরা৷ অ্যামেরিকার ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্ত চালানো হচ্ছে৷ সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসকে তদন্তের প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷
সেনেটে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ট্রাম্পকে যতটা কম আড়াল করার চেষ্টা হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ দলের ৫৩ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে এ বিষয়ে এখনো ঐক্য অটুট রয়েছে৷ এমনকি সাক্ষীদের তলব করা হবে কিনা বা নতুন তথ্যপ্রমাণ বিবেচনা করা হবে কিনা, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা আছে৷ ট্রাম্পকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ জন কর্নিন নামের এক সেনেট সদস্যের মতে, দেওয়ানি পর্যায়ে আইন ভাঙা হয়ে থাকেলেও এ ক্ষেত্রে কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটে নি৷ ফলে কোনোমতেই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার কারণ দেখা যাচ্ছে না৷ কর্নিনের মতে, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী একমাত্র দেশদ্রোহ, ঘুষ ও উচ্চ মাত্রার অপরাধের জন্য প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করা যায়৷
এদিকে মার্কিন কংগ্রেসে সরকারের দায়বদ্ধতা দপ্তরের একটি সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী হোয়াইট হাউস আইন ভেঙেছে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন সত্ত্বেও ইউক্রেনের জন্য ধার্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহায়তা আটকে রেখে ট্রাম্প প্রশাসন অন্যায় করেছে বলে রিপোর্টে মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ সেনেটে ইমপিচমেন্ট তদন্তের ঠিক আগে এমন বিস্ফোরক রিপোর্ট ট্রাম্পের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে৷ উল্লেখ্য, গত ১৮ই ডিসেম্বর সংসদের নিম্ন কক্ষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ এনেছিল৷
ইমপিচমেন্ট তদন্ত চলাকালীন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও বিস্ফোরক তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ্যে এলে রিপাবলিকান সেনেট সদস্যদের পক্ষে বাড়তি চাপ উপেক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা, তার উপর তদন্তের ফল অনেকটা নির্ভর করছে৷ সে ক্ষেত্রে দলের ঐক্য অটুট রাখা কঠিন হবে৷ সাক্ষী তলবের প্রশ্নে মতপার্থক্য দেখা দিলেও ট্রাম্প বেকায়দায় পড়তে পারেন৷
ডনাল্ড ট্রাম্প: ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট
রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এবং রিয়েলিটি টিভি স্টার হিসেবে পরিচিত ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট৷ হোয়াইট হাউজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিবার, সাম্রাজ্য
তিনি যাদের ভালোবাসেন তাদের নিয়ে তোলা ছবি৷ এখানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকা এবং টিফানি, ছেলে এরিক এবং ডোনাল্ড জুনিয়র এবং নাতি কাই ও ডোনাল্ড জন থ্রি৷ তাঁর তিন বড় সন্তান ট্রাম্প অরর্গানাইজেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিলিয়নিয়ার থেকে বিলিয়নিয়ার
১৯৮৪ সালে তোলা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিউ জার্সির ট্রাম্প প্লাজায় হারাহ’স ক্যাসিনো উদ্বোধন করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এটা অন্যতম এক খাত যেখানে বিনিয়োগ করে বাপের টাকায় মিলিয়নিয়ার হওয়া ট্রাম্প নিজেকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Lederhandler
বাপের টাকায় ব্যবসা শুরু
রিয়েল স্টেট সাম্রাজ্যের শুরুটা ট্রাম্প করেছিলেন তাঁর বাবা ফ্রিডরিকের কাছ থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে৷ তিনি তাঁর ছেলেকে শুরুতে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন৷ এবং তাঁর মৃত্যুর পর ট্রাম্প এবং তাঁর তিন ভাইবোন উত্তরাধিকার সূত্রে চার’শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক হন৷
ছবি: imago/ZUMA Press
একটি নামের মধ্যে কী আছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং মার্কেটের উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন৷ নিউ ইয়র্ক সিটির ট্রাম্প টাওয়ার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য এনে দিয়েছে৷ ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তবে কখনো তিনি তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো আর্থিক কাগজপত্র প্রকাশ করেননি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাঁর সম্পদের পরিমাণ তিনি যা বলেন তাঁর এক-তৃতীয়াংশ মাত্র৷
ছবি: Getty Images/D. Angerer
‘খুব ভালো, খুব স্মার্ট’
ট্রাম্প নিজের সম্পর্কে নিজেই বলেন একথা৷ তিনি সুপরিচিত সুপরিচিত ‘ওয়ার্টন স্কুল অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ পেনসেলভেনিয়ায়’ লেখাপড়া করেছেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.J. Harpaz
ক্যাপ্টেন ট্রাম্প
কলেজে পাঠানোর আগে ১৩ বছর বয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে পাঠানো হয়েছিল ট্রাম্পকে৷ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের আগেই একাডেমি থেকে একটি অফিসার’স ব়্যাংক অর্জন করেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারাভিযানকালে তিনি জানান যে, তিনি স্কুলে কাঠামো এবং সামরিক সংস্কৃতি উপভোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/
ভিয়েতনাম যাওয়ার বদলে গোড়ালির চিকিৎসা
মিলিটারি শিক্ষা সত্ত্বেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাননি ট্রাম্প৷ পড়াশোনা করার সময় তিনি চারবার কালহরণ করেছিলেন এবং গোড়ালির চিকিৎসার জন্য একবার বিরতি নিয়েছিলেন৷ ট্রাম্প হবেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগ অবধি কোনো সরকারি কার্যালয় বা সামরিক বাহিনীতে কাজ করেননি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম স্ত্রী: ইভানা জেলনিউকোভা
১৯৭৭ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার ইভানা জেলনিউকোভাকে বিয়ে করেন ট্রাম্প৷ তাঁদের তিন সন্তান হয়৷ ডোনাল্ড জন জুনিয়র, ইভানকা মারি এবং এরিক ফ্রেডরিক৷ তবে বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্কসহ নানা জটিলতায় ১৯৯০ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়৷ ইভানা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ট্রাম্পের ডাক নাম দিয়েছিলেন ‘দ্য ডোনাল্ড৷’
ছবি: Getty Images/AFP/Swerzey
দ্বিতীয় পরিবার
ট্রাম্প পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মার্লা ম্যাপলসকে বিয়ে করেন৷ ১৯৯৩ সালে তাঁদের মেয়ে টিফানির জন্ম দেন ম্যাপেলস৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/J. Minchillo
অন্য নারীদের সঙ্গে ট্রাম্প
ট্রাম্প সম্ভবত নিজের স্ত্রীর বদলে অন্য নারীদের সঙ্গে ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ তিনি প্রায়ই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যেতেন এবং তরুণী মডেলদের সঙ্গে ছবি তুলতেন৷ ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ অবধি আয়োজিত সব ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার একজন অংশীদার ছিলেন তিনি৷ নির্বাচনের আগে আগে এক অডিও প্রকাশ হয় যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর খ্যাতি তাঁকে কোনোরকম পরিণতির ভয় ছাড়াই মেয়েদের ‘গায়ে হাত দেয়ার’ সুযোগ করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Lemm
বাণিজ্য এবং বিনোদনের মিশ্রণ
ট্রাম্প জানতেন কীভাবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়৷ এই ছবিতে তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের’ একটি শোতে দেখা যাচ্ছে৷ রিয়েলিটি টিভি শো ‘দ্য এপ্রেন্টিস’, যেখানে প্রার্থীদের নিয়োগ অথবা বাতিল করা হতো, ট্রাম্পকে খ্যাতি অর্জনে সহায়তা করেছে৷ শোতে ট্রাম্পের প্রিয় লাইন ছিলে, ‘ইউ আর ফায়ার্ড!’
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
রাজনীতিতে ট্রাম্প
যদিও অতীতে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল, তারপরও ২০১৫ সালে সালের ১৬ জুলাই তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন৷ রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন৷’ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় তিনি অভিবাসী, মুসলমান, নারী এবং তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রত্যেককে অপমান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Lane
ওয়াশিংটনের পথে
প্রেসিডেন্ট হিসেবেও হোয়াইট হাউসে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ ৷ সবশেষ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করল সে দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ। অ্যামেরিকার ইতিহাসে ট্রাম্পই তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়েছে।