গত ১৩ বছরে মোট সাতবার এবোলা সংক্রমণ ছড়িয়েছে কঙ্গো ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকে৷ তবে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়ায় এবার বেশি ছড়াতে পারেনি৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দাবি, সে দেশে এবোলায় এ বছর মারা গেছেন মাত্র চার জন৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৩,৪৬৩ জনের দেহে এবোলার সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ সংক্রমিতদের দুই তৃতীয়াংশই মারা গেছে৷
তবে ভ্যাকসিন বা টিকা এসে গেছে এবং সেই টিকা গণহারে দেয়ার সুফলও আসতে শুরু করেছে৷ এ পর্যন্ত তিন লাখ মানুষকে এই টিকা দেয়া হয়েছে৷ দেখা গেছে, এর ফলে সংক্রমণের হার দ্রুত কমছে৷ কঙ্গো ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকের স্বাস্থ্য মান্ত্রনালয়ের দাবি, এ বছর মাত্র ১২ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং তাদের মধ্যে চারজন মারা গেছে৷ তবে ইউনিসেফ বলছে, মৃতের সংখ্যা পাঁচ৷
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলে গত প্রায় দু বছরে বেশ কয়েকবার ফিরে এসেছে এবোলা৷ তবে সম্প্রতি ১২০০ কিলোমিটার দূরের উত্তর-পশ্চিমাংশেও সংক্রমণ দেখা দেয়৷ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে টিকা দিতে শুরু করায় ধীরে ধীরে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে৷
পরিস্থিতির উন্নতির আরেকটা কারণ স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্পর্কের উন্নতি৷ এক সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি আস্থা ছিল না তাদের৷ মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটতো৷ এখন আর সেরকম ঘটছে না৷
ইউটা স্টাইভ্যার/ এসিবি
একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ যে মহামারি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১ হাজার ৩০৭টি মহামারি ঘটেছে৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক মহামারিগুলি জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Imago/W. Quanchao
প্লেগ
একুশ শতকেও ফিরে এসেছে প্লেগ রোগ৷ ২০১৭ সালে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে প্লেগে আক্রান্ত হন দুই হাজার ৪১৭জন৷ প্রাণ হারান ২০৯জন৷ শুধু তাই নয়, মাদাগাস্কারে যাওয়া বা সেখান থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রেও জারি হয় বিশেষ সতর্কতা৷ মোট নয়টি দেশে প্লেগ মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷
২০১৫ সালে ব্রাজিলে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ছড়ায় এই বিশেষ ধরনের ভাইরাস৷ সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে এই সংক্রমণ৷ ব্রাজিল ছাড়া আরো ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই মহামারি৷ মারা যান ১৩৭ জন৷
ছবি: Reuters/J.-C. Ulate
ইবোলা
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনিতে নতুন করে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস৷ এর আগে ১৯৭৬ সালে এই সংক্রমণ লক্ষ্য করা হলেও সেইবার তা একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমিত ছিল৷ কিন্তু একুশ শতকে এই সংক্রমণ আটকানো যায়নি৷ এই তিনটি দেশ ছাড়াও তিনটি মহাদেশের আরো ছয়টি দেশে পৌঁছে যায় ইবোলা, যা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে৷ এই সংক্রমণ ছড়ানোর প্রথম দুই মাস তা ধরা না পড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Wamenya
মেনিনজাইটিস
২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মেনিনজাইটিস রোগে মারা যান ১৩৭জন৷ এর কারণ হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে অপর্যাপ্ত টিকার কথা৷ শুধু তাই নয়, পরিচিত সংক্রমণ কয়েক দশক পরপরই নতুনভাবে ফিরে আসতে পারে, যা উন্নত পরীক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে ধরা খুব কঠিন৷
ছবি: Imago Images/Science Photo Library
চিকুনগুনিয়া
যে এডিস প্রজাতির মশা থেকে ডেঙ্গ ছড়ায়, সেই একই মশার কামড়ে হতে পারে চিকুনগুনিয়া৷ মূলত শহরাঞ্চলে দেখা যাওয়া এই সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫২ সালে৷ কিন্তু ২০০৭ সালে নতুন করে গাবনে তা ভয়াবহ আকার ধারন করে৷ এরপর থেকে, আফ্রিকার পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ সারা বিশ্বে ধরা পড়ে৷ শুধু ২০১৬ সালেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হন সাড়ে তিন লাখ মানুষ৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই রোগে প্রাণ হারান ১৩৭জন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মের্স)
২০১৩ সালের জুলাই মাসে পারব আমিরাতে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম বা মের্স৷ তারপর থেকে সেই দেশে মোট ১২জন মারা গেলেও তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি৷ এখন পর্যন্ত, দুই হাজার ৫০৬টি কেস ধরা পড়েছে এবং মারা গেছেন ৮৬২টিজন, জানাচ্ছে হু৷ মের্স ঠেকাতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি হু এর অন্যতম পরামর্শ হচ্ছে উটের দুধ বা মূত্র পান না করা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Kittiwongsakul
কলেরা, ইয়েলো ফিভার
হু জানাচ্ছে, বছরে অন্তত ৪০টি কলেরার ঘটনা ধরা পড়ছে গত দশ বছরে৷ কলেরা বা ইয়েলো ফিভারের মতো পুরোনো রোগ ঘুরেফিরে আসছে কারণ আক্রান্ত দেশগুলিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ ২০০৯ সালে একুশ শতকের প্রথম ইনফ্লুয়েনজা ভাইরাস (এইচ১এন১) মহামারী ধরা পড়ে৷ ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কলেরার কারণে মারা গেছেন ৩০৮জন, ইয়েলো ফিভারে ৫৭জন ও ইনফ্লুয়েনজায় ৫১জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weigel
সার্স
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে একুশ শতকের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী ছিল সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম৷ ২০০৩ সালে চীনে এই ভাইরাস দেখা যায়৷ প্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস৷ মোট ২৬টি দেশে ছড়ানো এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার জন৷ মূলত চীনে ছড়ানো এই ভাইরাস আবার ফিরে আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ সেক্ষেত্রে নতুন করে চীনে যাওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে হু৷