ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়ায় কেনাকাটা করতে গিয়ে নারীরা প্রায়ই দোকানীদের লাঞ্ছনার শিকার হন৷ অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পান না৷ কিন্তু চাইলেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়৷
তাঁর ফেসবুক পাতায় এক তরুনীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেছেন তিনি৷ ইমরান লিখেছেন, ‘‘মাকে নিয়ে গাউছিয়াতে শপিং করতে গিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী৷ একটি দোকানে জিনিস দেখার পর পছন্দ না হওয়ায় মেয়েটি অন্য দোকানে যেতে চাইলে ঐ দোকানী বাজে ভাষায় তাদের লাঞ্ছিত করে৷ এমন ব্যবহারে স্কুল শিক্ষিকা মা এবং মেয়েটি হতভম্ব হয়ে যায়৷ দোকানীর দুর্ব্যবহার এবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, মারতে উদ্যত হয়৷ লোকটার পক্ষ নেয় অন্য দোকানীরা৷ মা-মেয়েকে শুনতে হয়, ‘মাইয়া মানুষ হইয়া ঝগড়া করেন ক্যান? চুপচাপ মাথা নিচু কইরা কাইটা পড়েন!''
ভুক্তভোগী তরুনী এর প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ কিন্তু কীভাবে, কার কাছে যাবেন বুঝতে পারছিলেন না৷ তারপর ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ ‘জাস্টিস ফর উইমেন'- এ একটা পোস্ট দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘নিউমার্কেট এলাকায় কেউ যদি দুর্ব্যবহার করে, তাহলে কোথায়-কিভাবে অভিযোগ করতে হবে?''
পোস্টটি আব্দুল্লাহ আল ইমরানের চোখে পড়ে৷ তাঁর মনে পড়ে যায় নিউ মার্কেট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের কথা৷ যিনি এর আগে হাতিরপুলে সিএনজি অটোরিক্সায় একটি হয়রানির ঘটনার নাগরিক প্রতিবাদের সময় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন৷ তখনই ইমরানকে তাঁর মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, প্রয়োজনে অন্য কাউকেও নাম্বারটি দিয়ে তিনি সাহায্য করতে পারেন৷ পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুন ইমরানকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এই এলাকায় কোনো অনিয়ম চোখে পড়লেই যেন তাকে জানান৷
ঢাকার রাস্তায় ‘মেয়ে’র অন্যরকম রংবাজি
নারীর অবমাননা, নির্যাতন আর ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুলি ধরেছে ‘মেয়ে’৷ ঢাকার রাস্তায় শুরু করেছে ‘রংবাজি’৷ সেই রংবাজি ফুটে ওঠে রিকশার পেছনে লেখা নানা কথা আর তুলির আঁচড়ে আঁকা ছবিতে৷
ছবি: Meya online netwark
নারীর ‘রংবাজি’
নারীবান্ধব অনলাইন কমিউনিটি ‘মেয়ে’-র এক উদ্যোগের নাম ‘রংবাজি’৷ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার এশিয়াটিক সোসাইটির সামনে এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাতে রং-তুলি তুলে নেয় তারা৷ রিকশার পিছনে ফুটে ওঠে সমাজে নির্যাতিত, নিপীড়িত, ধর্ষিত নারীদের মনের কথা৷ রং-তুলির ভাষায় প্রতিবাদের এই উদ্যোগেরই নাম ‘রংবাজি’৷
ছবি: Meya online netwark
‘জোর করে ভালোবাসা যায় না’
মন না পেলে নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ থেকে শুরু করে নানা ধরণের নির্যাতন চালায় এক ধরণের পুরুষ৷ তাদের জন্যই রিকশার পেছনে লিখে দেয়া হয়েছে একটি সহজ সত্যি কথা – ‘জোর করে ভালোবাসা যায় না’৷
ছবি: Meya online netwark
বউয়ের দোয়া
বাংলাদেশে ‘মায়ের দোয়া’ লেখা রিকশার অভাব নেই৷ মা নারী৷ সন্তান অথবা সন্তানতুল্যদের কাছে তিনি সবসময়ই শ্রদ্ধেয়৷ কিন্তু স্ত্রী-ও যে নারী; নারী হিসেবে, আগামী দিনের মা হিসেবে তাঁরও যে সম্মান প্রাপ্য – সে কথা অনেকেরই মনে থাকে না৷ সে কারণেই রিকশার পেছনে ‘মেয়ে’ লিখে দিয়েছে ‘বউয়ের দোয়া’৷ জীবনের শুধু মায়ের নয়, বউয়ের দোয়াও দরকারি৷
ছবি: Meya online netwark
‘ঘরের কাজ ফেলনা নয়, বাইরের কাজ খেলনা নয়’
বাংলাদেশে কর্মজীবী নারী বাড়ছে৷ কিন্তু সমাজের একটি মহল নারীর কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে৷ যেসব নারী ঘরের যাবতীয় কাজ করেন, তাঁরা কিন্তু কাজের স্বীকৃতি পান না৷ ঘরের কাজ যেন কোনো কাজই নয়! আসলে ঘরে এবং বাইরে নারীদের কাজের মর্যাদা দেয়ার বিষয়টি অনেক পুরুষই এখনো গুরুত্ব দেয় না৷ গৃহকর্মে সুনিপুনা এবং কর্মজীবী নারীদের হয়ে তাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে ‘ঘরের কাজ ফেলনা নয়, বাইরের কাজ খেলনা নয়’৷
ছবি: Meya online netwark
‘নজর সামলে রাখুন’
তথাকথিত ‘শালীন’ পোশাক পরে না, শালীনতা বজায় রেখে চলাফেরা করে না বলেই নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার – এমন অদ্ভুত যুক্তির প্রবক্তা এবং অনুসারীদের প্রতি ‘মেয়ে’র পরামর্শ, ‘নজর সামলে রাখুন’৷
ছবি: Meya online netwark
‘লজ্জা ধর্ষকের, ধর্ষিতের নয়’
অন্যায়কারীরই লজ্জিত হওয়া উচিত, যিনি অন্যায়ের শিকার তাঁর আবার লজ্জা কিসের? ধর্ষণ প্রসঙ্গে সবাইকে এই কথাটা মনে করিয়ে দিতেই ‘রংবাজি’-র একটি উদ্যোগের স্লোগান, ‘লজ্জা ধর্ষকের, ধর্ষিতের নয়’৷
ছবি: Meya online netwark
অন্যায়ের প্রতিবাদে নারী-পুরুষ
সব অন্যায় রোধেই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ দরকার৷ নারীর বিরুদ্ধে সব ধরণের অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধেও তাই পুরুষদেরও নারীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ‘মেয়ে’৷
ছবি: Meya online netwark
সবাই নারীর অধিকার রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হোক
‘মেয়ে’ নামের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সমন্বয়কারী তৃষিয়া নাশতারান৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘রংবাজি’ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘রিকশা পেইন্টিং আমাদের ঐতিহ্য৷ এর ব্যাপক সামাজিক প্রভাব আছে৷ যাত্রীরা যখন রিকশায় চড়েন, জ্যামে বসে থাকেন, তখন রিকশা পেইন্টিং গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখেন তাঁরা৷ আমরা সেটাই কাজে লাগাতে চেয়েছি৷ আমরা চাই এই চিত্রগুলো দেখে মানুষ সচেতন হোক৷ নারীর অধিকার রক্ষায় উদ্বুদ্ধ হোক৷’’
ছবি: Meya online netwark
8 ছবি1 | 8
গাউসিয়ায় এক তরুনীর লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাটিও ইমরান ঐ পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান৷ পরে ওই তরুনী থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন৷ পাশাপাশি ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডিএমপির এক অতিরিক্ত কমিশনারকেও ঘটনাটি জানিয়ে রাখেন৷
তরুনীর সেই অভিযোগের জেরে ঐ দোকানীকে আটক করে পুলিশ৷ অপরাধীকে সোজা চালান করে দেয়া হয় আদালতে৷
নিজের ফেসবুক পাতায় পুরো ঘটনাটিই লিখেছেন ইমরান৷ পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ কোনো অন্যায়ের শিকার হলে ‘নাজমুন নাহার, সহকারী কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, নিউ মার্কেট সার্কেল, ঢাকা' বরাবরে কীভাবে অভিযোগ পত্র লিখতে হবে৷
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘‘নিউমার্কেট এলাকায় প্রতিনিয়ত অনিয়ম-দুর্ভোগের শিকার নারীদের মধ্যে যারা অন্যায়ের সত্যি সত্যিই প্রতিবাদ করতে চান, তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়া এই আইনি পথটি অনুসরণ করতে পারেন৷ মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবাদটি অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না৷ শুরুটা অন্তত আপনাকেই করতে হবে৷ এই দেশে কিছু হয় না বলে যারা পাশ কাটিয়ে যান, যারা প্রতিবাদের বদলে প্রতিনিয়ত অন্যায়কে মেনে নেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, নিজের জায়গা থেকে একটুখানি আওয়াজ তুলুন৷ জনারণ্যে শুরুতে সেই আওয়াজ বড় ক্ষীণ আর বেমানান ঠেকলেও ধীরে ধীরে দেখবেন আরো শহস্র আওয়াজ আপনার দিকে ছুটে আসছে৷ গণমানুষের সম্মিলিত সেই আওয়াজের সামনে দাঁড়ায়, এমন অপশক্তি কোথায়?''
দোকানীকে আটকের ভিডিওটি ধারণ করে রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ইমরান৷ এ পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে৷ ৯ হাজার বার শেয়ার হয়েছে৷ আর কমেন্ট পড়েছে অন্তত ১৬ হাজার৷
এ.এস সফিক ভিডিওটি শেয়ার করে ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের যা অবস্থা, তাতে এমন সাহসী উদ্যোগ এবং প্রতিবাদে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারে নারী অধিকার ও স্বাধীনতা! ওয়েল ডান ইমরান ভাই৷''
বিশ্বের যত প্রতিবাদের ছবি
যুক্তরাষ্ট্রে দাঙ্গা পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে এক প্রতিবাদী নারী৷ এমন একটি ছবি এখন সারা বিশ্বে ভাইরাল৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের রমরমা শুরুর আগেও অনেক ছবি হয়েছে প্রতিবাদের প্রতীক৷ চলুন দেখে নিই তেমন কয়েকটি ছবি৷
ছবি: Reuters
একজন ইশিয়া এভান্স
তখনো সেখানে দুই কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে৷ নিউ ইয়র্কের ২৮ বছর বয়সি তরুণী ইশিয়া এভান্স ব্যাটন রুজে এভাবেই প্রতিবাদের অনড় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন সশস্ত্র পুলিশের সামনে৷ ফটোগ্রাফার জনাথন বাখমান ছবিটি তুলতে দেরি করেননি৷ ছবিটি বিশ্বব্যাপী ‘ভাইরাল’ হতেও দেরি হয়নি৷ ছবি দেখে ব্যাটন রুজের মাঝরাস্তায় দাঁড়ানো প্রতিবাদী এক নারীর সাহসের প্রশংসাই করেছেন সবাই৷
ছবি: Reuters/J. Bachman
তিয়েনানমেনের সেই ‘ট্যাংকমানব’
ট্যাংক বহরের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন গণমাধ্যমে চীনের এই সাহসি মানুষটির নামই হয়ে গেছে ‘ট্যাংক ম্যান’ অর্থাৎ ট্যাংকমানব৷ ১৯৮৯ সালের ৫ই জুন চীনের তিয়েনানমেন স্কয়ারে বিক্ষোভ দমন করতে প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায় সেনাবাহিনী৷ তখনই ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন একজন৷ এভাবে বেশ কয়েকটি ট্যাংককে কিছুক্ষণ থামিয়েও রেখেছিলেন৷ মুহূর্তটিকে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন জেফ উইডেনার৷
ছবি: picture alliance/AP/J. Widener
পুষ্পশিশু
১৯৬৭ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটন ডিসির ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী মিছিলে সেনাবাহিনী বাধা দিতে এলে এভাবেই ফুল হাতে সেনা সদস্যদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সি জ্যান রোজ কাসমির৷ সেদিন এক কিশোরের হাতে ফুলই হয়ে উঠেছিল যুদ্ধের বি্রুদ্ধে প্রতিবাদের সুন্দরতম ভাষা৷
ছবি: Marc Riboud/Magnum Photos
আরেকটি অন্যরকম প্রতিবাদ
১৯৫৫ সালের ডিসেম্বরে মন্টগোমারিতে রোজা পার্কসকে বলা হয়েছিল বাসের আসন ছেড়ে দিতে৷ শুধু গায়ের রং সাদা নয় বলেই আসন ছাড়তে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ রোজা পার্কস আসন ছাড়েননি৷ এ কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাঁকে৷ শুরু হয়েছিল বাস বর্জন৷ এক মাস চলেছিল বাস বর্জনের প্রতিবাদ৷ সুপ্রিম কোর্ট বাসে বর্ণের কারণে যাত্রীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকে অন্যায় ঘোষণার পর থেমেছিল সেই প্রতিবাদ৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্দুকের ডগায় প্রার্থনা
২০১৪ সাল৷ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মাঝে দাঁড়িয়ে এভাবেই প্রার্থনা শুরু করেছিলেন এক খ্রিষ্টান যাজক৷
ছবি: Getty Images/R. Stothard
মরিচের মুখে নির্বিকার
২০১১ সালে টিউশন ফি-র বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্ররা৷ বিক্ষোভ থামাতে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ৷ এক পর্যায়ে রাস্তায় বসে থাকা শিক্ষার্থীদের মুখে মরিচের গুঁড়ো স্প্রে করে পুলিশ৷ শেষে অবশ্য ‘পেপার স্প্রে’ হাতের এই পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, ছাত্রদের দাবিও মেনে নেয়া হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Images/W. Tilcock
‘উইমেন ইন রেড’
২০১৩ সালে তুরস্কের এক প্রতিবাদী নারী বিশ্বের সবার নজর কেড়েছিলেন৷ গেজি পার্কে পুলিশ তখন বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে৷ তার মাঝেই লাল পোশাক পরে এভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন সিডা সাঙ্গুর৷
ছবি: Reuters
7 ছবি1 | 7
লেখাটি পোস্ট করার পর অনেক নারী চাকুরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলে কী করতে হবে জানতে চেয়েছেন৷ ইমরান তাদের পরামর্শও দিয়েছেন৷ অনেকেই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন৷ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন, ‘‘ইমরান তোমার জন্য গর্ব হচ্ছে৷''
আকরামুল হক ফেসবুকে জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার নাজমুন নাহারের দারুন সহযোগিতার কথা৷ লিখেছেন, ‘‘এভাবেই বদলাবে আমাদের দেশ৷''
মন্টি মনি লিখেছেন, ‘‘স্যালুট ভাইয়া, আমরা মেয়েরা প্রায়ই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হই, তারা সংখ্যায় বেশি থাকায় প্রতিবাদের ইচ্ছেটা ভেতরে ভেতরে খুব পোড়ায়৷ নিজের সম্মান নিয়ে কোনো অপরাধ না করেও মাথা নিচু করে দাঁতে দাঁত কামড়ে চলে আসা ছাড়া কোনো কিছুই করার থাকে না৷ আপনার এই পোস্ট দেখে অনেক শান্তি পেলাম৷''
আরিফ খান লিখেছেন, ‘‘এই মেয়েটির মতন আপনিও সচেতন হন৷ আপনার নিজের অধিকার নিজেই আদায় করতে শিখুন৷''
জয় ব্রায়ান লিখেছেন, ‘‘একদিন দেশটা এভাবেই পুরো বদলে যাবে৷ একা একা বদলে যাবে না৷ বদলাতে হবে আমাদেরই৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো যেসব আন্দোলন
ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমে প্রতিবাদ থেকে গড়ে উঠেছে তীব্র আন্দোলন৷ আরব বসন্ত থেকে হালের সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি আদায়ে সোচ্চার মানুষ৷ এমন কিছু আন্দোলনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pacific Press/M. Hasan
শাহবাগ আন্দোলন
ঘটনা ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে এর প্রতিবাদে এবং কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জড়ো হন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ফেসবুকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আপামর জনতা নেমে আসেন রাস্তায়৷ গড়ে ওঠে প্রতিবাদ৷ দেশের অনেক স্থানেই গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ঐ বছরই ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: Reuters
নির্ভয়া কাণ্ডে প্রতিবাদ
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের শিকার হন জ্যোতি নামের এক তরুণী৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ৷ গড়ে ওঠে প্রতিবাদ৷ ধর্ষণবিরোধী আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: Reuters
আরব বসন্ত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া প্রথম শুরু হয়েছিলো ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময়৷ ২০১০ সালে টিউনিশিয়ার মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওলা গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান শাসকের বিরুদ্ধে৷ ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বেন আলির পতন হয়৷ মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, টিউনিশিয়া ও বাহরাইনে প্রতিবাদ আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করে৷ তবে, আরব বসন্তের একটি ভয়াবহ রূপ ইসলামি জঙ্গিবাদ, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের উত্থান৷
ছবি: AP
#BringBackOurGirls
২০১৪ সালের ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করে৷ ঘটনা ঘটে ১৪ এপ্রিল৷ তার একদিন পর সেটা নিয়ে রিপোর্ট করে এএফপি৷ কিন্তু তখনও বিষয়টা বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি৷ পরে টুইটারে শুরু হয় বহুল আলোচিত #bringbackourgirls বা ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণা৷ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে টুইট হয় ৫ লাখ বার৷
ছবি: Twitter
#UmbrellaRevolution
২০১৪ সালে পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবিতে হংকং-এ যে বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা৷ ছাতা হাতে তারা এই প্রতিবাদ জানায়৷ অভিনব এই প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘আমব্রেলা রেভোলিউশন’ নামে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
#IfTheyGunnedMeDown
২০১৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে পুলিশের গুলিতে মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন৷ নিরস্ত্র ব্রাউনকে গুলি করে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা উইলসন৷ এর প্রতিবাদে স্মরণকালের ভয়াবহতম বিক্ষোভ শুরু হয় ফার্গুসনে৷ টুইটারে প্রতিবাদ জানানো হয় #IfTheyGunnedMeDown লিখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Maury
‘সুন্দরবন বাঁচাও’
বাংলাদেশের সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে চলছে সামাজিক আন্দোলন৷ গত এক মাস ধরে সাধারণ মানুষ এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ টুইটারে ব্যবহার করা হচ্ছে #savesundarbans৷