যতই দিন যাচ্ছে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের ইচ্ছে মানুষের মধ্যে ততই বাড়ছে৷ অন্যদিকে এ জন্য এভারেস্টে জমছে আবর্জনার স্তূপ, ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়৷ তাই আবর্জনা যাতে আর জমা না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে নেপালের কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
আজ থেকে ৬০ বছর আগে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন এডমান্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে৷ এরপর এখন পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেছেন৷ এছাড়া ৮,৮৪৮ মিটারের এই পর্বতে প্রতি বছর আরোহণ করেন হাজারো মানুষ৷ তবে এঁদের প্রত্যেকেই যে পর্বত আরোহণের জন্য প্রশিক্ষিত, তা নয়৷ অনেকের দুঃসাহসিক অভিযান বা রোমাঞ্চের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি৷ ফলে প্রশিক্ষণ না থাকায় তাঁরা এভারেস্টের পরিবেশ দূষিত করছেন, রেখে আসছেন নানা আবর্জনা৷
এ সব আবর্জনার মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মনুষ্য বর্জ্য, এমনকি মৃত পর্বত আরোহীদের শরীরও, যা পরিবেশ দূষণের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে৷ গত ছয় দশকে অন্তত ৫০ টন আবর্জনা জমেছে সেখানে৷ এ জন্য এভারেস্টকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ‘ডাস্টবিন'৷ মাউন্ট এভারেস্টের পরিবেশ বাঁচাতে নেপাল কর্তৃপক্ষকে কম সংখ্যক পর্বতারোহীকে আরোহণের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিখ্যাত পর্বতারোহী রিনহোল্ড মেসনার৷
এভারেস্ট জয়ের ষাট বছর
১৯৫৩ সালে এডমান্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন৷ মানব জাতির ইতিহাসে তাঁরাই প্রথম পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে৷ আর ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম৷
ছবি: DIAMIR Erlebnisreisen GmbH
প্রথম জয়, প্রথম মৃত্যু
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের সর্বোচ্চ শেখরে পা রাখেন মুসা ইব্রাহীম (বামে)৷ সেই জয়ের খবরে আনন্দের বন্যা নামে বাংলাদেশে৷ আর ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে মারা যান সজল খালেদ৷ এই ছবিঘরে মানবজাতির এভারেস্ট জয়ের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে৷ একেবারে সেই ১৯৫৩ সাল থেকে৷
ছবি: Musa Ibrahim
কোড ম্যাসেজ
‘‘স্নো কন্ডিশনস ব্যাড স্টপ অ্যাডভান্সড বেস এবানডন্ড মে টোয়েন্টিনাইন স্টপ অ্যাওয়েটিং ইমপ্রুভমেন্ট স্টপ অল ওয়েল’’ এই ম্যাসেজের অর্থ হচ্ছে: ‘‘হিলারি এবং তেনজিং ২৯ মে এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়া জয় করেছে৷’’ ১৯৫৩ সালের পহেলা জুন এই তথ্য লন্ডনে পৌঁছায়৷ এভারেস্টের সর্বোচ্চ শিখরে মানুষের পদচিহ্নের খবর শুনে উৎসবে মেতে ওঠে সবাই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
কে আগে চূড়ায় উঠেছিল?
নিউজিল্যান্ডের এডমান্ড হিলারি আর শেরপা তেনজিং নোরগে (ছবিতে বামে) এভারেস্ট জয়ের পর এক নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এই দু’জনের মধ্যে কে আগে চূড়ায় পা রেখেছিলেন তা নিয়ে শুরু হয় তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক৷ নেপাল এবং ভারত এই জয় তাদের দাবি করে৷ তবে এভারেস্ট জয়ের কয়েক বছর পর হিলারি জানান, চূড়ায় ওঠার সময় তিনি তেনজিং এর থেকে কয়েক পা সামনে ছিলেন৷
ছবি: DW/S. Nestler
অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয়
হিলারি ও তেনজিং-এর সেই ঐতিহাসিক অভিযানের পরের তিন দশকে বহু পর্বতারোহী বিভিন্ন পথ ধরে এভারেস্টে উঠেছেন৷ ১৯৭৮ সালে সাউথ টাইরোলিয়ান রাইনহোল্ড মেসনার (ডানে) এবং অস্ট্রেলিয়ান পিটার হেবেলার (বামে) অক্সিজেনের বাড়তি জোগান ছাড়াই এভারেস্ট জয় করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দলে দলে এভারেস্ট জয়
১৯৯০ দশকের দিকে দল বেধে পর্বতারোহীরা এভারেস্ট জয় শুরু করেন৷ সেই সময় থেকে প্রতিবছর শত শত পর্বতারোহী এভারেস্টের চূড়ায় উঠছেন৷ রেকর্ড বলছে, এখন অবধি কমপক্ষে ৬,০০০ বার সফলভাবে এভারেস্টের চূড়া জয় করেছে মানুষ৷ আবহাওয়া ভালো থাকলে নির্দিষ্ট কিছু সময়ে এভাবেই এভারেস্টের চূড়ার দিকে যাত্রা করেন পর্বতারোহীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চূড়ায় পর্বতারোহীদের ভিড়
সফলভাবে এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে চূড়ান্ত পর্যায়ে অ্যাডভান্সড বেস ক্যাম্প থেকে কমপক্ষে চারদিন সময় লাগে আর এই সময়টা আবহাওয়া অবশ্যই ভালো থাকতে হবে৷ সাধারণত একইসময়ে অনেক অভিযাত্রী চূড়ার দিকে যাত্রা করেন, কেননা সবাই আবহাওয়ার পূর্বাভাষের উপর নির্ভরশীল৷ ফলে একদিনে অনেক পর্বতারোহীকে চূড়ায় এভাবে ভিড় করতে দেখাটা স্বাভাবিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেরপারা পথ দেখান
শেরপাদের সহায়তা ছাড়া কারো পক্ষে এভারেস্টের চূড়া জয় করা কার্যত অসম্ভব৷ তাঁরা এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার পথের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সদা তৎপর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৮০ বছরে এভারেস্ট জয়
এভারেস্ট প্রতি বছরই চলে রেকর্ড গড়ার এবং ভাঙার খেলা৷ এই বসন্তে আশি বছর বয়সি জাপানি বৃদ্ধ ইউচিরো মিউরা এভারেস্টের সর্বোচ্চ চূড়ায় পা রেখেছেন৷ এর আগে ২০১০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করেন জর্ডান রেমেরো৷ দুটোই রেকর্ড৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উদ্ধার তৎপরতা
২০০৩ সালে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই ব্যক্তি৷ দশ বছর পর মানে এখন এভারেস্ট বেসক্যাম্প পর্যন্ত হেলিকপ্টারে যাতায়াত স্বাভাবিক ব্যাপার৷ এখন অবধি সর্বোচ্চ ৭,৮০০ মিটার উচ্চতায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
এভারেস্টে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এভারেস্টেরও ক্ষতি হচ্ছে৷ গত পঞ্চাশ বছরে সেখানকার বরফের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গর্বের এভারেস্ট
এভারেস্টের অধিকাংশ অংশই নেপালের আওতায় রয়েছে৷ ফলে এভারেস্টকেন্দ্রিক পর্যটন খাত থেকে বিপুল অর্থ আয় করে দেশটির সরকার৷ প্রতি বছরের ২৯ মে ‘আন্তর্জাতিক মাউন্ট এভারেস্ট দিবস’ উদযাপন করে নেপাল৷ ১৯৫৩ সালের এই দিনে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিল মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পর্যটক কমাতে অনাগ্রহী নেপাল
এভারেস্টের চূড়ায় আরোহনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন বিধিনিষেধ আরোপ করার পক্ষে নয় নেপাল৷ বরং প্রয়োজনীয় টাকা থাকলে যেকেউ চেষ্টা করতে পারে এভারেস্ট জয়ের৷
ছবি: DW/S. Nestler
বাংলাদেশের এভারেস্ট জয়
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম৷ এরপর আরো চারজন বাংলাদেশি এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন৷ এদের মধ্যে দু’জন মেয়ে৷ আর ২০১৩ সালে চূড়া জয় করে নামার পথে ‘ডেথ জোনে’ মারা যান সজল খালেদ৷
ছবি: DIAMIR Erlebnisreisen GmbH
13 ছবি1 | 13
সম্প্রতি নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় একটি আইন করেছে৷ আইন অনুযায়ী এভারেস্ট আরোহীদের প্রত্যেককে নামার সময় ফিরতে হবে আট কিলোগ্রাম আবর্জনা নিয়ে৷ আগামী এপ্রিল মাস থেকে এ আইন কার্যকর হবে৷ আরোহীকে প্রতিটি বেজ ক্যাম্পে কর্তৃপক্ষের কাছে ঐ আবর্জনা হস্তান্তর করতে হবে৷ তাদের এই আইনের লক্ষ্য হলো যাতে নতুন কোনো আবর্জনা এভারেস্টে জমা না হয়৷
নেপাল ন্যাশনাল গাইড অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব পাসাং শেরপা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, নতুন এই আইন খুব ভালো৷ কিন্তু এটা আসলে কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত৷ কেননা আরোহন শুরুর ঠিক কতদিন পর কোন বেজ ক্যাম্পে আবর্জনা জমা দিতে হবে, তার সঠিক নির্দেশনা নেই৷ আর পর্বত শিখরে পৌঁছাতে অনেকগুলো বেজ ক্যাম্প পথে পড়ে৷
এদিকে, পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যাঁরা আবর্জনা ফিরিয়ে আনবে না তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে তারা৷ তবে কী ধরনের শাস্তি তাঁদের প্রাপ্য তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি৷ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন থেকে পর্বতারোহীদের ৪,০০০ ডলার জমা দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে৷ তবে আবর্জনা নিয়ে এলে তাঁরা সেই অর্থ ফেরত পাবেন৷