বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেন থেকে নিক্ষিপ্ত একটি রকেটের আঘাতে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানটি ভূপাতিত হয়েছে, বলে সিদ্ধান্ত করেছে নেদারল্যান্ডসের নেতৃত্বাধীন একটি তদন্ত গোষ্ঠী৷
বিজ্ঞাপন
ডাচ সেফটি বোর্ডের চেয়ারম্যান টিবে ইয়োউস্ত্রা খিলসে-রাইয়েন সামরিক বিমানঘাঁটিতে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘ককপিটের বাঁ দিকে, বিমানের বাইরে একটি রকেটবাহী ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার ফলে এমএইচ১৭ উড়ালটি ভূপাতিত হয়৷’’
ইয়োউস্ত্রা আরো বলেন, ‘‘এই ‘ওয়ারহেড’ ‘বুক’ মাটি-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রণালীর সঙ্গে মিলে যায়৷’’ তিনি একাধিক বার বলেন যে, তদন্তকারীরা ক্ষেপণাস্ত্রটির লঞ্চ সাইট বা নিক্ষেপের স্থান অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ধারণ করতে পারেননি৷ তবে রিপোর্টারদের যে সব ম্যাপ দেখানো হয়েছে, তা-তে দোনেৎস্ক-এর কাছে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অধিকৃত রাজ্যাঞ্চল পরিষ্কারভাবে নির্দেশ করা হয়েছে৷
‘বুক’ মিসাইল নির্মাতা রাশিয়ার আলমাজ-আন্তাই কোম্পানি এ দিন সকালেই একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাদের নিজস্ব তদন্তের ফলাফল পেশ করে৷ তাদের মতে মিসাইলটি বিমানটিকে সামনের দিক থেকে আঘাত করেছিল৷ এছাড়া যে মিসাইলটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা পুরনো মডেলের৷
অর্থাৎ বিতর্ক চলবে, আগে থেকেই যা প্রত্যাশা করা হচ্ছিল৷ রিপোর্ট বেরনোর কয়েক ঘণ্টা আগেই টুইট করেছিলেন স্টিভ রোজেনবার্গ৷ লিখেছিলেন, ‘‘এমএইচ১৭ সম্পর্কে আজ আমরা দু’টো রিপোর্ট শুনব: একটি হল্যান্ড থেকে, আরেকটি রাশিয়া থেকে৷ কিন্তু কে বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে, তা নিয়ে রাশিয়া এবং পশ্চিমি দুনিয়ার মধ্যে মতানৈক্য চলবে৷’’
হাওয়ার্ড আমোস টুইট করেছেন, ‘‘নানা ধরনের লাল লাইন আর অ্যারো দিয়ে আলমাজ-আন্তাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, বুক রকেটটি সামনে থেকে এমএইচ১৭ উড়ালটিতে ধাক্কা মারে৷’’
ডাচ সেফটি বোর্ডের রিপোর্ট যে দু’পক্ষের পারস্পরিক সন্দেহ ও দোষারোপকে থামাতে পারবে না, তা আগে থেকেই আন্দাজ করা গেছিল৷ জেরাল্ড হেনজেল টুইট করেছিলেন, ‘‘রাশিয়ান ট্রল ফ্যাকট্রিরা জেগে ওঠো৷ আজ এমএইচ১৭ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ হবে৷ কাজেই এখন আরো কিছু উদ্ভটে ষড়যন্ত্রের থিওরি ভেবে বার করার সময় এসেছে...৷’’
জুলিয়া ডেভিস টুইট করেছিলেন, ‘‘এমএইচ১৭ রিপোর্ট বের হওয়ার আগে থেকেই রুশ সংবাদমাধ্যম তাঁকে আক্রমণ করতে শুরু করেছিল৷ এ থেকেই বোঝা যায়৷ যদি তোমার দোষ থাকে তো হাত তোলো!’’
এসি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
রিপোর্ট সংক্রান্ত ভিডিও-টা দেখলেন? মন্তব্য করুন নীচের ঘরে৷