গত ছয় সপ্তাহে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ‘নিখোঁজ’ উড়োজাহাজের খোঁজে ভারত মহাসাগরে নামছে চালকবিহীন ক্ষুদে ডুবোজাহাজ ব্লুফিন-২১৷
বিজ্ঞাপন
এই তল্লাশি অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জয়েন্ট এজেন্সি কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের ( জেএসিসি) প্রধান অ্যাঙ্গাস হসটন সেমাবার জানান, ‘ওশেন শিল্ড' জাহাজের যন্ত্রপাতি দিয়ে এমএইচ৩৭০ এর ব্ল্যাক বক্সের সংকেত খোঁজার যে কাজ চলছিল, সোমবারই তা বন্ধ করা হবে৷ এরপর বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজে যত দ্রুত সম্ভব সাগরের তলদেশে নামবে মার্কিন নৌবাহনীর ব্লুফিন-২১৷
মালয়েশীয় বিমানটির ব্ল্যাক বক্স যদি সাগরের তলদেশে থেকেও থাকে, তার ব্যাটারি ইতোমধ্যে ফুরিয়ে যাওয়ার কথা৷ আর এতোদিন পর ভাসমান কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার আশাও নেই বললেই চলে৷ এই প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রোবোটিক ডুবোজাহাজ৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
গত ৫ ও ৬ এপ্রিল দুটি জাহাজ দুটি সংকেত পায়, যেগুলো নিখোঁজ বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে আসতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকায় তল্লাশি অভিযান নতুন মোড় নেয়৷ অভিযানে থাকা জাহাজ ‘ওশেন শিল্ড' এ পর্যন্ত চারটি সংকত ধরতে পেরেছে, যার মাধ্যমে অনুসন্ধানের এলাকা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছ৷
হসটন জানান, ব্ল্যাক বক্স থেকে শেষবার সংকেত পাওয়ার পর ছয়দিন পেরিয়ে গেছে৷ এরপর আর কোনো সাড়া মেলেনি৷ ব্ল্যাক বক্স সাধারণত ৩০ দিন পর্যন্ত সচল থাকে, ফলে এখন সাগর তলে অনুসন্ধান চালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই৷
১৬.২ মিটার দীর্ঘ ব্লুফিন-২১ পানির নিচে ৪ হাজার ৫০০ মিটার নিচ পর্যন্ত নামতে পারে৷ এজন্য সময় লাগে দুই ঘণ্টা৷ আর একবার নেমে কাজ শেষ করতে ২৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগে৷ এই ডুবোজাহাজের ‘সাইড স্ক্যানিং সোনার' থেকে শব্দ তরঙ্গ পাঠিয়ে সাগরের তলদেশে নিখোঁজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খোঁজা হবে৷ প্রাথমিকভাবে নজর দেয়া হবে ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়৷ অবশ্য হসটন বরাবরই বলে আসছেন, সাগরতলে কিছু খুঁজে পাওয়া যাবেই, এমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়৷
গত ৮ মার্চ ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে চীনের বেইজিংয়ে যাওয়ার পথে ‘উধাও' হয়ে যায় মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি৷ এরপর বিমানটির কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি, ছিনতাই হওয়ারও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য মেলেনি৷ আরোহীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি গত ৩৮ দিনেও৷